ওসি সুমন দাস।
একটি ওয়াকফ সম্পত্তি কারা দেখভাল করবেন তা নিয়ে শুক্রবার সংঘর্ষে জড়িয়েছিল হাওড়ার শ্যামপুরের বাড়গড়চুমুক গ্রামের একই পরিবারের দু’পক্ষ। রাতে অভিযুক্তদের ধরতে গিয়ে আক্রান্ত হলেন শ্যামপুর থানার ওসি সুমন দাস এবং সাব-ইনস্পেক্টর তরুণ পুরকায়স্থ। তাঁদের হেলমেট খুলে বাঁশ ও ভারী কিছু দিয়ে বেধড়ক মারধর করে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়। এর পরে গ্রেফতার হওয়া তিন জনকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় হামলাকারীরা।
সুমনবাবুকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় কলকাতার এবং তরুণবাবুকে উলুবেড়িয়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গত বছরও একই গোলমালে অভিযুক্তদের ধরতে গিয়ে নিগৃহীত হয়েছিল পুলিশ। এ বার অবশ্য হামলায় মূল অভিযুক্ত উলুবেড়িয়া আদালতের আইনজীবী মতিয়র রহমান মুন্সি-সহ সাত জনকে পুলিশ গ্রেফতার করে। আটক করা হয়েছে ১০ জনকে।
পুলিশের দাবি, তাদের ঠেকাতে রীতিমতো পরিকল্পনা করেছিল মতিয়র। হাওড়া (গ্রামীণ) জেলা পুলিশ সুপার গৌরব শর্মা জানান, ধৃতদের জেরা করে বাকি হামলাকারীদের ধরার চেষ্টা চলছে। গ্রামেও অভিযান চলবে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বাড়গড়চুমুকে একটি ৪০ বিঘার ওয়াকফ সম্পত্তি রয়েছে। তার ‘মাতওয়াল্লি’ (ওয়াকফ সম্পত্তি দেখভালের জন্য ওয়াকফ বোর্ড যাঁদের নির্বাচন করে) হওয়া নিয়ে মুন্সি পরিবারের দু’পক্ষের দীর্ঘদিনের বিবাদ। এক পক্ষের নেতৃত্বে মুন্সি মতিয়র রহমান। অন্য পক্ষের হানিফ মুন্সি। বর্তমানে মতিয়রদের হাতে ‘মাতওয়াল্লি’র দায়িত্ব দেয় ওয়াকফ বোর্ড। সেই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেছেন হানিফরা। এ নিয়ে দু’পক্ষ প্রায়ই বচসা, মারামারিতে জড়ায়।
এখানেই মাথায় চপার দিয়ে আঘাত করা হয় সুমনবাবুকে।
শুক্রবার সকালে মতিয়রের পরিজনেরা হানিফকে মারধর করে তাঁদের বাড়িতে ভাঙচুর ও মহিলাদের শ্লীলতাহানি করেন বলে অভিযোগ। মতিয়র-সহ ২০ জনের বিরুদ্ধে দুপুরে থানায় অভিযোগ জানান হানিফ। অভিযুক্তদের ধরতে রাতে গ্রামে ঢোকেন সুমনবাবু। সঙ্গে ছিলেন জনা চল্লিশ পুলিশকর্মী, জনা দুয়েক সিভিক ভলান্টিয়ার এবং পিসি পার্টির তিন সদস্য। ঘটনাচক্রে, এ দিনই শ্যামপুর থানার ওসি-র দায়িত্ব শেষ হয় সুমনবাবুর। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মতো শনিবার তাঁর জেলা গোয়েন্দা বিভাগে যোগ দেওয়ার কথা ছিল।
পুলিশ ও কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, অভিযুক্তেরা গ্রামে ছড়িয়ে থাকায় সুমনবাবুরা দু’টি দলে ভাগ হয়ে ঢোকেন। সুমনবাবুর সঙ্গে ছিলেন তরুণবাবু, সিভিক ভলান্টিয়ার এবং পিসি পার্টি। তাঁরা তিন অভিযুক্তকে ধরেন। ধৃতদের নিয়ে সুমনবাবুরা মতিয়রের বাড়ির সামনে যেতেই ভিতর থেকে তাঁদের লক্ষ করে বোমা ছোড়া হয়। শুরু হয় ইটবৃষ্টিও। বাড়ির দরজা খুলে ৩০ জন মহিলা-পুরুষ বাঁশ এবং ইট হাতে বেরিয়ে আসে। হামলাকারীরা সুমনবাবুদের ধরে তাঁদের হেলমেট খুলে পুকুরে ফেলে শুরু করে মার। সুমনবাবু এবং তরুণবাবু অজ্ঞান হয়ে যান। তখন শূন্যে গুলির শব্দ শোনা যায়। পুলিশের অনুমান, পিসি পার্টির কেউ হামলাকারীদের ঠেকাতে গুলি চালিয়ে থাকতে পারেন।
পিসি পার্টির চিৎকারেই বাহিনীর বাকি সদস্যেরা ছুটে আসেন। তত ক্ষণে হামলাকারীরা ধৃত তিন জনকে ছাড়িয়ে হানিফের দলের এক জনের বাড়িতে হামলা চালায়। পরে ছিনতাই হওয়া এক জনকে পুলিশ ধরে। রাতে আরও পুলিশ বাহিনী এবং বম্ব স্কোয়াড গ্রামে যায়। আসেন হাওড়ার পুলিশ কমিশনার দেবেন্দ্রপ্রসাদ সিংহ এবং হাওড়া (গ্রামীণ) জেলা পুলিশ সুপার।
শনিবার গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ঘটনাস্থলে তখনও রক্তের দাগ। পড়ে রয়েছে হেলমেটের ভাঙা অংশ। গ্রাম পুরুষশূন্য। মহিলার থাকলেও কেউ কথা বলতে রাজি হননি।
গ্রামবাসী এবং নিচুতলার পুলিশকর্মীদের একাংশ মানছেন, আগেরবার কেউ গ্রেফতার না হওয়ায় হামলাকারীরা এতটা আক্রমণাত্মক হয়েছে। ভেবেছিল এ বারও পার পেয়ে যাবে। যদিও পুলিশকর্তাদের দাবি, আগের বারের অভিযুক্তেরা পলাতক।
ছবি: সুব্রত জানা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy