বাস টার্মিনাসের কাজ পরিদর্শনে জেলাশাসক এবং সাংসদ।
দোরগোড়ায় বিধানসভা ভোট। তার আগেই শ্রীরামপুরে নির্মীয়মাণ বাস টার্মিনাস চালু করতে শুরু হয়ে গেল তৎপরতা।
রবিবার দুপুরে জেলাশাসক সঞ্জয় বনশল, শ্রীরামপুরের মহকুমাশাসক মৃণালকান্তি হালদার এবং স্থানীয় সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় নির্মীয়মাণ প্রকল্পটি সরেজমিনে দেখতে যান। ছিলেন শ্রীরামপুরের বিধায়ক সুদীপ্ত রায় এবং পুরপ্রধান অমিয় মুখোপাধ্যায়ও। ৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি তৈরি করছে হুগলি রিভার ব্রিজ কমিশনার্স (এইচআরবিসি)। কল্যাণবাবু তার চেয়ারম্যান। বেসমেন্ট থেকে তিন তলা পর্যন্ত নির্মাণ ইতিমধ্যেই হয়ে গিয়েছে। ঠিকাদার সংস্থার তরফে জানানো হয়, ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি বাসস্ট্যান্ডের কাজ শেষ হয়ে যাবে।
বাস টার্মিনাসের নকশা।
কল্যাণবাবু বলেন, ‘’১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই বাসস্ট্যান্ডের উদ্বোধনের চেষ্টা করা হচ্ছে। পুরো কাজ শেষ করতে আরও কিছু দিন সময় লাগবে। দিঘা, পুরী এবং ভিন্ রাজ্যগামী বাসও এখান থেকে যাতে ছাড়ে, সে ব্যাপারে চেষ্টা করা হবে।’’ তাঁর আশা, প্রকল্পটি হলে শহরের রূপ বদলে যাবে। রাজ্যের কোনও মফস্সলে এত বড় বাস টার্মিনাস আর কোথাও নেই বলেও তিনি দাবি করেন।
শ্রীরামপুর ইএসআই হাসপাতালের অদূরে, জি টি রোডের ধারে পুরসভার ৯৮ কাঠা জমিতে প্রকল্পটি হচ্ছে। পুরসভা জমিটি ৯৯ বছরের জন্য এইচআরবিসি-কে লিজ দিয়েছে। বাস টার্মিনাস ভবন ঘিরে বাণিজ্যিক পরিকল্পনাও রয়েছে।
প্রশাসন সূত্রের খবর, প্রকল্পে বেসমেন্ট থেকে ছ’টি তল থাকবে। বেসমেন্টে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে। পার্কিংয়ের টাকা নেবে পুরসভা। বাস দাঁড়াবে একতলায়। অন্তত ২৫টি বাস সেখানে দাঁড়াতে পারবে। বাসকর্মীদের ঘর থাকবে। দোতলায় যাত্রী-লাউঞ্জ হবে। বিশ্রামাগার, স্নানঘর, চা-কফির স্টল, জনতা ক্যান্টিনও হবে। তিন তলা থেকে ছ’তলা বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহার করা হবে। এইচআরবিসি সূত্রের খবর, সেখানে দোকানঘর বিক্রি করতে পারে তারা। মূল ভবনের পিছনে দু’কাঠা জায়গায় সৌন্দর্যায়ন করা হবে। লভ্যাংশের একাংশ ছাড়াও মোট আয়ের ১০ শতাংশ প্রতি বছর পুরসভায় জমা পড়ার কথা হয়।
বাস টার্মিনাসটি চালু হলে জি টি রোড ছাড়া শহরের অন্যত্র যাতে বাস যাতে না ঢোকে, তা নিশ্চিত করা হবে। এ জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে। প্রচীন এই শহরের প্রাণকেন্দ্র অত্যন্ত ঘিঞ্জি। অস্থায়ী দু’টি বাসস্ট্যান্ড রয়েছে। রেল স্টেশনের পাশে বাগখাল ও সল্টলেকগামী ৩ নম্বর রুটের বাস দাঁড়ায়। বেশ কয়েকটি রুটের বাস দাঁড়ায় আদালত চত্বরে রাস্তার উপরে। তাতে যানজট হয়। আদালত চত্বরকে ঘিরে শ্রীরামপুরে পর্যটনকেন্দ্র তৈরির উদ্যোগ শুরু হয়েছে। সেখানে অপরিকল্পিত ভাবে বাসস্ট্যান্ড থাকা শহরের সৌন্দর্যের পক্ষেও সমীচীন নয় বলেই স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য।
পুরপ্রধান বলেন, ‘‘বাসস্ট্যান্ড তৈরি হলে শহরে বাস যাতে না ঢোকে, তার জন্য প্রশাসনের পাশাপাশি আমরাও বলব। প্রকল্পটি চালু হলে শহরে যানজট অনেকটাই কমবে।’’
১৯৯১ সালে শ্রীরামপুরে এসে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু জানিয়েছিলেন, পুরসভা জমির বন্দোবস্ত করলে সরকার বাস টার্মিমাস তৈরি করে দেবে। এর পরেই পশ্চিম শ্রীরামপুরে ওই জায়গাটি বাস টার্মিনাসের জন্য বাছা হয়। কিন্তু নানা কারণে প্রকল্প নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। জমি নিয়ে আইনি জটে প্রকল্প পিছিয়ে পড়ে। এক সময়ে তৎকালীন স্থানীয় সাংসদ, প্রয়াত আকবর আলি খন্দকার এলাকা উন্নয়ন থেকে বেশ কয়েক লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন বাসস্ট্যান্ড গড়ার জন্য। তৎকালীন রাজ্য সরকারও দিয়েছিল। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বছর কয়েক আগে জমি পুরসভার হাতে আসে। তার পরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে বাস টার্মিনাস গড়ার কাজ হাতে নেয় এইচআরবিসি। ঠিকাদারি সংস্থার সঙ্গে নির্মাণ সামগ্রী সরবরাহকারীদের ঝামেলার জেরে কিছু দিন আগে কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তাতে প্রকল্প ঘিরে নানা প্রশ্ন ওঠে। তবে, এখন কাজে গতি এসেছে।
অপেক্ষায় শ্রীরামপুরবাসী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy