Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

হাওড়া স্টেশনে পাঁচ মাসে ধৃত শতাধিক দুষ্কৃতী

স্টেশনের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে ‘টার্গেট’ ঠিক করে শুরু করত ‘অপারেশন’। টানা কয়েক দিন নানা কৌশলে একের পর এক যাত্রীকে সর্বস্বান্ত করে পকেটে মোটা টাকা নিয়ে ফিরে যেত দেশের বাড়িতে।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

দেবাশিস দাশ
শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৮ ০২:৩৯
Share: Save:

স্রেফ কেপমারি আর ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে ভিন্ রাজ্য থেকে দল বেঁধে হাওড়া স্টেশনে আসত দাগি অপরাধীরা। ট্রেনের সাধারণ শ্রেণিতে এলেও তারা ফিরে যেত শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত প্রথম শ্রেণিতে। স্টেশনের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে ‘টার্গেট’ ঠিক করে শুরু করত ‘অপারেশন’। টানা কয়েক দিন নানা কৌশলে একের পর এক যাত্রীকে সর্বস্বান্ত করে পকেটে মোটা টাকা নিয়ে ফিরে যেত দেশের বাড়িতে।

ভিন্ রাজ্যের এই দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্যে নাজেহাল অবস্থা হয়েছিল হাওড়া স্টেশনের আরপিএফ এবং রেল পুলিশের। কোনও ভাবেই তাদের নাগাল পাওয়া যাচ্ছিল না। অথচ, গত এক বছরে বেড়ে গিয়েছিল ছিনতাই ও বিভিন্ন ধরনের কেপমারি। এই দুষ্কৃতী-চক্রকে ধরতে আরপিএফ থেকে পুরুষ ও মহিলা কর্মীদের নিয়ে ২০ জনের একটি প্রশিক্ষিত বাহিনী তৈরি করার পরেই মেলে সাফল্য। আধুনিক প্রযুক্তি এবং ওই বাহিনীর অফিসার-কর্মীদের নিরলস পরিশ্রমে পাঁচ মাসের মধ্যে হাওড়া স্টেশন চত্বরে ধরা পড়ে ভিন্ রাজ্যের এমন ১০৩ জন দুষ্কৃতী। যাদের মধ্যে চার জন ধরা পড়েছে বৃহস্পতিবার। ধৃতদের কাছ থেকে সাইকেলের চেন, লোহার রড ও ধারালো অস্ত্রশস্ত্র পাওয়া গিয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেই জানা গিয়েছে ছিনতাই ও কেপমারির নানা কৌশল।

হাওড়ায় আরপিএফের সিনিয়র ডিভিশনাল কমান্ড্যান্ট রজনীশকুমার ত্রিপাঠী জানান, মূল দলটি আসত উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন গ্রাম থেকে। এক-একটি দলে অন্তত ২০ জন করে থাকত। স্টেশনে নামার পরে ওই চত্বরেই তারা চাদর পেতে শুয়ে পড়ত। রাতের অপেক্ষায়। এর পরে রাতের ট্রেন ধরতে আসা কোনও এক জন যাত্রীকে লক্ষ্য করে শুরু হত ‘অপারেশন’। সেই ‘টার্গেট’-এর কাছে গিয়ে এক জন কথাবার্তায় তাঁকে অন্যমনস্ক করে দিত। অন্য এক জন সেই সুযোগে ওই যাত্রীর পাশে দাঁড়িয়ে জামাকাপড় পাল্টানোর অছিলায় লুঙ্গি বা তোয়ালে দিয়ে তাঁর জিনিসপত্র চাপা দিয়ে দিত। সেই সময়ে তাদের আর এক শাগরেদ লুঙ্গি বা তোয়ালের আড়াল থেকে সেই জিনিসপত্র সরিয়ে নিয়ে চম্পট দিত। শুধু মালপত্রই নয়, মানিব্যাগ বা এটিএম কার্ডও হাতিয়ে নিত ওই দুষ্কৃতীরা। কখনও আবার টিকিট পরীক্ষক সেজে ভয় দেখিয়ে যাত্রীদের সর্বস্বান্ত করে ফিরে যেত নিজেদের গ্রামে।

রজনীশ বলেন, ‘‘এই সব অপরাধীকে ধরতে যে ২০ জনকে বেছে নেওয়া হয়, তাঁরা তিনটে শিফ্‌টে ২৪ ঘণ্টা ধরে নজরদারি চালিয়ে দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করেছেন। সাহায্য নেওয়া হয়েছে সিসি ক্যামেরার। এক-একটি দলকে শনাক্ত করতে লেগে গিয়েছে ২০ দিন থেকে তিন মাস। ভিন্ রাজ্যের দাগি আসামিদের পাশাপাশি আন্তঃরাজ্য নারী পাচারকারীও ধরা পড়েছে।’’

আরপিএফ সূত্রে জানা গিয়েছে, এই অপরাধীদের ধরতে আরপিএফের আইজি আর কে মালিকের নির্দেশে যে বিশেষ বাহিনী গঠন করা হয়েছে, তারা সাদা পোশাকে সাধারণ যাত্রী সেজে প্রতিটি প্ল্যাটফর্মে ঘুরে বেড়াচ্ছে। রেলের দাবি, এ ভাবে নিয়মিত চিরুনি তল্লাশি চালানোয় হাওড়া স্টেশন চত্বরে কমে গিয়েছে অপরাধের সংখ্যা।

রেলের দাবি, শুধু দুষ্কৃতী পাকড়াও নয়, যে কোনও রকম নাশকতামূলক কাজকর্ম রুখতেও ঢেলে সাজানো হয়েছে স্টেশনের নিরাপত্তা বলয়কে। লাগানো হয়েছে উচ্চ ক্ষমতার ২৪৬টি ক্যামেরা। খোলা হয়েছে আধুনিক কন্ট্রোল রুম। সেখানে বসেই গোটা স্টেশনে নজর রাখা হচ্ছে। কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বে থাকছেন এক জন অফিসার ও আট জন কনস্টেবল। এ ছাড়া, ক্যামেরা লাগানো ‘আন্ডার ভেহিক্‌ল স্ক্যানার’ ও জওয়ানদের জন্য আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র বাড়ানো হয়েছে। দেওয়া হয়েছে এ কে-৪৭ ও ইনসাসের মতো স্বয়ংক্রিয় রাইফেল। যে কোনও ঘটনার জন্য তৈরি রাখা হয়েছে প্রশিক্ষিত কম্যান্ডো, বম্ব স্কোয়াড ও স্নিফার ডগ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Howrah Station Howrah Rail Police Antisocials
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE