Advertisement
০৮ মে ২০২৪
হুগলি শিল্পাঞ্চলে আঁধার, কাজ হারিয়েছেন আরও ১৫ হাজার

‘কিসের ভোট? পেটে ভাত নেই’

আঁধারে ঢাকা হুগলি শিল্পাঞ্চলের বন্ধ কারখানার শ্রমিকেরা তাই ভোট নিয়ে নির্লিপ্ত। কেউবা ফুঁসছেন। কারও ক্ষোভ, ‘কীসের ভোট? পেটে ভাত নেই।’’

হতাশ: বন্ধ কারখানার দরজায় কাজ হারানোর শ্রমিকেরা। ফাইল চিত্র

হতাশ: বন্ধ কারখানার দরজায় কাজ হারানোর শ্রমিকেরা। ফাইল চিত্র

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়
চন্দননগর: শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৯ ০১:৪৭
Share: Save:

ভোট-প্রচারে জোর বাড়ছে। কিন্তু শ্রমিকদের জন্য কোনও আন্দোলন নেই, অভিযোগ এমনই!

আঁধারে ঢাকা হুগলি শিল্পাঞ্চলের বন্ধ কারখানার শ্রমিকেরা তাই ভোট নিয়ে নির্লিপ্ত। কেউবা ফুঁসছেন। কারও ক্ষোভ, ‘কীসের ভোট? পেটে ভাত নেই।’’

ডানলপ বা হিন্দমোটরকে বাদ দিলে শুধু গত এক বছরে এই শিল্পাঞ্চলে বন্ধ হয়েছে তিনটি জুটমিল (গোন্দলপাড়া, ইন্ডিয়া এবং হেস্টিংস) এবং দু’টি বিস্কুট কারখানা (প্রিয়া, গ্যাঞ্জেস ভ্যালি) এবং একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কারখানার (লগন) তিনটি ইউনিট। স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে নতুন করে বেকার হন

ওই পাঁচ কারখানার সাড়ে ১৫ হাজারেরও বেশি শ্রমিক। সাড়ে তিন মাস বন্ধ থাকার পরে অবশ্য কাল, বৃহস্পতিবার খুলবে হেস্টিংস। আপাতত সেখানকার শ্রমিকদের মুখে হাসি ফুটলেও বাকি কারখানাগুলির ভবিষ্যৎ এখনও অন্ধকারে।

জেলা শিল্প মহলের মতে, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মিলিয়ে ভুক্তভোগীর সংখ্যা লক্ষাধিক। কারণ, সব শ্রমিকের পরিবার রয়েছে। তা ছাড়া, কারখানাগুলি বন্ধের জেরে আশপাশের ছোটখাটো দোকান, ব্যবসা কেন্দ্রও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের বিক্রিবাটাও বন্ধের মুখে।

এই পরিস্থিতিতে বন্ধ কারখানার শ্রমিকেরা আশা করেছিলেন, রাজনৈতিক দলগুলি তাঁদের জন্য কিছু করবে। কিন্তু তাঁদের অভিযোগ, দোরগোড়ায় লোকসভা ভোট এসে যাওয়ায় সব দল প্রচারে ব্যস্ত। শ্রমিকদের দিকে তাকানোর তেমন ফুরসত নেই। তাই কোনও আন্দোলনও নেই। হেস্টিংস খোলার কথা ঘোষণা করা হলেও ফের বন্ধ হবে কিনা, এ নিয়ে শ্রমিকদের

সংশয় রয়েছেই।

এক ধাপ এগিয়ে গোন্দলপাড়া জুটমিলের শ্রমিকেরা ইতিমধ্যে ভোট বয়কটের ডাক দিয়েছেন। ওই জুটমিলের ‘টাইম কিপার’ রাজেশ জয়সোয়ারা বলেন, ‘‘আমরা জুটমিল লাগোয়া ২৫ ও ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা ভোট বয়কট করব বলে ঠিক করেছি।

পেটে ভাত নেই। কিসের ভোট? রাজনৈতিক দলগুলোর কোনও মাথাব্যথা আছে? মিল খোলার ব্যাপারে আন্দোলন দূরে থাক, কেউ টুঁ-শব্দটি পর্যন্ত করেননি।’’

শ্রমিকেরা যে সঙ্কটে তা মানছে সব দলই। কিন্তু সমাধান কোন পথে তার কোনও দিশা দেখাতে পারেননি। প্রবীণ বামপন্থী শ্রমিক নেতা শান্তশ্রী চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সত্যিই এখন হুগলিতে শিল্পের বেহাল দশা। মিলগুলি যাতে খোলে, সে জন্য অবরোধ, শ্রম দফতরে স্মারকলিপি দেওয়ার মতো কর্মসূচি পালন করেছি। রাজ্য এই

পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকারের এগিয়ে আসা উচিত।’’ জেলা আইএনটিটিইউসি সভাপতি বিদ্যুৎ রাউত বলেন, ‘‘মিলগুলো য়াতে খোলে, সেই চেষ্টা করছি। কিন্তু মালিকপক্ষের অনড় মনোভাবের কারণে তা কার্যকর করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।’’

গত বছর ২৭ মে বন্ধ হয়েছিল চন্দননগরের গোন্দলপাড়া জুটমিল। তারপর থেকে মিলটি খোলার দাবিতে শ্রমিকেরা বহুবার রাস্তায় নেমেছেন। শ্রম দফতরে দ্বিপাক্ষিক-ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হয়েছে। কিন্তু সমাধান সূত্র মেলেনি। শ্রমিক মহল্লার বাসিন্দারা পর্যাপ্ত জল-বিদ্যুতের অভাবে ভুগছেন। অনেকে অর্থাভাবে চিকিৎসাও করাতে পারছেন না। পরিবারের ছোটদের পড়াশোনাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

গোন্দলপাড়ার সঙ্গে রিষড়ার হেসিটংস এবং শ্রীরামপুরের ইন্ডিয়া জুটমিলও একই শিল্পগোষ্ঠী পরিচালিত। শ্রমিকদের ন্যায্য প্রাপ্য আদায়ে কাজ করা ‘চন্দননগর আইনি সহায়তা কেন্দ্র’-এর কর্ণধার বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘গোন্দলপাড়া জুটমিল হস্তান্তরের সময়েই বর্তমান শিল্পগোষ্ঠী শ্রমিকদের গ্র্যাচুইটির জন্য ১৪ কোটি টাকা পেয়েছিলেন। সেই টাকা শ্রমিকদের দেওয়া হয়নি।’’

এই আবহেই ভোট বয়কটের দাবি তুলেছেন গোন্দলপাড়া

জুটমিলের শ্রমিকেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE