প্রতীকী ছবি।
প্রস্তাবিত কমিটি তৈরি করে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছিল রাজ্য নেতৃত্বের কাছে। তবে এখনও সেই অনুমোদন মেলেনি। ফলে, বর্ধমান শহরে তৃণমূলের কমিটি নেই আপাতত। এই পরিস্থিতিতেই কি পুরভোটের লড়াইয়ে নামবে দল, জেলা পর্যবেক্ষক ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে বৈঠকে সেই প্রশ্ন উঠল বর্ধমানে।
সোমবার সন্ধ্যায় বর্ধমান ভবনে তৃণমূলের এই জেলার পর্যবেক্ষক তথা রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বৈঠক করেন। শাসক দল সূত্রে জানা যায়, দলের শহর সভাপতি অরূপ দাস বৈঠকে জানান, গত তিন বছরে দু’বার শহরের সব স্তরের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে কমিটি তৈরি করে রাজ্য নেতৃত্বের কাছে জমা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তা এখনও অনুমোদন হয়নি। এই প্রসঙ্গ ওঠার পরেই দলের নেতাদের একাংশ জানান, গত বিধানসভা ভোটে বর্ধমান শহরে দল ভাল ফল করলেও লোকসভা ভোটে তা ধরে রাখা যায়নি। কমিটি না থাকায় এই ফলের কারণ নিয়ে পর্যালোচনাও হয়নি বলে দাবি করেন তাঁরা।
তৃণমূলের এক প্রবীণ নেতা জানান, বর্ধমান শহর লাগোয়া অন্য বিধানসভা এলাকাগুলিতে ২০১৬-র বিধানসভা ভোটের তুলনায় গত বছর লোকসভা ভোটে তাঁদের ফল ভাল হয়েছে। কিন্তু বর্ধমান শহরে ঘটেছে উল্টো ঘটনা। ২০১৬ সালে যেখানে প্রায় ২৯ হাজার ভোটে জিতেছিল দল, সেখানে লোকসভা ভোটে দল এগিয়ে থেকেছে মাত্র বারোশোর কাছাকাছি ভোটে। শহরের বিদায়ী তৃণমূল কাউন্সিলরদের একাংশের দাবি, লোকসভা ভোটের আগে শহরের নেতাদের নিয়ে বৈঠক ডাকা হয়েছিল জেলা পরিষদের ‘অঙ্গীকার’ হলে। কিন্তু গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে গোলমালের আশঙ্কায় শেষ মুহূর্তে তা বাতিল করা হয়। কোনও নির্বাচনী কমিটি গড়া হয়নি দলের। তার প্রভাব ভোটে পড়েছে বলে অভিযোগ ওই কাউন্সিলরদের।
তৃণমূল সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালে বিধানসভা ভোটের আগে কালীঘাটে এক বৈঠকে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব অরূপ দাসের হাতে বর্ধমান শহরের দায়িত্ব তুলে দেন। পরে ৫৮ জনের একটি কমিটির প্রস্তাব রাজ্য নেতৃত্বের কাছে জমা দেন অরূপবাবু। তা অনুমোদন না পাওয়ায় লোকসভা ভোটের পরে, ফের কমিটি তৈরি করে জমা দেন তিনি। সেটিও এখনও অনুমোদন পায়নি। তাতে শহরে দলীয় কর্মসূচি পালনে সমস্যা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। দল সূত্রের খবর, বৈঠকে অনেক নেতা দাবি করেন, এক দিনে একই বিষয় নিয়ে দলের আলাদা মিছিল হচ্ছে। তাতে দলের ভাবমূর্তি খারাপ হচ্ছে। বিভিন্ন ওয়ার্ডে ‘উপ-দল’ মাথাচাড়া দিচ্ছে। আবার লোকসভা ভোটের পরে, শহরের অনেক নেতা নিষ্ক্রিয় হয়ে গিয়েছেন বলেও দাবি করা হয়।
তৃণমূল সূত্রে জানা যায়, শহরের ন’জন নেতানেত্রীর বক্তব্য শোনার পরে পর্যবেক্ষক ফিরহাদ হাকিম অরূপবাবুকে তিন দিনের মধ্যে জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথ ও বিধায়ক রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলে ফের কমিটি জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। সেই সঙ্গে বৈঠকে তিনি নির্দেশ দেন, শহর সভাপতি ও বিধায়কের অনুমতি ছাড়া, কোনও সভা-মিছিল করা যাবে না। পুরভোট না হওয়া পর্যন্ত বিদায়ী কাউন্সিলরেরাই এলাকার দায়িত্বে থাকবেন। তবে বিভিন্ন ওয়ার্ডের সমন্বয়ের জন্য ওই দু’জন ছাড়াও তৃণমূল নেতা খোকন দাসকে দায়িত্ব দেন ফিরহাদ। তৃণমূল সূত্রের খবর, জেলা সভাপতি স্বপনবাবুকে শহর লাগোয়া এলাকার এক সংখ্যালঘু নেতাকে জেলা সহ-সভাপতি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বৈঠক শেষে ফিরহাদ হাকিম অবশ্য বলেন, ‘‘বর্ধমানে আমাদের সংগঠন সক্রিয় ভাবে কাজ করছে। কাউন্সিলরদের কিছু সমস্যা আছে, সে নিয়ে আলোচনা হয়েছে। মানুষ উন্নয়ন দেখে ভোট দেন, দিল্লিতে তা প্রমাণিত। বর্ধমানেও আমরা উন্নয়নে ভর করেই সব আসনে জিতব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy