Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
পুলিশ নিগ্রহে ধৃত এসএফআইয়ের তিন

রাস্তা আটকে, কার্ড কেড়ে বাধার নালিশ কলেজে

সংঘর্ষ বেধেছিল মনোনয়ন তোলা নিয়ে। টিএমসিপি কলেজে যেতে বাধা দিয়েছে তাদের প্রার্থীদের, এই অভিযোগে রাস্তা অবরোধ করেছিলেন এসএফআই কর্মী-সমর্থকেরা। অবরোধ তুলতে যাওয়া পুলিশকর্মীদের নিগ্রহের অভিযোগে অন্ডালের খান্দরায় গ্রেফতার করা হল এসএফআইয়ের জেলা সভাপতি সুব্রত সিদ্ধান্ত-সহ তিন জনকে। তাঁদের বিরুদ্ধে জামিন-অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ।

খান্দরা কলেজে পুলিশ। শুক্রবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

খান্দরা কলেজে পুলিশ। শুক্রবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:৩৮
Share: Save:

সংঘর্ষ বেধেছিল মনোনয়ন তোলা নিয়ে। টিএমসিপি কলেজে যেতে বাধা দিয়েছে তাদের প্রার্থীদের, এই অভিযোগে রাস্তা অবরোধ করেছিলেন এসএফআই কর্মী-সমর্থকেরা। অবরোধ তুলতে যাওয়া পুলিশকর্মীদের নিগ্রহের অভিযোগে অন্ডালের খান্দরায় গ্রেফতার করা হল এসএফআইয়ের জেলা সভাপতি সুব্রত সিদ্ধান্ত-সহ তিন জনকে। তাঁদের বিরুদ্ধে জামিন-অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ।

শুধু খান্দরা কলেজ নয়, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছাত্র সংসদ দখল করতে শাসকদলের ছাত্র সংগঠন শুক্রবার জেলা জুড়ে বিরোধীদের মনোনয়ন তুলতে বাধা দেয় বলে অভিযোগ। কোথাও এবিভিপি প্রার্থীদের রাস্তা থেকে ফিরিয়ে দেওয়া, কোথাও এসএফআইয়ের ছাত্রদের মারধর নানা ঘটনায় নাম জড়াল টিএমসিপির। তাদের যদিও দাবি, মনোনয়ন তোলার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে সুষ্ঠু ভাবেই।

দুর্গাপুর মহকুমায় মোট ৬টি কলেজ রয়েছে। তার মধ্যে দুর্গাপুর মহিলা কলেজ এবং পাণ্ডবেশ্বর কলেজে টিএমসিপি কর্মী-সমর্থকেরা ছাড়া অন্য কোনও সংগঠনের কাউকে দেখা যায়নি। এই দুই কলেজে কোনও অশান্তির খবর নেই। কিন্তু খান্দরা কলেজে এসএফআইয়ের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে টিএমসিপির। মানকর ও দুর্গাপুরের কয়েকটি কলেজেও গোলমাল বাধে।

মনোনয়ন তুলতে ভিড় দুর্গাপুরের কলেজে।

এসএফআইয়ের জেলা সভাপতি সুব্রত সিদ্ধান্ত দুপুরে অভিযোগ করেন, এ দিন খান্দরা কলেজে ঢোকার বেশ কিছুটা আগে তাঁদের উপরে চড়াও হয় টিএমসিপি কর্মীরা। তাতে তাঁদের এক প্রতিবন্ধী ছাত্রী শ্যামা সহিস-সহ ৮ জন কর্মী জখম হন। প্রতিবাদে এসএফআই রাস্তা অবরোধ করে। অবরোধ তুলতে গিয়ে পুলিশ লাঠি চালায় বলে এসএফআইয়ের অভিযোগ। পুলিশ অবশ্য জানায়, লাঠি উঁচিয়ে অবরোধ সরিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা হয়েছে, লাঠি চালানো হয়নি। সেই সময়ে সুব্রতবাবু এবং আশিস ধীবর ও প্রসেনজিৎ মুখোপাধ্যায় নামে আরও দুই এসএফআই কর্মী দুই পুলিশকর্মীকে নিগ্রহ করেন বলে পুলিশের অভিযোগ। তাঁদের প্রথমে আটক, পরে গ্রেফতার করা হয়।

পুলিশ জানায়, ধৃতদের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মীদের কাজে বাধা ও সরকারি সম্পত্তি নষ্টের মামলা রুজু করা হয়েছে। এসএফআই কর্মীরা তাদের মারধর করেছে বলে পুলিশে একটি অভিযোগ করেছে টিএমসিপি-ও। এসএফআইয়ের রাজ্য কমিটির সদস্য সৌমেন কিস্কুর দাবি, “মনোনয়ন জমা দিতে দেওয়া তো হলই না, উল্টে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে এলাকায় গেলে সুব্রতকে শাসকদলের প্ররোচনায় গ্রেফতার করল পুলিশ। আগামী সপ্তাহে ওঁর পরীক্ষা রয়েছে। এ ভাবে ফাঁসিয়ে দেওয়ায় ওঁর যথেষ্ট ক্ষতি হবে।” খান্দরা কলেজের অধ্যক্ষ সঞ্জীব হাজরা বলেন, “কলেজের ভিতর কোনও গণ্ডগোল হয়নি। পড়ুয়ারা নির্বিঘ্নে ৯১টি মনোনয়নপত্র তুলেছে।”

দুর্গাপুরের মাইকেল মধুসূদন মেমোরিয়াল কলেজে টিএমসিপি কর্মীদের সঙ্গে এবিভিপি কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে বচসা হয়। এবিভিপি কর্মী রবীন চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, মনোনয়ন তোলা আটকাতে তাঁদের কলেজের পরিচয়পত্র কেড়ে নেওয়া হয়। মানকর কলেজেও টিএমসিপির বিরুদ্ধে মনোনয়ন তুলতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ এনেছে এবিভিপি। টিএমসিপির পক্ষে তন্ময় ঘোষ অবশ্য দাবি করেন, এই কলেজে এবিভিপির কাজকর্ম পরিচালনা করেন কলেজের কিছু প্রাক্তন ছাত্র। বর্তমান ছাত্রদের কেউ এবিভিপির প্রার্থী হতে রাজি হননি বলে দাবি তাঁর। দুর্গাপুরের সরকারি কলেজেও টিএমসিপি এবং এবিভিপির মধ্যে বচসা হয়। স্লোগান দিতে দিতে দু’পক্ষই পরস্পরের দিকে এগোয়। কলেজের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক অচিন্ত্যকুমার পাল নিজে হাতমাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে দু’পক্ষকে সরে যাওয়ার আর্জি জানান। তিনি জানান, একমাত্র বৈধ কাগজপত্র থাকলে তবেই সেই পড়ুয়াকে মনোনয়ন তুলতে দেওয়া হয়েছে।

দুর্গাপুরের নানা কলেজে আবার টিএমসিপি আসন সংখ্যার দ্বিগুণেরও বেশি মনোনয়নপত্র তোলায় চিন্তার ভাঁজ শাসকদলের নেতাদের কপালে। তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, দলের নেতারা কলেজের সামনে হাজির থাকলেও নির্দেশ উপেক্ষা করে টিএমসিপির হয়ে অনেকেই মনোনয়ন তুলেছেন। আজ, শনিবার মনোনয়ন জমা দেওয়ার দিন। তৃণমূল নেতৃত্ব তার আগেই আসন পিছু একজন প্রার্থী নির্দিষ্ট করতে চাইছেন। সন্ধ্যায় ভিড়িঙ্গির দলীয় কার্যালয়ে নঈমনগর ও মসজিদমহল্লা এলাকার দু’দল টিএমসিপি কর্মী-সমর্থকদের ডেকে তা নিশ্চিত করতে উদ্যোগী হন দলের জেলা (শিল্পাঞ্চল) সভাপতি অপূর্ব মুখোপাধ্যায়। তখন এক পক্ষ অন্যের দিকে দলের অফিসের সামনেই বোমা ছোড়ে বলে অভিযোগ। পরে পুলিশ গিয়ে দু’পক্ষকে সরিয়ে দেয়। দলের জেলা (শিল্পাঞ্চল) সভাপতি অপূর্ববাবু অবশ্য বলেন, “ভিড়িঙ্গির দলীয় অফিস থেকে অন্তত দু’শো মিটার দূরে একটি গলিতে পটকা ফেটেছে বলে শুনেছি। কী হয়েছে বিশদ জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখব।” তবে টিএমসিপি নেতা কৌশিক মণ্ডল দাবি করেন, “কলেজ ভোট নিয়ে একটি বৈঠক ছিল। সেখানে আমাদের কর্মীরা আসার সময়ে বিজেপি বোমা ছুড়েছে।” বিজেপি-র জেলা (শিল্পাঞ্চল) সহ-সভাপতি লক্ষণ দাস বলেন, “অর্ন্তদ্বন্দ্বে মারপিট করে আমাদের ঘাড়ে দোষ চাপানোর চেষ্টা করছে ওরা।”

টিএমসিপি-র বিরুদ্ধে এবিভিপি-কে মনোনয়ন তুলতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কালনা কলেজেও। টিএমসিপি-র সন্ত্রাসে তারা জেলার মোট পাঁচটি কলেজে প্রার্থী দিতে পারেনি বলে দাবি করেছে এসএফআই। কালনা, কাটোয়া, চন্দ্রপুর, খান্দর, পাণ্ডবেশ্বর, মানকর এবং আসানসোলের বিবি কলেজ ও বিসি কলেজে তোলার দিন ছিল। এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক দীপঙ্কর দে জানান, মানকর ও চন্দ্রপুর বাদে সব কলেজেই মনোনয়ন তোলার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু একমাত্র কাটোয়া কলেজের ২৯টি আসন ছাড়া আর কোথাও মনোনয়ন তোলা সম্ভব হয়নি বলে অভিযোগ এসএফআইয়ের। যদিও টিএমসিপি-র রাজ্য সভাপতি অশোক রুদ্রর দাবি, “নিজেদের অস্তিত্ব জাহির করতে এসএফআই এখন মিথ্যে অভিযোগ করছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

sfi khandora college tmcp
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE