Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত শিশু কোলে মায়ের আর্তি

স্থানীয়দের কথায়, ‘‘মুখে কিছু বলতে না পারলেও মা হনুমানটি বাচ্চাটিকে কোলে নিয়ে যে ভাবে লাফালাফি করছিল, তা দেখে মনের কষ্টটা বোঝা ঝাচ্ছিল।’’ এ দিন ওই মায়ের সঙ্গে যোগ দিয়েছিল আরও হনুর দল।

সন্তানহারা: মৃত সন্তানকে ছাদে রেখে কার্নিসে বসে মা হনুমানটি। রবিবার, বালির দুর্গাপুরে। নিজস্ব চিত্র

সন্তানহারা: মৃত সন্তানকে ছাদে রেখে কার্নিসে বসে মা হনুমানটি। রবিবার, বালির দুর্গাপুরে। নিজস্ব চিত্র

শান্তনু ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:০৮
Share: Save:

মায়ের কোলে চেপেই লম্ফঝম্ফ করছিল বাচ্চাটি। আচমকাই ঘটল বিপত্তি। কোনও ভাবে মায়ের কোল থেকে ছিটকে বাতিস্তম্ভের তার ছুঁয়ে যায় বাচ্চাটির শরীর। মুহূর্তেই নিথর হয়ে গেলেও মা মানতে চায়নি সন্তানের মৃত্যু। তাকে বাঁচাতে শিশুটিকে কোলে নিয়ে রীতিমতো ‘তাণ্ডব’ চালাল মা!

ঘটনাটি ঘটেছে রবিবার সকালে বালির দুর্গাপুর এলাকায়। কয়েক ঘণ্টা ধরে স্থানীয়েরা দেখলেন, সন্তানকে বাঁচাতে মা হনুমানের করুণ আর্তি। স্থানীয়দের কথায়, ‘‘মুখে কিছু বলতে না পারলেও মা হনুমানটি বাচ্চাটিকে কোলে নিয়ে যে ভাবে লাফালাফি করছিল, তা দেখে মনের কষ্টটা বোঝা ঝাচ্ছিল।’’ এ দিন ওই মায়ের সঙ্গে যোগ দিয়েছিল আরও হনুর দল।

স্থানীয়েরা জানান, বালির ওই এলাকায় গাছগাছালি ঘেরা অনেকটা এলাকা রয়েছে। প্রতিদিনই সেখানে দাপিয়ে বেড়ায় হনুমানের দল। মাঝেমধ্যেই তারা মূল রাস্তায় বেরিয়ে এসে আশাপাশের কার্নিসে-ছাদে দাপিয়ে বেড়ায়। তেমনই এ দিন সকালে এক দল হনুমানের সঙ্গে দুর্গাপুর এলাকায় বেরিয়ে ছিল মা ও শাবক। মাকে জড়িয়ে ধরেই গাছ থেকে বাড়ির ছাদ, বাতিস্তম্ভে লম্ফঝম্ফ করছিল ওই হনুর দল। স্থানীয় একটি অনুষ্ঠান বাড়ির সামনের বাতিস্তম্ভে উঠতে গিয়েই ঘটে যায় বিপত্তি। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে শাবকটি রাস্তায় ছিটকে পড়ে। তা দেখেই রাস্তায় ঝাঁপ মারে মা হনুমান। নিথর হয়ে যাওয়া সন্তানকে সঙ্গে সঙ্গে কোলে তুলে বিভিন্ন দোকানে ঢুকে পড়ে সে। কাতর চোখে এ দিক-ও দিক তাকাতে থাকে।

দোকানদারেরা জানান, কেউ জল দিতে এগিয়ে গেলেও তেড়ে আসছিল মা হনুমান। এক স্টুডিয়ো মালিক রবীন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওকে দেখে মায়া হচ্ছিল খুবই। কিছু করতে গেলেই তো মা হনুমান দাঁত-মুখ খিঁচিয়ে তাড়া করছিল সবাইকে।’’ মৃত সন্তানকে কোলে নিয়েই দোকান থেকে বাড়ির উঠোনে ঘুরে বেড়াচ্ছিল মা হনুমানটি। একে একে গোটা এলাকা ঘিরে ফেলে সাত-আটটি হনুমান। আতঙ্কে বাড়ির দরজা-জানলা এবং দোকান বন্ধ করে দেন অনেকেই। শেষে সন্তানকে নিয়ে লাফিয়ে এক বাড়ির ছাদে চলে যায় মা হনুমান।

সেই বাড়ির বাসিন্দা প্রসেনজিৎ ঘোষ বলেন, ‘‘ঘর থেকে শুনেছিলাম হনুমানের কথা। আচমকাই ছাদে ধুপধাপ আওয়াজ শুনে গিয়ে দেখি, ওরা আমাদের ছাদেই এসেছে।’’ প্রসেনজিৎ জানান, মৃত শাবকটিকে ছাদে শুইয়ে কিছু দূরে কার্নিসে মাথায় হাত দিয়ে বসে ছিল মা। কখনও আবার উদভ্রান্তের মতো আচরণ করে টব তুলে আছড়ে ভেঙেছে। ওই যুবকের বাড়ি ঘিরে তখন বসে বাকি হনুমানেরা। প্রসেজিতের মা কমলাদেবী বলেন, ‘‘বাড়ির সদর দরজা খুলতেই দাঁত-মুখ খিঁচিয়ে তাড়া করছিল।’’ প্রায় ঘণ্টা তিনেক এমন চলার পরে স্থানীয়েরা নিশ্চিন্দা থানায় খবর দেন। সেখান থেকে জানানো হয় বন দফতরকে।

তবে বন দফতর আসার আগেই দুপুরে ফের মৃত সন্তানকে কোলে তুলে ছাদ থেকে জঙ্গলে লাফ মেরে মিলিয়ে যায় মা হনুমান। তার শোকের সঙ্গী তখন হনুর দল। স্বস্তি ফেরে গোটা পাড়ায়। তবে সকলে বলতে থাকেন, ‘‘মায়ের মন কী এত সহজে সন্তানের মৃত্যু মানতে পারে!’’ জঙ্গলে ফিরে এ বার হয়তো বাঁচার অন্য কোনও চেষ্টা!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Monkey Death Electrocution
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE