আত্মসমর্পণের পর। —ফাইল চিত্র।
গতবার তিনি রেকর্ড ভোটে জিতেছিলেন। এ বারও বিক্রম দেখিয়েই জিতলেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর থেকে আড়াই হাজারেরও বেশি ব্যবধানে। যদিও ভোটগ্রহণ বা গণনা, ভাগ্য পরীক্ষার দু’টি দিনই এলাকায় গরহাজির তিনি। কেননা, ফাঁড়ি ভাঙচুর এবং পুলিশ পেটানোর অভিযোগে চাঁপদানির তৃণমূল নেতা বিক্রম গুপ্ত এখন জেলহাজতে।
গারদের ভিতরে থেকে ভোটে লড়ছেন প্রার্থী। বিহার বা উত্তরপ্রদেশের মতো হিন্দি বলয়ের মানুষের এমন অভিজ্ঞতা নতুন নয়। তবে এ বঙ্গে এমন উদাহরণ দুর্লভ। এ ক্ষেত্রেও নির্দল কাঁটাই তৃণমূলের এই কাউন্সিলারকে পরোক্ষে জেল হাজতে পৌঁছে দিয়েছে, এমনটাই অভিযোগ বিক্রম-ঘনিষ্ঠদের।
নির্বাচনের আগে জিটি রোডে পুলিশের মোটরবাইক চেকিং করা নিয়ে ধুন্ধুমার বাধে চাঁপদানিতে। উন্মত্ত জনতার ইটের ঘাটে ভদ্রেশ্বর থানার ওসি-সহ বেশ কয়েক জন পুলিশকর্মী জখম হন। ওই ফাঁড়িতে যথেচ্ছ ভাঙচুর চলে। অভিযোগ, পুলিশের পাল্টা লাঠি পড়ে চাঁপদানির ৩ নম্বর ওয়ার্ডে শাসক দলের প্রার্থী বিক্রমের পিঠে। পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট মামলা রুজু করে। যদিও প্রথমে শাসক দলের এই নেতাকে পুলিশ গ্রেফতার না করায় চাপানউতোর শুরু হয়। বিক্রম দলকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, তিনি গোলমাল করেননি। বরং গোলমাল থামাতে গিয়ে পুলিশের হাতে মার খেয়েছেন। শেষ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করে। বিক্রমকে অবিলম্বে গ্রেফতার করার নির্দেশ দেয়। এর পরেই পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে। আদালত তাঁকে জেল হাজতে পাঠায়।
তৃণমূল নেতাদের সাফাই, তাঁরা বরাবরই আইন মেনে চলার পক্ষে। তাই কমিশনের নির্দেশ পেয়ে বিক্রমকে আত্মসমর্পণের জন্য বলা হয়। তবে গ্রেফতার হলেও মানুষ যে বিক্রমের পাশ থেকে সরেনি, ভোটের ফলেই মিলল প্রমাণ।
পুর নির্বাচনের আগে যেমন চাঁপদানির ঘটনায় রাজ্য জুড়ে হইচই শুরু গিয়েছিল, একই ভাবে শাসকদলের আশ্রিত দুষ্কৃতীদের গুলি চালনার অভিযোগকে কেন্দ্র করে বাঁশবেড়িয়ার গ্যাঞ্জেস হিন্দি হাইস্কুলের বাইরে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায়। দু’বারের কাউন্সিলার ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রণব ঘোষ এবং বিজেপি প্রার্থী দুধনাথ ঠাকুর একযোগে সেখানে পুনর্নির্বাচনের দাবি তোলেন। ওই দাবিতে বামেরা রাস্তা অবরোধ করে। পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে যেতে হয় পুলিশ সুপারকে। পুরো বিষয়টির তদন্তে নির্বাচন কমিশনের তরফে এক ম্যাজিস্ট্রেট সরেজমিনে তদন্তে যান। যদিও শেষমেশ বামেদের পুনর্নির্বাচনের দাবি কমিশন মানেনি।
সে দিন ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে পেশায় চিকিৎসক প্রণববাবু খেদোক্তি করেছিলেন, “মাত্র এক ঘণ্টা আমাকে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ভোট করতে দেওয়া হয়েছে। আরও কিছু সময় পেলে আমাকে কেউ ঠেকাতে পারত না।” কিন্তু মঙ্গলবার ভোট গণনা যত এগিয়েছে, ওই বাম প্রার্থীর জয় ততই নিশ্চিত হয়েছে। এখন শাসক দলের জেলা সভাপতি তথা স্থানীয় বিধায়ক তপন দাশগুপ্ত প্রশ্ন তুলছেন, “আমরা যদি ভোট লুঠই করলাম, তা হলে বাম প্রার্থী জিতলেন কি করে?”
কি বলছে বামফ্রন্ট?
জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক সুদর্শন রায়চৌধুরীর প্রতিক্রিয়া, “এটা আমাদের প্রতিরোধের জয়।”
একই ভাবে নির্বাচনে চন্দননগর পুরসভার খলিসানি সুভাষপল্লিতে শাসক দলের প্রার্থী নীলেশ পাণ্ডের দলবলের বিরুদ্ধে শূন্যে গুলি চালিয়ে ভোট লুঠের চেষ্টার অভিযোগ ওঠে। এই নিয়ে খলিসানি-২ নম্বর জিএসএফপি স্কুলে তুমুল গোলমাল হয়। বাম প্রার্থী জগন্নাথ সমাদ্দার অভিযোগ তোলেন, তাঁকে হারানোর জন্যই শাসক দল ছক কষেছে। যদিও এ দিন ভোটের বাক্সে দেখা গিয়েছে অন্য ছবি। ওই ওয়ার্ডে জয় হয়েছে সিপিএম প্রার্থীর। সিপিএম এই ফলকে ‘প্রতিরোধের জয়’ হিসেবে চিহ্নিত করলেও জেলা তৃণমূলের এক শীর্ষনেতার প্রশ্ন, “এই দুই ওয়ার্ডে বিরোধীদের জয় কি গণতন্ত্রের জয়ধ্বজাই তুলে ধরে না?”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy