(বাঁ দিকে) ঢাকা দেওয়া রয়েছে ভাঙা বোর্ড। (ডান দিকে) মরচে পড়া বিদ্যুতের বাক্স থেকে বেরিয়ে রয়েছে তার। ছবি: সুব্রত জানা।
হাসপাতালের বেশিরভাগ অংশই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। এসএনসিইউ, অপারেশন থিয়েটার, আইসিসিইউ, মেল মেডিসিন ওয়ার্ডের কিছুটা অংশ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। এমনকী সুপারের ঘরও তাই। শনিবার মুর্শিদাবাদ হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। তার পরেই উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল, মেল মেডিসিন ওয়ার্ডে ঢোকার মুখেই সুইচ বোর্ড থেকে তার ঝুলছে। শুধু মেল মেডিসিন ওয়ার্ড নয়। ভবনের বাইরেও দেখা গেল খোলা সুইচ বোর্ড থেকে তার ঝুলছে। অথচ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দাবি করেছেন, এগুলি বিদ্যুতের তার নয়। টেলিফোনের তার। সুপার সুদীপরঞ্জন কাঁড়ারও বলেন, ‘‘টেলিফোনের তারে কোনও ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।’’
মুর্শিদাবাদের ঘটনার কয়েক বছর আগে কলকাতার আমরি ও বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে আগুন লেগেছিল। ওই সব ঘটনার পরে নড়েচড়ে বসে স্বাস্থ্য দফতর। রাজ্যের প্রতিটি সরকারি হাসপাতালে তারা অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ঢেলে সাজতে বেশ কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেয়। যে সব ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল যথেষ্ট সংখ্যক অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র মজুত রাখতে হবে। বিদ্যুত সংযোগের ক্ষেত্রে তার খোলা রাখা যাবে না। দেওয়ালের ভিতর দিয়ে ওয়্যারিং করতে হবে। পর্যাপ্ত জলের ব্যবস্থা রাখতে হবে। দমকলের গাড়ি যাতে ঢুকতে পারে সেই ব্যবস্থাও রাখতে হবে। কিন্তু শনিবার উলুবেড়িয়া হাসপাতালে গিয়ে গেল অনেক জায়গায় তার বাইরে বেরিয়ে আছে। সেগুলি বিদ্যুতের তার নয় বলে অস্বীকার করেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আবার খোদ হাসপাতাল সুপারের ঘরেই দেখা গেল এসি মেশিনের কিছুটা অংশ খোলা। তা ঢাকা দেওয়া হয়েছে ব্ল্যাকটেপ দিয়ে। সেদিকে নজর নেই কারও।
অথচ উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, নির্দেশিকা মেনেই সব ব্যবস্থা করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানান, করিডোর এবং ওয়ার্ডগুলিতে রয়েছে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা। বিশেষ ট্যাঙ্ক তৈরি করে ৮০ হাজার গ্যালন জল ধারণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
করিডোরে ঘুরে অবশ্য দেখা গেল, পর্যাপ্ত সংখ্যক অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা আছে। তবে বেশকয়েকটি অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র পরীক্ষা করে দেখা যায়, সেগুলি কবে তৈরি হয়েছে সেই তারিখ লেখা থাকলেও, তার মেয়াদ শেষ কবে সেই তারিখ মোছা। ফলে দুর্ঘটনা ঘটলে এই সব অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র দিয়ে কাজ হবে কি না তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন রোগী পরিজনজেনার।
উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে শয্যার সংখ্যা ২৪০। তবে রোগী ভর্তি থাকেন এর প্রায় দ্বিগুন। এ ছাড়া হাসপাতাল চত্বরে থাকা বহির্বিভাগে রোগী থিক থিক করে। রোগীদের আশঙ্কা, মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মতো কোনও ঘটনা ঘটলে বিপদ এড়ানো যাবে কী ভাবে? হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অবশ্য এই আশঙ্কার কথা উড়িয়ে দিয়েছেন। সুপার বলেন, ‘‘কোথাও খোলা তার নেই। দেওয়ালের ভিতর দিয়ে ওয়্যারিং করা হয়েছে। এসি মেশিন নিয়মিত পরীক্ষা করা হয়।’’
শুধুমাত্র এসি মেশিন দেখার জন্য পূর্ত দফতরের একটি পৃথক অফিস হাসপাতালে রয়েছেন বলে তিনি জানান। হাসপাতাল সুপারের দাবি, অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রগুলির মেয়াদ রয়েছে ২০১৭ সাল পর্যন্ত। কিন্তু সেই তারিখ উল্লেখ নেই কেন? উত্তরে সুপার বলেন, ‘‘আমরি কাণ্ডের পরে স্বাস্থ্য দফতর এবং দমকলের বিধি মেনে সব কিছু করা হয়েছে। পরিস্থিতি তেমন হলে সামলানো যাবে বলে আশা করি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy