Advertisement
১১ মে ২০২৪
যুক্ত সরকারি কর্মীদের চক্র, সন্দেহ বিধায়কের

ভরাট পুকুর উদ্ধারে অভিযান চুঁচুড়ায়

ওই দফতরের এক আধিকারিকের দাবি, অভিযোগ এলেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কর্মী কম থাকায় সব জায়গায় দ্রুত অভিযান চালানো সম্ভব হয় না। এ ক্ষেত্রে লোকসভা ভোটের জন্য কিছুটা দেরি হয়েছে। 

দখল: এই পুকুরই বোজানোর অভিযোগ। চলছে মাপজোক (নীচে)। ছবি: তাপস ঘোষ

দখল: এই পুকুরই বোজানোর অভিযোগ। চলছে মাপজোক (নীচে)। ছবি: তাপস ঘোষ

প্রকাশ পাল 
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০১৯ ০১:৪৬
Share: Save:

সাতসকালে ফিতে ফেলে মাপামাপি চলল। মাইকে এলাকাবাসীকে জড়ো হওয়ার আবেদন জানানো হল। বিধায়ক থেকে ভূমি দফতরের আধিকারিক, পুরপ্রধান, স্থানীয় কাউন্সিলর, পুলিশ— হাজির সকলেই।

হুগলির জেলা সদর চুঁচুড়া শহরের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের যুগিপাড়া লেনে পাশাপাশি ভরাট দু’টি পুকুর পুনরুদ্ধারে বৃহস্পতিবার থেকে অভিযানে নামল প্রশাসন। শহর জুড়ে পুকুর ভরাটে এক শ্রেণির সরকারি কর্মীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিলেন খোদ শাসক দলের বিধায়ক অসিত মজুমদার। তিনি বলেন, ‘‘একটা-দু’টো নয়, জমি হাঙরেরা ১৬টি পুকুর বুজিয়েছে। পুরসভার তরফে প্রতিটা ক্ষেত্রে ভূমি দফতরে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কাজ হয়নি। আমার মনে হয় ভূমি দফতরে একটা চক্র আছে, যাদের সাহায্যে এ সব হয়। বিষয়টি অতিরিক্ত জেলাশাসককে জানিয়েছি। প্রশাসনের দেখা উচিত।’’

বিধায়কের অভিযোগ নিয়ে অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) রাজর্ষি মিত্র মন্তব্য করেননি। তবে, ওই দফতরের এক আধিকারিকের দাবি, অভিযোগ এলেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কর্মী কম থাকায় সব জায়গায় দ্রুত অভিযান চালানো সম্ভব হয় না। এ ক্ষেত্রে লোকসভা ভোটের জন্য কিছুটা দেরি হয়েছে।

যুগিপাড়া লেনে পাশাপাশি দু’টি শরিকি পুকুর রয়েছে। বিধায়ক জানান, সম্প্রতি দলীয় কার্যালয়ে তাঁর বসানো অভিযোগ-বাক্সে ওই পুকুর ভরাটের অভিযোগ আসে। মঙ্গলবার সেখানে গিয়ে তিনি দেখেন, জলাশয়ের একাংশে পাঁচিল গাঁথার কাজ চলছে। ওই কাজ বন্ধ করে দেন। প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট দফতরে বিষয়টি জানান। এর পরেই প্রশাসন অভিযানে নামে। বিধায়কের কথায়, ‘‘এই পুকুর ভরাট রুখতে মাস ছয়েক আগে ভূমি দফতরে চিঠি দিয়েছিলাম। তার পরেও এতদিন কেন ভরাট বন্ধ হয়নি, জানি না। এখন এলাকাবাসীর অভিযোগ পেয়ে ফের প্রশাসনকে জানাই। পুকুরকে আগের অবস্থায় ফেরোনা হোক।’’

মাপজোকের পরে ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে বিএলএলআরও (চুঁচুড়া-মগরা) নিবেদিতা বসু বলেন, ‘‘কতটা অংশ ভরাট হয়েছে, তার হিসেব চলছে। হিসেব হলেই পুকুর-মালিকদের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হবে। ভরাট হওয়া অংশ সাত দিনের মধ্যে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার নোটিস দেওয়া হবে তাঁদের।’’

ওই দফতর সূত্রের খবর, দু’টি পুকুরেরই অনেকটা অংশ বুজিয়ে ফেলা হয়েছে। অভিযোগ পেয়ে একটি পুকুর ভরাট বন্ধ করতে মালিকদের নোটিস দেওয়া হয়েছিল বলে বিএলএলআরও জানান। গীতা অধিকারী এবং লক্ষ্মী অধিকারী নামে দুই মহিলার দাবি, তাঁরা পুকুরের অংশীদার। কিন্তু তাঁদের অন্ধকারে রেখে শরিকদের একাংশ এই কাজ করেছেন।

এই পুকুর ভরাটে স্থানীয় ঠিকাদার পান্নালাল সাধুখাঁ যুক্ত বলে অভিযোগ। তিনি বলেন, ‘‘ওই চৌহদ্দিতে কতটা জলাশয় রয়েছে, তা জানতে বিএলএলআরও দফতরে চিঠি দিয়েছিলাম। উত্তর না মেলায় কিছুটা অংশ জলাশয় রেখে বাকিটা ভরাট করা হয়েছে। কিছুটা অংশে পাঁচিল তুলে বড় চৌবাচ্চার মতো করা হয়েছে মাছ চাষের জন্য। চার ধারে ফুলগাছ বসানোর পরিকল্পনা ছিল।’’

স্থানীয় বাসিন্দাদের কেউ কেউ দাবি করেন, প্লট করে কিছু জমি বিক্রি করা হয়েছে। কিন্তু ভরাট নিয়ে ভয়ে তাঁরা অভিযোগ জানাতে পারেননি। এক প্রৌঢ়ের কথায়, ‘‘এই পুকুর বহু পুরনো। মাছ ছিল। লোকে স্নান করত। পুকুর ভরাট হলেও অভিযোগ জানানোর সাহস পাইনি। এখন তোড়জোড় দেখে ভাল লাগছে। পুকুর ফিরে আসুক।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Chinsurah Pond Raid
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE