দূষিত: শ্রীরামপুরের গঙ্গার পাড়ের হাল এমনই। নিজস্ব চিত্র
ন’মাসে ক’টি নিকাশি শোধনকেন্দ্র গড়া সম্ভব, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কিন্তু হুগলি শিল্পাঞ্চলে গঙ্গা দূষণ রোধে ওই শোধনকেন্দ্র তৈরিতেই জোর দিচ্ছে পুরসভাগুলি।
হুগলিতে উত্তরপাড়া থেকে বাঁশবেড়িয়া পর্যন্ত ১০টি পুরসভা রয়েছে গঙ্গার পাড়ে। তার পরে গুপ্তিপাড়া পর্যন্ত রয়েছে বেশ কিছু পঞ্চায়েত। সব জায়গাতেই কমবেশি নিকাশি নালার নোংরা জল মেশে গঙ্গায়। শুধু চুঁচুড়া পুরসভার এমন ৪২টি নালা রয়েছে। তা ছাড়াও নানা ভাবে গঙ্গাদূষণ অব্যাহত। শনিবার, মহালয়ার সকালেই গুপ্তিপাড়ায় নৌকায় আলকাতরা লাগানোর কাজ চলছিল গঙ্গাতেই। দেখা গেল, নৌকোর গা বেয়ে সেই আলকাতরা পড়ছে গঙ্গার জলে। শ্রীরামপুর কলেজ সংলগ্ন গঙ্গার ঘাটে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ, ফুল-বেলপাতা, থার্মোকলের বাটি— কী নেই! শেওড়াফুলি হাট লাগোয়া গঙ্গাপাড়ের অবস্থাও শোচনীয়। চাঁপদানি, ভদ্রেশ্বর, চন্দননগর, চুঁচুড়া, বাঁশবেড়িয়া, উত্তরপাড়া, কোন্নগর, রিষড়া— সর্বত্রই কমবেশি চোখে পড়ে গঙ্গার উপরে ‘অত্যাচারের’ ছবি।
এই ছবিটাই পাল্টাতে চাইছে জাতীয় পরিবেশ আদালত। আগামী বছরের জুলাই মাসের আগে নিকাশি নালার নোংরা জল গঙ্গায় পড়া ঠেকাতে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে নালাপিছু প্রতি মাসে ১০ লক্ষ টাকা পুরসভাগুলিকে জরিমানা গুনতে হবে বলে রায় দিয়েছে ওই আদালত।
নগরোন্নয়ন দফতরের একাধিক আধিকারিক মানছেন, নিকাশি শোধনকেন্দ্র করতে অনেক সময় লাগে। সে সময় আর নেই। কিন্তু হুগলির ওই পুরসভাগুলির কর্তারা সেই কেন্দ্র গড়ার উপরেই জোর দিচ্ছেন। চুঁচুড়ার পুরপ্রধান গৌরীকান্ত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যানে গোটা ব্যবস্থা ঢেলে সাজার কথা ভাবছি। নোংরা জল শোধনের জন্য দু’টি জায়গা চিহ্নিত করে কেএমডিএ-র কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছি।’’ শ্রীরামপুরের পুরপ্রধান অমিয় মুখোপাধ্যায় এবং বৈদ্যবাটীর পুরপ্রধান অরিন্দম গুঁইনও জানিয়েছেন, নিকাশি নালার জল গঙ্গায় ফেলা বন্ধ অথবা শোধন করে ফেলা নিয়ে পরিকল্পনা চলছে।
গঙ্গা দূষণ রোধের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন করছেন পরিবেশবিদ বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়। চন্দননগরের বাসিন্দা বিশ্বজিৎবাবু বলেন, ‘‘গঙ্গা বাঁচাতে জাতীয় পরিবেশ আদালতের এমন নির্দেশ ভীষণ জরুরি।’’ তাঁর বক্তব্য, উত্তরপাড়া থেকে বাঁশবেড়িয়া পর্যন্ত ছোটবড় মিলিয়ে আড়াইশোরও বেশি নালা গঙ্গায় মিশেছে। প্লাস্টিক, থার্মোকল অবলীলায় গঙ্গায় পড়ছে।’’
নদী বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্বকর্মা থেকে সরস্বতী পুজো পর্যন্ত বিভিন্ন উৎসবে প্রতিমা ভাসান হয় গঙ্গায়। তাতেও দূষণের মাত্রা বাড়ে। তাঁদের অভিযোগ, দূষণের ফলে গঙ্গার জীববৈচিত্র্য মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অনেক প্রজাতির মাছ হারিয়ে যাচ্ছে।
বাঁশবেড়িয়ায় গঙ্গা পাড়ে দীর্ঘদিন ধরে ডাঁই হয়ে থাকা আবর্জনা এখনও সরেনি। পুরসভার চেয়ারম্যান-ইন-কাউন্সিল (নিকাশি ও জনস্বাস্থ্য) অমিত ঘোষের দাবি, শহরে ১৮টি গঙ্গামুখী নালা রয়েছে। ত্রিবেণীতে একটি জল শোধন প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। সেটি চালুর অপেক্ষায়। অন্য একটি প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও মামলার কারণে আটকে রয়েছে। গঙ্গার পাড়ে আবর্জনা ফেলা মাস দুয়েক বন্ধ।
ভদ্রেশ্বরের পুরপ্রধান প্রলয় চক্রবর্তী এবং উত্তরপাড়ার দিলীপ যাদবের দাবি, তাঁদের শহরে গঙ্গামুখী নিকাশি নালার সংখ্যা কম। সেগুলির মধ্যেও অধিকাংশ নালার অভিমুখ পরিবর্তন করে দেওয়া গিয়েছে। এর পরেও সমস্যা থাকলে তা খতিয়ে দেখে সেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুরপ্রধানদের অনেকেই জানান, গঙ্গায় প্লাস্টিক-থার্মোকল প্রভৃতি পড়া আটকাতে নালার মুখে লোহার জাল লাগানো হয়েছে। তবু সময়সীমার মধ্যে নালার জল শোধনের ব্যবস্থা পুরোপুরি কার্যকর করা যাবে কিনা, সে প্রশ্ন থাকছেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy