Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
চায়ের ঠেকে নারদ-নারদ

ইসরোকে কেন টেনে আনা হল রাজনীতিতে?

এখানে সব প্রশ্নেই তর্ক-বিতর্ক জমে। মোহনবাগান না ইস্টবেঙ্গল? মেসি বড় না রোনাল্ডো? অমিতাভ না শাহরুখ? মমতা-মোদী তো আছেই। ভোটের দিন এগিয়ে আসছে। রাজনীতির সেই তর্কই আরও প্রবল হচ্ছে এখানে। ঠিকানা— চায়ের দোকান। আজ বাগনানের মুগকল্যাণে গৌর ঘোষের চায়ের দোকান। কান পাতলেন নুরুল আবসার। এ দিকে নোটবন্দি, জিএসটি-র ফাঁদে পড়ে ছোট ব্যবসায়ীদের যে কী হাল হয়েছে তার ভুক্তভোগী আমি নিজে।

সরগরম: চায়ে চুমুক দিয়ে রাজনীতির আলোচনা। —নিজস্ব চিত্র

সরগরম: চায়ে চুমুক দিয়ে রাজনীতির আলোচনা। —নিজস্ব চিত্র

শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০১৯ ১০:৫৪
Share: Save:

শুক্রবার সকালে আড্ডা বসল আন্দুল বাজারে নিতাই প্রমাণিকের চায়ের দোকানে।

সুব্রত সরকার (অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ককর্মী): খুব ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটছে দু’দিন ধরে।

মণীশ মান্না (প্রাক্তন ফুটবলার): কেন কী হয়েছে?

সুব্রত সরকার: কেন? দেখছ না, রাজনীতি মহাকাশে উঠেছে। ‘মিশন শক্তি’ নির্বাচনী প্রচারের হাতিয়ার
হয়ে উঠেছে।

মণীশ মান্না: ঠিক। আর সহ্য করা যাচ্ছে না। এতদিন পর্যন্ত সেনাবাহিনীর সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে রাজনীতি সরগরম ছিল। নির্বাচন কমিশনের গুঁতো খেয়ে সেনার দিকে আর কেউ হাত বাড়াতে পারছেন না। এ বার দৃষ্টি গিয়েছে একেবারে মহাকাশে।

দুর্গাপদ দাস (সমাজসেবী): ‘মিশন শক্তি’-র সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে মহাকাশ গবেষণা সংস্থার নাম। দেশের মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে ওই সংস্থা নিরন্তর কাজ করে চলেছে। সেই সংস্থা কিনা চলে এল রাজনীতিতে।

প্রবীর চট্টোপাধ্যায় (ব্যবসায়ী): ঠিকই তো। বিজ্ঞানীদের নীরব সাধনার ফসল হল ‘মিশন শক্তি’। ১০ বছর ধরে বিজ্ঞানীরা এই প্রকল্পে কাজ করছেন। আচমকা দেখা গেল বিজ্ঞানী নন, অন্য কেউ ‘মিশন শক্তি’ উৎক্ষেপণ করছেন। তারপরে সেই সাফল্যকে রাজনীতির কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।

মণীশ মান্না: উৎক্ষেপণের সময়টাও দেখার মতো। ঠিক নির্বাচনের আগে। কেন আরও আগে এটা করা যেত না? নাকি আগে করলে রাজনীতির ক্ষীর খাওয়া যেত না।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

তরুণকান্তি মুখোপাধ্যায় (ব্যবসায়ী): অথচ এমন উৎক্ষেপণ তো প্রথম নয়। আমাদের বিজ্ঞানীরা আগেও অসাধ্য সাধন করেছেন। পোখরানে পরমাণু বিস্ফোরণ হয়েছে। তা নিয়ে কিন্তু কোনও রাজনীতি হয়নি।

প্রবীর চট্টোপাধ্যায়: এ দিকে নোটবন্দি, জিএসটি-র ফাঁদে পড়ে ছোট ব্যবসায়ীদের যে কী হাল হয়েছে তার ভুক্তভোগী আমি নিজে।

সুব্রত সরকার: আমি তো ব্যাঙ্কে কাজ করতাম। নোটবন্দিতে সাধারণ মানুষের কী দুর্দশা হয়েছে তা হাড়ে হাড়ে বুঝতে পেরেছি। সরকারের যদি ক্ষমতা থাকে তো মানুষকে বোঝাক জিএসটি বা নোটবন্দি করে কী সুফল মিলেছে। তা না করে অতীতের কুকর্ম মুছে ফেলার জন্য ‘মিশন শক্তি’কে আশ্রয় করা হচ্ছে। বিজ্ঞানীদের সাফল্যকে ঢেকে দেওয়া হচ্ছে রাজনীতির বর্মে।

অমলচাঁদ মল্লিক (ব্যবসায়ী): মহাকাশ গবেষণা সংস্থা রাজনীতির ঘুঁটি হল, এটা ভেবে খারাপ লাগছে। কই, আগে তো এমন হয়নি!

মণীশ মান্না: দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী সাংসদ নির্বাচিত হয়ে সংসদ ভবনের মাটিতে প্রণাম করেছিলেন। তা দেখে মন ভরে গিয়েছিল। তারপরে কী সব হচ্ছে? একটি নিরপেক্ষ সংস্থাকে নিয়ে রাজনীতি শুরু হল? সব দলই এই খেলায় মেতে উঠল? এটা তো সংসদীয় ব্যবস্থাকে অপমান করা।

মানস মুখোপাধ্যায় (রবীন্দ্রসংগীতের গবেষক): আমি সংস্কৃতি জগতের মানুষ। তাই কবির ভাষাতেই বলি, ‘‘অন্তরের আলোয় যে আলোকিত, তার বাইরে আভরণ কেন।’’ আসলে, পাঁচ বছর ধরে যদি সত্যিকারের কাজ করা হত তাহলে এই ‘মিশন শক্তি’কে আভরণ হিসাবে তুলে ধরার প্রয়োজন হতো না।

সবাই একসঙ্গে: একেবারে ঠিক বলেছেন মানসদা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE