আলোচনা: এলাকাবাসীর অভিযোগ শুনে বক্তব্য পেশ করছেন জেলাশাসক মুক্তা আর্য। বৃহস্পতিবার তপনা পঞ্চায়েতে। ছবি: সুব্রত জানা
ম্যাডাম, শুয়োরের উৎপাতে প্রাণ ওষ্ঠাগত। কিছু করুন।
ছাপোষা এক গ্রামবাসীর প্রথম আর্জি। জনতার দরবারে এসে শুরুতে কিছুটা থতমত খেয়ে গিয়েছিলেন হাওড়ার জেলাশাসক মুক্তা আর্য। ফের অনুযোগ, ‘‘পান বরজে কয়েকদিন ধরে শুয়োরের উৎপাত চলছে। ওরা বরজে ঢুকে পান নষ্ট করছে। বিহিত করতেই হবে আপনাকে।’’
জেলাশাসক হাঁক পাড়লেন। এলেন জেলার বনপাল (ডিএফও) শ্রীকান্ত ঘোষ। অনেক ভেবেও তিনি অসহায়, ‘‘এটা সম্ভবত গৃহপালিত শুয়োর। বন্যপ্রাণী নয়। বন দফতরের পক্ষে কিছু করা মুশকিল।’’
নিদান দিলেন বিধায়ক (উলুবেড়িয়া দক্ষিণ) পুলক রায়— ‘‘ওগুলোকে ধরে গড়চুমুকে মিনি চিড়িয়াখানায় ছেড়ে দেওয়া এসে যেতে পারে।’’
এ নিদান নিয়মের বাইরে, তাই আপত্তি তুললেন বনপাল, ‘‘এ ব্যবস্থা তো বন্যপ্রাণীদের ক্ষেত্রে করা হয়।’’
কিছুক্ষণ সব চুপচাপ। জেলাশাসকও। বিধায়কই ফের মুখ খুললেন, ‘‘আপাতত তো মিনি চিড়িয়াখানায় ছাড়া হোক। পরে না হয় এখানেই একটা শুয়োরের ঘর তৈরি করে দেওয়া হবে।’’
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন বিভাগের কর্তাদের নিয়ে জেলাশাসককে নির্দিষ্ট পঞ্চায়েতে ব্লকের প্রশাসনিক পর্যালোচনা সভা এবং শেষে জন-শুনানি আয়োজনের নির্দেশ দিয়েছেন সম্প্রতি। সেই নির্দেশমতোই বৃহস্পতিবার বিকেলে হাওড়া জেলার প্রথম জন-শুনানি হয়ে গেল উলুবেড়িয়া-১ ব্লকের তপনা পঞ্চায়েতের কাশমুল গ্রামে। হাজির ছিলেন কয়েকশো গ্রামবাসী। এক ঘণ্টার ওই শুনানিতে জেলাশাসক প্রথমেই জানিয়ে দেন, তাঁরা কিছু বলতে আসেননি। শুধু গ্রামবাসীর সমস্যার কথা শুনতে এসেছেন।
ব্যস, আগল খুলল। সকলেই নিজের সমস্যার কথা প্রশাসনের কানে পৌঁছে দেওয়ার জন্য শশব্যস্ত হয়ে উঠলেন। চম্পা মন্ডল নামে এক মহিলার আবেদন, ‘‘আমি অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছি। জরির কাজ করি। স্বামী তেলেভাজার দোকান চালান। আমাকে যদি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে একটা চাকরি করে দেওয়া যায়, ভাল হয়।’’
জেলাশাসক— ‘‘এ ভাবে চাকরির ব্যবস্থা হয় না। আপনি যদি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত থাকেন, তা হলে উন্নত প্রশিক্ষণ দিয়ে আপনি যাতে ব্যবসা করেন, তার ব্যবস্থা করা যায়।’’
প্রতিমা দাস (আর এক গ্রামবাসী)— ‘‘মেয়ে সংস্কৃতে অনার্স। ওঁকে বিএড পড়ানোর ব্যবস্থা
করতে হবে।’’
জেলাশাসক— ‘‘এতে আমার কিছু করার নেই। অনলাইনে দরখাস্ত করতে হবে।’’
উঠল রাস্তা, বাংলা আবাস যোজনা প্রকল্পে বাড়ি, পাকা সেতু, শৌচাগারের দাবিও। জেলাশাসক সকলের নাম এবং সমস্যার কথা বিডিওকে লিখে নিতে বললেন। বিডিও কার্তিকচন্দ্র রায় সব ‘নোট’ করলেন।
এ দিন জেলাশাসক প্রথমে সমরুক শীতলচন্দ্র ইনস্টিটিউশনে ব্লকের পর্যালোচনা বৈঠক করেন। পঞ্চায়েত স্তর থেকে শুরু করে প্রশাসনের বিভিন্ন বিভাগের কর্তারা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক পুলকবাবু এবং জেলা (গ্রামীণ) পুলিশ সুপার সৌম্য রায়। তারপরেই হয় ওই জন-শুনানি। শুনানি শেষে জেলাশাসকের আশ্বাস, ‘‘প্রতিটি সমস্যা নিয়ে আমরা বিভাগীয় আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলব। মানুষের সুরাহার চেষ্টা করব।’’
গ্রামবাসীদের কাছে এ এক নতুন অভিজ্ঞতা। জেলাশাসককে সমস্যার কথা জানাতে কাঠখড় পোড়াতে হয়নি। দীপক দাস নামে এক গ্রামবাসী বলেন, ‘‘জেলাশাসক নিজেই আমাদের কাছে এলেন। খুব ভাল লাগল। নিজেদের অনেক জমানো কথা তাঁকে
বলতে পারলাম।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy