Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বায়ুদূষণে নাকাল হাওড়া, গ্যাস বিলি ২৫০ দোকানিকে

খোদ রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের দেওয়া তথ্যই বলছে, পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, রাত তিনটের সময়ে ঘুসুড়ি ও বেলুড়ের মতো এলাকায় বাতাসে ভাসমান অতি সূক্ষ্ম ধূলিকণার (পিএম ২.৫) পরিমাণ প্রতি ঘনমিটারে ৪০০ থেকে ৫০০ পিপিএম (পার্টস পার মিলিয়ন)-এর মধ্যে ঘোরাফেরা করছে।

 ঝাপসা: ভাঙা রাস্তার ধুলোয় ঢেকেছে হাওড়ার জে এন মুখার্জি রোড। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

ঝাপসা: ভাঙা রাস্তার ধুলোয় ঢেকেছে হাওড়ার জে এন মুখার্জি রোড। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৯ ০২:৩৮
Share: Save:

উৎস একটি নয়। একাধিক। যানবাহনের ধোঁয়া তো রয়েছেই, সেই সঙ্গে ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট ও যত্রতত্র পড়ে থাকা আবর্জনাও বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ হয়ে উঠেছে হাওড়া শহরে। এই দূষণ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বুধবার হাওড়ার শরৎ সদনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে রাস্তায় উনুন জ্বেলে খাবারের দোকান চালানো ২৫০ জন দোকানিকে নিখরচায় রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার দিল রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ ও হাওড়া পুরসভা। তবে পরিবেশকর্মীদের প্রশ্ন, শুধু সিলিন্ডার দান করলেই কি দূষণের মাত্রা কমবে? দূষণের বাকি উৎসগুলির কী হবে?

খোদ রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের দেওয়া তথ্যই বলছে, পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, রাত তিনটের সময়ে ঘুসুড়ি ও বেলুড়ের মতো এলাকায় বাতাসে ভাসমান অতি সূক্ষ্ম ধূলিকণার (পিএম ২.৫) পরিমাণ প্রতি ঘনমিটারে ৪০০ থেকে ৫০০ পিপিএম (পার্টস পার মিলিয়ন)-এর মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে, এই মাত্রার দূষণ খুবই বিপজ্জনক।

বর্ষায় হাওড়ার অধিকাংশ রাস্তার অবস্থাই হয়ে ওঠে দুর্বিষহ। সব থেকে ভয়াবহ অবস্থা হয় লিলুয়া, ঘুসুড়ি ও বেলুড় এলাকার। এ বছরও তার অন্যথা হয়নি। পিচ উঠে, খোয়া ও মাটি বেরিয়ে এক-এক জায়গায় এক থেকে দেড় ফুটের গর্ত হয়‌ে গিয়েছে। বর্ষার পরেই রোদে রাস্তা শুকিয়ে গিয়ে এখন এলাকা ঢেকে গিয়েছে ধুলোর চাদরে। লিলুয়ার এ রোড, ঘুসুড়ির জে এন মুখার্জি রোড, মধ্য হাওড়ার আশু বসু লেন, ইস্ট-ওয়েস্ট বাইপাসের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় গাড়ি চললেই ধুলোয় ঢেকে যাচ্ছে চার দিক। পথচলতি মানুষ বা যানবাহনে বসে থাকা যাত্রীদের দমবন্ধ হওয়ার মতো অবস্থা হচ্ছে।

রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ হাওড়ার যে তিন জায়গায় বায়ুদূষণ মাপার কেন্দ্র তৈরি করেছে, সেগুলি হল: বেলুড়, ঘুসুড়ি ও পদ্মপুকুর। মঙ্গলবার রাতে ওই তিন জায়গায় বায়ুদূষণের মাত্রা দেখলেই বোঝা যাবে, হাওড়ায় বাতাসে বিষের পরিমাণ কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের রিপোর্ট বলছে, ওই দিন রাত ২টোর সময়ে বাতাসে ভাসমান অতি সূক্ষ্ম ধূলিকণার পরিমাণ ছিল বেলুড়ে ৪০৯, ঘুসুড়িতে ৫০০ এবং পদ্মপুকুরে ৩৪৩ পিপিএম। পর্ষদের মতে, ভাসমান ধূলিকণার পরিমাণ যেখানে ৫০০ পিপিএম দেখাচ্ছে, সেই জায়গাটিকে ‘রেড জ়োন’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেখানে এমনই অবস্থা যে, আধ ঘণ্টা রাস্তায় দাঁড়ালেই শ্বাসকষ্ট, কাশি শুরু হয়ে যাবে। ফুসফুসেরও ক্ষতি হবে।

ভাঙা রাস্তার ধুলো থেকে যে দূষণ ছড়াচ্ছে, তা মানছেন হাওড়ার পুর কমিশনার বিজিন কৃষ্ণ। তিনি বলেন, ‘‘হাওড়ার সমস্ত রাস্তার সংস্কার বা নতুন করে তৈরির জন্য রাজ্য সরকারের কাছে ৭০ কোটি টাকার বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট ইতিমধ্যেই পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। আপাতত ঠিক হয়েছে, প্রতিদিন পুরসভার আটটা গাড়ি ওই রাস্তাগুলিতে গিয়ে জল ছড়াবে, যাতে ধুলো কম ওড়ে। রাস্তা সারানো পর্যন্ত এই

ব্যবস্থা চলবে।’’

পুর কমিশনার জানান, আপাতত ১৬টি গলিতে রাস্তা সারানোর কাজ শুরু হয়েছে। আগামী মার্চের মধ্যে সমস্ত রাস্তা সারানো হয়ে যাবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Environment Air Pollution Howrah
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE