সিসিটিভি-র সেই ফুটেজ।
রাত তখন ২টো। নির্জন রাস্তায় তখন তেমন কোনও লোকজন নেই। আচমকাই ‘বাঁচাও বাঁচাও’ চিৎকার। সারা গায়ে দাউদাউ করে জ্বলছে আগুন। সে অবস্থায় পড়িমরি করে ছুটছিলেন এক যুবক। তা দেখে রাস্তায় থাকা কয়েক জন যুবক ভয়ে দৌড় লাগালেন। সিসিটিভি-র ফুটেজে এই দৃশ্য দেখে চমকে উঠেছিলেন থানায় কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরাও। তখনই ঘটনাস্থল চিহ্নিত করে সে দিকে রওনা দেন তাঁরা।
বুধবার ভয়ঙ্কর এই ঘটনা ঘটেছে হাওড়ার মালিপাঁচঘরা থানার ঘুসুড়ির জয়বিবি লেনে। অভিযোগ, পরিচিত এক ব্যক্তির থেকে পাওনা টাকা চাইতে আসার অপরাধে ওই যুবককে মারধর করে, গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। যদিও বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত অভিযুক্তের কোনও খোঁজ মেলেনি।
পুলিশ সূত্রের খবর, ইদ উপলক্ষে ওই রাতে পাড়া সাজাচ্ছিলেন কিছু যুবক। আচমকাই তাঁরা শোনেন ‘বাঁচাও বাঁচাও, আগ লগা দিয়া’, বলে কেউ চিৎকার করছেন। এর পরেই তাঁরা দেখেন, ছুটে আসছেন এক যুবক। সারা গায়ে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে। কিন্তু কে ওই যুবক, তা বুঝতে পারেননি কেউ। ভয়ে রাস্তায় থাকা যুবকেরা পালিয়ে গেলেও ‘আগুন-মানব’-এর পিছনে কম্বল নিয়ে ধাওয়া করেন স্থানীয় বাসিন্দা মহম্মদ সেলিম আখতার। কিছুটা যাওয়ার পরে তিনি ওই যুবকের গায়ে কম্বল জড়িয়ে দেন। ততক্ষণে পুলিশও খুঁজতে খুঁজতে ঘটনাস্থলে হাজির।
স্থানীয় বাসিন্দা বদ্রুরোজা আনসারি বলেন, ‘‘ওই যুবকের থেকেই জানতে পারি, তাঁর নাম সুকু সাউ। জয়বিবি লেনেই তাঁর মা থাকেন। তিনি সেখানেই ছুটে যাচ্ছিলেন। এর পরে ওঁর মাকে খবর পাঠাই।’’ প্রথমে ওই যুবককে জায়সবাল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও সেখানে বার্ন ইউনিট না থাকায় আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাওড়া জেলা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, সুকুর শরীরের উপরের অংশের প্রায় ৬০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই যুবককে জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রাথমিক ভাবে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, জয়বিবি লেনের বাসিন্দা মহেন্দ্র নামের এক যুবককে দেড় হাজার টাকা ধার দিয়েছিলেন লিলুয়ার ভট্টনগরের বাসিন্দা সুকু নামের ওই যুবক। তিনি পেশায় রাজমিস্ত্রীদের সহকারী। ওই দিন সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ লিলুয়া থেকে ঘুসুড়িতে পাওনা টাকা আদায় করতে এসেছিলেন সুকু। অভিযোগ, টাকা না দিয়ে উল্টে ওই যুবককে মারধর করে একটি ঘরে আটকে রাখে মহেন্দ্র। পরে গভীর রাতে বাইরে বার করে আনা হয় সুকুকে। মহেন্দ্রর কয়েক জন সঙ্গী তাঁকে চেপে ধরে রেখে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। এর পরে রাস্তা দিয়ে ছুটতে শুরু করেন ওই যুবক। ওই এলাকাতেই তাঁর মায়ের বাড়ি। তিনি সেখানেই যাচ্ছিলেন। এর মধ্যেই তাঁকে দেখতে পান মহম্মদ সেলিম আখতার। খবর পেয়ে ওই যুবকের মা-ও চলে আসেন। পুলিশও আসে ঘটনাস্থলে। বৃহস্পতিবার সকালে সুকুর দাদা পিয়ারীলাল বলেন, ‘‘ভাই শুধু মহেন্দ্র ও জয়বিবি লেনের নাম বলতে পেরেছে। তবে কিছু দিন ধরেই শুনছিলাম, ওই ব্যক্তি ভাইকে টাকা ফেরত দিচ্ছেন না। তবে তিনি কে, তা আমরা জানি না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy