প্রথম দফার ভোট হয়ে গিয়েছে। দ্বিতীয় দফার ভোটের আগে পুলিশের একাংশের চিন্তা বাড়াচ্ছে পড়ে থাকা গ্রেফতারি পরোয়ানা। এই সব পরোয়ানা কার্যকর না- হলে জেলায় অশান্তির আশঙ্কাও থাকছে।
নির্বাচন ঘোষণার আগে পশ্চিম মেদিনীপুরে প্রায় আড়াই হাজার পরোয়ানা পড়ে ছিল। এখনও প্রায় দেড় হাজার পরোয়ানা পড়ে রয়েছে। পড়ে থাকা এই সব পরোয়ানা কবে কার্যকর হবে, সেই প্রশ্ন উঠছেই। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ রয়েছে, পড়ে থাকা গ্রেফতারি পরোয়ানা দ্রুত কার্যকর করতে হবে। তা না- হলে জেলা পুলিশ- প্রশাসনের ব্যাখাও তলব করতে পারে কমিশন। অধিক সংখ্যক পরোয়ানা পড়ে থাকলে নির্বাচনের সময় জেলায় অশান্তির আশঙ্কাও থাকে বেশি। দুষ্কৃতীরা অবাধে দাপিয়ে বেড়ায়।
জেলায় এখনও কেন বহু গ্রেফতারি পরোয়ানা কার্যকর হয়নি? পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভাদনা বরুণ চন্দ্রশেখর বলেন, “গ্রেফতারি পরোয়ানা দ্রুত কার্যকর করা হবে।” জেলা পুলিশের এক সূত্রে খবর, ইতিমধ্যে থানাগুলোকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় নির্দেশও পাঠিয়েছেন পুলিশ সুপার। প্রায় প্রতিদিনই কিছু না কিছু পরোয়ানা কার্যকর হচ্ছে। তবে সংখ্যাটা কম। জেলা পুলিশের এক কর্তার ব্যাখ্যা, “পরোয়ানা রয়েছে এমন অনেককে এলাকায় পাওয়া যাচ্ছে না। পুলিশ বিভিন্ন এলাকায় হানা দিয়ে ফিরে আসছে। যাদের নামে পরোয়ানা রয়েছে, তাদের খোঁজে তল্লাশি- অভিযান জারি রয়েছে।” তাঁর দাবি, “পুলিশের নজরদারি রয়েছে। পরোয়ানা থাকা লোকেরা কোনও ভাবেই ভোটের সময় এলাকায় থাকতে পারবে না। অবাধে ঘুরে বেড়াতে পারবে না।”
নির্বাচন এলেই পড়ে থাকা গ্রেফতারি পরোয়ানা কার্যকর করার নির্দেশ দেয় নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতেই এই নির্দেশ দেওয়া হয়। যাদের নামে পরোয়ানা থাকে, তাদের একাংশ কুখ্যাত দুষ্কৃতী। এদের একটা বড় অংশের বিরুদ্ধে আবার অস্ত্র আইনেও মামলা রয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরে পড়ে থাকা গ্রেফতারি পরোয়ানার সংখ্যা ঠিক কত? জেলা পুলিশের এক সূত্রে খবর, নির্বাচন ঘোষণা হওয়ার আগে সংখ্যাটা ছিল ২,৬৫৯। নির্বাচন ঘোষণার পরে নতুন করে আরও ৭৩৪টি পরোয়ানা জারি হয়েছে। এরমধ্যে এখনও পর্যন্ত কার্যকর হয়েছে ১,৮২৪টি পরোয়ানা। পড়ে রয়েছে ১,৫৬৯টি পরোয়ানা। পুলিশের হাতে ধরা না পড়লে গোড়ায় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে সমন জারি করে আদালত। সমনে সাড়া না-দিলে জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। যাদের নামে পরোয়ানা পড়ে রয়েছে, তাদের একাংশ আবার তৃণমূল কর্মী-সমর্থক বলে এলাকায় পরিচিত। ।
গ্রেফতারি পরোয়ানা কার্যকর না হওয়া প্রসঙ্গে বিজেপির এক জেলা নেতার কটাক্ষ, “যে কোনও ঘটনায় শাসক দলের নাম জড়ালেই দেখা যায়, পুলিশ নীচুতলার লোকেদের গ্রেফতার করে। দলের উপরতলার লোকেদের নিয়ে বিশেষ মাথা ঘামায় না! ফলে কয়েকজন গ্রেফতার হলেও মূল অভিযুক্ত অধরাই থেকে যায়। পুলিশ আসল অপরাধীদের আড়াল করার চেষ্টা করে।”
সিপিএমের এক জেলা নেতারও কটাক্ষ, “শাসক দলের নেতাকর্মীদের হাতে আক্রান্ত হওয়ার পরেও ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে বসে থাকাটাই এখন রীতি। সর্বত্র এই চলছে।” তৃণমূলের এক জেলা নেতার অবশ্য দাবি, “দল অপরাধীদের কোনও রকম ছাড় দেয় না। যদি কোনও নেতা অপরাধে মদত দেয়, তাকে ভুগতেই হয়। এটাই পরিবর্তন!”
বিরোধীদের আশঙ্কা, দুষ্কৃতীরা জেলের বাইরে থাকলে ভোটে অশান্তির আশঙ্কা বাড়ে। পরিসংখ্যান বলছে, শুধুমাত্র কেশপুরেই ২০১১ সালে ৫৭টি সংঘর্ষ হয়েছে। ২০১২ সালে ৬২টি, ২০১৩ সালে ২১টি, ২০১৪ সালে ২৭টি সংঘর্ষ হয়েছে। এর মধ্যে বেশির ভাগই তৃণমূলের গোষ্ঠী সংঘর্ষ। সিপিএমের জেলা সম্পাদক তরুণ রায় বলেন, “পুলিশের উচিত, পড়ে থাকা গ্রেফতারি পরোয়ানা কার্যকর করা। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশকে মান্যতা দেওয়া। তৃণমূল করলে সাত খুন মাফ, এটা তো হতে পারে না!” পড়ে থাকা জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা দ্রুত কার্যকর করা উচিত বলে মনে করেন জেলা কংগ্রেস সভাপতি বিকাশ ভুঁইয়াও। বিজেপির জেলা সভাপতি ধীমান কোলের মন্তব্য, “অভিযুক্ত তৃণমূলের লোক হলেই পুলিশ আড়াল করার চেষ্টা করে। তাহলে তো পরোয়ানা পড়ে থাকবেই! পুলিশের উচিত, দলমতের উর্ধ্বে উঠে নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করা।”
বিরোধীদের অভিযোগ অবশ্য মানতে নারাজ শাসকদল। তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায় বলেন, “পুলিশ পুলিশের কাজ করে। দল কোনও অন্যায় কাজকেই প্রশ্রয় দেয় না। কাজ নেই। তাই বিরোধীরা এ ভাবে কুৎসা-অপপ্রচার করছে। তবে এতে লাভ কিছু হবে না! মানুষ ওদের প্রত্যাখ্যান করছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy