নদ-নদী এবং খালে ঘেরা আরামবাগ মহকুমায় ঝুঁকির সেতুর সংখ্যা অনেক। তাদের বেশির ভাগেরই বয়স ৫০ বছরের উপর। শরীর স্বাস্থ্য কারও তেমন ভাল নয়। তবে মাঝেরহাট দুর্ঘটনার পর তড়িঘড়ি কাজ শুরু হয়েছে রামকৃষ্ণ সেতুতে। অন্য সেতুগুলির হাল খতিয়ে দেখতে শুরু করেছেন পূর্ত দফতরের কর্তারা।
মহকুমার সেতুগুলি সংস্কারের প্রস্তাব এক বছর আগে করা হয়েছিল বলে জানা গিয়েছে প্রশাসন সূত্রে। গত বছর জুন মাসে গুরুত্বপূর্ণ সেতু এবং কালভার্ট মিলিয়ে প্রায় ৯৭টিতে জরুরি সংস্কারের প্রয়োজন বলে জেলাশাসকের কাছে রিপোর্ট পাঠিয়েছিলেন মহকুমা পূর্ত দফতরের কর্তারা। কিন্তু তহবিলের অভাবে কাজ করা গিয়েছিল মাত্র ২৫টি সেতু এবং ৫টি কালভার্টে।
পূর্ত দফতর সূত্রে জানা যায়, বন্যাপ্লাবিত আরামবাগে নবীনতম সেতুটি মুণ্ডেশ্বরীর উপর, পুরশুড়ার দিগরুইঘাটে। এ ছাড়া প্রায় সমস্ত সেতু এবং কার্লভার্টের নির্মাণকাল ১৯৬৫ সাল থেকে ১৯৭৭ সালের মধ্যে।
জেলা প্রশাসনের নির্দেশে গত বৃহস্পতিবার থেকে মহকুমা পূর্ত দফতর খানাকুল, গোঘাট, আরামবাগ এবং পুরশুড়ার সেতুগুলির স্বাস্থ্য পরীক্ষা শুরু করেছেন। মহকুমা পূর্ত দফতরের (নির্মাণ-২) ইঞ্জিনিয়ার অচিন্ত্য দে বলেন, “বর্ষায় বালি পাওয়ার সমস্যা থাকবে। তবু খানাকুলের জগৎপুর থেকে ধরমপোতা রাস্তা এবং গড়েরঘাট পর্যন্ত মোট ১২টি সেতু সংস্কারের প্রাথমিক কাজ শুরু হচ্ছে। আরামবাগের মায়াপুরেও দু’টি সেতুর কাজ শুরু হয়েছে।”
এর আগে যে ২৫টি সেতু এবং পাঁচটি কালভার্টের কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে তা পূর্ত দফতরের নির্মাণ-২ বিভাগের অধীন। সেগুলি সবই পুরশুড়া থেকে খানাকুলের রাধানগর পর্যন্ত সামন্তরোডের মধ্যে মুণ্ডেশ্বরী এবং দামোদরের শাখার উপর।
কিন্তু পূর্ত নির্মাণ-১ বিভাগের অধীনে রয়েছে জেলার সবথেকে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ তিনটি সেতু। সূত্রের খবর, সেগুলির মধ্যে একমাত্র পুরশুড়া থেকে চাঁপাডাঙার মাঝে দামোদরের উপর বিদ্যাসাগর সেতুটির অবস্থা তুলনামূলক ভাবে ভাল। রামমোহন ও রামকৃষ্ণ সেতুর অবস্থা ভাল নয়।
জানা গিয়েছে, আরামবাগের হরিণখোলায় মুণ্ডেশ্বরীর উপর রামমোহন সেতুর পূর্ব দিক এবং আরামবাগের ৬ নম্বর ওয়ার্ড পল্লিশ্রীতে দ্বারকেশ্বরের উপর রামকৃষ্ণ সেতুর পুরোটাই বিপজ্জনক। তিনটি সেতুরই ‘এক্সপ্যানশন জয়েন্ট’ ফাঁক হয়ে গিয়েছে বলে পূর্ত দফতরই রিপোর্ট দিয়েছে। এছাড়াও অ্যাপ্রোচ স্ল্যাব বসে গিয়েছে।
অন্য সেতুগুলিরও এই ত্রুটি রয়েছে। তা ছাড়া কোথাও রেলিং ভাঙে, কোথায় বেড স্ল্যাব ভাঙে, কোথাও আবার মূল স্ল্যাব থেকে অ্যাপ্রোচ স্ল্যাব সরে গিয়েছে। এমন সব ত্রুটির কারণে এর আগে ছোটবড় নানা দুর্ঘটনাও ঘটেছে। এই সেতুগুলিই দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে কলকাতা বা তারকেশ্বর যোগাযোগের মূল মাধ্যম।
গত শুক্রবার থেকে রামকৃষ্ণ সেতুর উপর মালবাহী গাড়ি চলাচলের নিষেধাজ্ঞা জারি করে সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। মহকুমা পূর্ত দফতরের নির্মাণ-১ বিভাগের সহকারী বাস্তুকার নিরঞ্জন ভড় বলেন, “রামকৃষ্ণ সেতুর কাজ শুরু হয়েছে। বাকি দু’টি সেতু আপাতত নিরাপদ।’’ তিনি জানিয়েছেন, বাকি দু’টি সেতুর ক্ষেত্রে আরামবাগ থেকে তারকেশ্বর রাস্তাটি চার লেন করার প্রকল্প অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। সেই প্রকল্পেই নতুন সেতুর উল্লেখ রয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy