প্রতীকী ছবি।
মুক্তিরচক গণধর্ষণ মামলার অন্তিম পর্বের শুনানি শুরু হল আমতা আদালতে।
বৃহস্পতিবার শুনানিতে হাজিরা ছিল মামলার মূল সাক্ষী তথা মামলাটির তদন্তকারী অফিসার (আইও) শুভাশিস চক্রবর্তীর। বছর পাঁচেক আগে যখন ওই ঘটনা ঘটেছিল, তখন আমতার সার্কেল ইনস্পেক্টর (সিআই) শুভাশিসবাবু। এ দিন আদালতে তিনি ৬০টি প্রমাণ এবং রিপোর্ট পেশ করেন। আজ, শুক্রবারও আদালতে ওইসব প্রমাণ নিয়ে আলোচনা চলবে। তারপরে শুভাশিসবাবুর সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরার তারিখ দেবেন বিচারক। তা হয়ে গেলেই মামলার রায় ঘোষণা করা হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
এ দিন আদালতে এসেছিলেন দুই নির্যাতিতার আত্মীয়েরা। দীর্ঘদিন ধরে চলা মামলাটির শুনানি শেষ পর্বে এসে যাওয়ায় তাঁরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। দুই নির্যাতিতা জানান, তাঁরা সুবিচার পাওয়ার আশায় দিন গুনছেন।
আমতার মুক্তিরচক গ্রামে এক গৃহবধূ ও তাঁর জেঠশাশুড়িকে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিল ২০১৪ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে। অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছে দুই তৃণমূল নেতা বরুণ মাখাল ও রঞ্জিত মণ্ডল-সহ ১০ জন। তারা সে দিন জোর করে ওই বাড়িতে ঢুকে অত্যাচার চালায় বলে অভিযোগ। দুই মহিলাকে শারীরিক ভাবে নির্যাতনও করা হয়েছিল বলে অভিযোগ। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ক্ষত নিয়ে তাঁরা উলবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে বহুদিন ভর্তি ছিলেন।
ঘটনার তিন দিনের মধ্যে অভিযুক্তদের পুলিশ গ্রেফতার করে। রাজ্য পুলিশের পক্ষ থেকে ঘটনার গুরুত্ব বুঝে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া আমতার তৎকালীন সিআই-কে। তদন্ত প্রক্রিয়া দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয় উলুবেড়িয়ার তৎকালীন এসডিপিও শ্যামল সামন্তকে। ৮৭ দিনের মাথায় পুলিশ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়। ২০১৪ সালেরই জুলাই মাসে উলুবেড়িয়া মহকুমা আদালতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করা হয়। ওই মাসেই মামলাটি শুনানির জন্য আমতা আদালতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সাক্ষী করা হয় ৪২ জনকে। ২০১৫ সালের অগস্ট মাস নাগাদ শুরু হয় শুনানি।
কিন্তু শুনানিতে গতি ছিল না বলে বিভিন্ন মহলে বারবার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দুই নির্যাতিতা। সরকারি আইনজীবী ঠিক না হওয়া, ফরেন্সিক রিপোর্ট পেতে দেরি, নির্দিষ্ট তারিখে সাক্ষীদের না-আসা, বিচারক বদলি— এমনই নানা কারণে শুনানি ব্যাহত হয়। এর মধ্যে আবার চার্জশিট পেশ হয়ে যাওয়ার পরেও হাইকোর্ট থেকে অভিযুক্তেরা জামিন পেয়ে যাওয়ায় নির্য়াতিতাদের পরিবার আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। জামিন পেয়ে অভিযুক্তরা তাঁদের উপরে হামলা করতে পারে বলে বলে পুলিশের কাছে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তাঁরা। যদিও ধর্ষণের ঘটনার পর থেকে ওই বাড়ির সামনে পুলিশের অস্থায়ী শিবির বসানো আছে। অভিযুক্তেরা জামিন পাওয়ার পরে ওই বাড়িতে বাড়তি নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়। জেলা গ্রামীণ পুলিশের কর্তারা জানান, হাইকোর্টের নির্দেশ আছে অভিযুক্তরা জামিন পেলেও গ্রামে ঢুকতে পারবে না। সেটা কঠোর ভাবে দেখা হয়।
মামলায় এই দেরির জন্য পুলিশ ও প্রশাসনিক গাফিলতির দিকে আঙুল তুলেছেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক বিপ্লব মজুমদার। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ‘‘শুনানি দ্রুত ও মসৃণ করার জন্য প্রশাসনের যে তৎপরতা দেখানোর দরকার ছিল, তার অভাব রয়েছে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক ধর্ষণের যে সব ঘটনা ঘটে চলেছে, তার অন্যতম কারণ বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা। বিচার ব্যবস্থাকে পুলিশ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বতো ভাবে সহায়তা করা উচিত। মুক্তিরচকের ক্ষেত্রে এটা দেখা যায়নি। অন্তিম লগ্নের শুনানি পর্ব যাতে আর ব্যাহত না হয়, তা প্রশাসনের দেখা উচিত।’’
কোনও গাফিলতির কথা অবশ্য মানেননি হাওড়া জেলা (গ্রামীণ) পুলিশের কর্তারা। তাঁদের দাবি, ‘‘আটঘাট বেঁধেই তদন্ত করা হয়েছে। মামলার তদ্বিরও ঠিকমতো করা হয়েছে।’’ দলীয় নেতাদের নাম অভিযুক্তদের তালিকায় থাকার প্রসঙ্গে আমতার তৃণমূল নেতৃত্ব জানিয়েছেন, আইন তার নিজের পথে চলবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy