বিপত্তি: এই সাঁকো ভেঙে দুর্ঘটনা। নিজস্ব চিত্র
পুজো আয়োজনের প্রথম বছরেই বিপত্তি। কিন্তু তাতে পুজো আটকাল না।
বোধনের দিনে খানাকুলের পূর্ব রাধানগর গ্রামে সাঁকো ভেঙে প্রতিমাসুদ্ধ খালে পড়ে জখম হলেন আট গ্রামবাসী। তবু রীতি মেনে সোমবার, মহাষষ্ঠীতে বোধন হল। হাসপাতাল থেকে জখমদের বার্তা এল, ‘‘পুজো না হলে কুসংস্কারকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে। আমরা তা হতে দেব না।”
খানাকুল-১ ব্লকের বালিপুর পঞ্চায়েত এলাকার ওই গ্রামটি ‘অতি বন্যাপ্রবণ’ বলে চিহ্নিত। গ্রামে এতদিন পুজো ছিল না। সেখানকার প্রায় ৩০০ পরিবার পুজো দেখতে যেতেন কয়েক কিলোমিটার দূরে বালিপুর, ছত্রশাল কিংবা হরিণাখালি খাল পেরিয়ে রাধানগরের পণ্ডিতপাড়ায়। এ বছর বন্যা না-হওয়ায় বৃদ্ধ জহরলাল দলুইয়ের নেতৃত্বে গ্রামবাসীরা দুর্গাপুজো করতে উদ্যোগী হন। প্রথম বছর পুজোর বাজেট ঠিক হয় ৫০ হাজার টাকা। প্রতিমা গড়তে দেওয়া হয় রাধানগর গ্রামের পণ্ডিতপাড়ায়।
সোমবার সকালে পণ্ডিতপাড়া থেকে প্রতিমা আনা হচ্ছিল গ্রামবাসী শম্ভুনাথ মালিকের ট্রলিতে। লক্ষ্মী, সরস্বতী, গণেশ, কার্তিক গ্রামে পৌঁছে গিয়েছিল আগেই। বেলা ১০টা নাগাদ দুর্গাপ্রতিমা আনা হচ্ছিল। আচমকাই আয়মা গ্রাম সংলগ্ন হরিণাখালির সাঁকো ভেঙে প্রতিমাসুদ্ধ সকলে পড়ে যান। খালে তখন হাঁটু জল। আহত হন উদয় দলুই, দিলীপ ঘোড়ুই, সোমনাথ দলুই, সনাতন আদক, ট্রলিচালক শম্ভুনাথ মালিক প্রমুখ পুজো উদ্যোক্তারা।
গ্রামটি হাওড়া জেলার কাছে হওয়ায় স্থানীয় মানুষই আহতদের উদ্ধার করে উদয়নারায়ণপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। আহতদের মধ্যে উদয়, দিলীপ-সহ পাঁচ জনকে সেখানে বর্তি করানো হয়। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা হয়। এই বিপর্যয়ে গ্রামবাসী যখন পুজোর সূচনা নিয়ে দোটানায়, তখন আহতেরাই জানিয়ে দেন পুরনো সাঁকো ভাঙার জন্য এই দুর্ঘটনায় পুজো যেন বন্ধ না হয়।
উদয় বলেন, ‘‘সাঁকো ভাঙার সঙ্গে পুজোর কোনও সম্পর্ক নেই। তা হলে পুজো বন্ধ করব কেন? তা হলে তো কুসংস্কারকে প্রশ্রয় দেওয়া হয়ে যাবে। আমরা তা হতে দেব না। উৎসবের আয়োজনে কোনও খামতি থাকবে না।’’ আহতদের বার্তা পেয়ে দেবীমূর্তির ভাঙা হাত, আঙুল ইত্যাদি জোড়া লাগিয়ে সংস্কারের কাজ শুরু হয়ে যায় কয়েক ঘণ্টার মধ্যে। ভিজে ক্ষতিগ্রস্ত অংশ শুকিয়ে রঙের প্রলেপ দেওয়া হয়। তার পরে রীতিমতো বোধন। এর মধ্যে ভাঙা সাঁকোটিও মেরামত শুরু করে দেন গ্রামবাসী।
সাঁকো নিয়ে গ্রামবাসীদের ক্ষোভ রয়েছে। পুজো উদ্যোক্তাদের মধ্যে পিন্টু মৈত্র বলেন, “কারিগরি ধারণা ছাড়াই গ্রামবাসীরা নিজেদের সুবিধার্থে সাঁকোটি বানিয়েছেন। প্রতি বন্যায় সাঁকো ভাঙে। ফের নতুন করে তৈরি করা হয়। এ বছর বন্যা না-হওয়ায় সাঁকোটি রয়ে গেলেও পলকা হয়ে গিয়েছিল। সাঁকোটির দায়িত্ব পঞ্চায়েত বা পঞ্চায়েত সমিতি নিক।”
পুজোর পরে সাঁকোটি সরেজমিনে খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার আশ্বাস দিয়েছেন বিডিও দেবাশিস মণ্ডল। একই সঙ্গে তিনি প্রশংসা করেছেন গ্রামবাসীদের কুসংস্কারমুক্ত মানসিকতার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy