Advertisement
০৫ মে ২০২৪

বালিতে পুরনো বাড়ি ভেঙে জখম চার ব্যক্তি

শেষ পর্যন্ত তাঁদের উদ্ধার করে দমকল ও স্থানীয় বাসিন্দারা।

ভেঙে পড়া বাড়ি থেকে বার করে আনা হচ্ছে বৃদ্ধকে। শুক্রবার। —নিজস্ব চিত্র।

ভেঙে পড়া বাড়ি থেকে বার করে আনা হচ্ছে বৃদ্ধকে। শুক্রবার। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০১৮ ০০:৫০
Share: Save:

প্রবল বৃষ্টির মধ্যেই হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল একটি জরাজীর্ণ দোতলা বাড়ি। শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ ঘটনাটি ঘটে বালির দেওয়ান গাজি রোডে। এই ঘটনায় কেউ মারা না গেলেও বাড়ির চার জন বাসিন্দা ধ্বংসস্তূপের মধ্যে আটকে পড়েন। অল্পবিস্তর জখমও হন। শেষ পর্যন্ত তাঁদের উদ্ধার করে দমকল ও স্থানীয় বাসিন্দারা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, হাওড়া পুরসভার ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডে, বালির দেওয়ান গাজি রোডের ১২২/১ নম্বর দোতলা বাড়িটি প্রায় ২৫০ বছরের পুরনো। দীর্ঘদিন সংস্কারের কাজ না হওয়ায় গোটা বাড়িটারই জরাজীর্ণ অবস্থা। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, শরিকি বিবাদের কারণেই বাড়িটির সংস্কারের কাজ হয়নি। ওই বাড়িতে থাকেন চার অবিবাহিত ভাইবোন। দোতলায় থাকেন কল্পনা মুখোপাধ্যায় (৭০)। নীচের তলায় থাকেন তাঁর বোন অঞ্জলি মুখোপাধ্যায় (৬০), ভাই নিতাই মুখোপাধ্যায় (৬৫) ও দেবব্রত মুখোপাধ্যায় (৫৮)। এ দিন যখন দোতলার ছাদ ও বারান্দা-সহ গোটা বাড়িটাই প্রায় হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে, তখন দোতলার ঘরে ছিলেন কল্পনাদেবী। নীচের তলায় ছিলেন বাকিরা।

কল্পনাদেবীর এক প্রতিবেশী জানান, তুমুল বৃষ্টির মধ্যেই তাঁরা বেশ জোরে কিছু ভেঙে পড়ার শব্দ শুনতে পান। তাড়াতাড়ি বাইরে বেরিয়ে তাঁরা দেখেন, কল্পনাদেবীদের বাড়িটি ভেঙে পড়েছে। কল্পনাদেবীরা যে ওয়ার্ডে থাকেন, অর্থাৎ, ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডের পাশের ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রাণকৃষ্ণ মজুমদার খুবই কাছেই থাকেন। তিনি এলাকার বাসিন্দাদের নিয়ে ঘটনাস্থলে চলে আসেন। প্রাণকৃষ্ণবাবু বলেন, ‘‘একে তুমুল বৃষ্টি, তার উপরে ওই ভেঙে পড়া বাড়িটির আলো চলে যায়। ফলে কে কোথায় আটকে পড়েছেন, কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। শুধু একতলা ও দোতলা থেকে আর্ত চিৎকার শুনতে পাচ্ছিলাম।’’

অন্ধকারের মধ্যেই উদ্ধারকাজে নামেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের এক জন জানান, একতলায় নিতাইবাবুরা সবাই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আটকে পড়েছিলেন। ঘুটঘুটে অন্ধকার থাকায় কিছুই বোঝা যাচ্ছিল না। প্রায় আধ ঘণ্টার চেষ্টায় একতলা থেকে‌ নিতাইবাবু, দেবব্রতবাবু ও অঞ্জলিদেবীকে উদ্ধার করেন স্থানীয়রা। কিন্তু তখনও কল্পনাদেবী দোতলায় আটকে রয়েছেন। এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘‘ওঁর আর্ত চিৎকার শুনতে পাচ্ছিলাম। যদি বাড়ির অবশিষ্ট অংশ ভেঙে পড়ে, তা হলে কী হবে, তা ভেবেই আমরা দোতলায় উঠতে ভয় পাচ্ছিলাম।’’ শেষ পর্যন্ত দোতলায় ওঠার জন্য একতলায় মই লাগান তাঁরা। কিন্তু উঠতে গিয়ে মইটিও হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে। মই ভেঙে পড়ায় উদ্ধারকারী কয়েক জন জখম হন।

ইতিমধ্যে অবশ্য দমকলের দু’টি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে চলে আসে। এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘‘দমকলের সঙ্গে বড় আলো থাকায় উদ্ধারকাজে সুবিধা হয়। দোতলায় উঠে আমরা কল্পনাদেবীকে কোনও রকমে উদ্ধার করে নীচে নিয়ে আসি।’’ স্থানীয়েরা জানান, উদ্ধার করার পরে কল্পনাদেবী প্রথম দিকে কথা বলার মতো অবস্থা ছিলেন না। থরথর করে কাঁপছিলেন ওই বৃদ্ধা। চার ভাইবোনকেই রাখা হয় স্থানীয় একটি ক্লাবে। সেখানে চিকিৎসকদের নিয়ে আসা হয়। উদ্ধারকাজের সময়ে চার ভাইবোনই অল্পবিস্তর জখম হন। পরে কল্পনাদেবী বলেন, ‘‘তখন দোতলায় টুকটাক কাজ করছিলাম। হঠাৎ করে মনে হল, যেন ভূমিকম্প হচ্ছে। আমার আশপাশের দেওয়াল, মেঝে সব ভেঙে পড়ছে। কী করে যে বেঁচে গেলাম, সেটাই আশ্চর্যের। মনে হচ্ছে যেন পুনর্জন্ম হল।’’ অন্য দিকে, কাউন্সিলর প্রাণকৃষ্ণবাবু বলেন, ‘‘সবাই যে বেঁচে গিয়েছেন, এটাই সব থেকে বড় কথা। দমকলের সঙ্গে ও স্থানীয় লোকেরাও উদ্ধারকাজে হাত লাগানোয় ওঁদের দ্রুত বার করে আনা সম্ভব হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bali Old house বালি
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE