Advertisement
১১ মে ২০২৪

প্রতিশোধ নিতেই খুন আবাসনের রক্ষীকে, ধৃত চার

প্রোমোটিং সংক্রান্ত পুরনো বিবাদ তো ছিলই। তার থেকেও বড় ছিল ‘প্রতিশোধ’। আর সেই জন্যই হাওড়ার রাউন্ড ট্যাঙ্ক রোডের আবাসনের রক্ষী বিজয় মল্লিককে গুলি করে খুন করেছে স্থানীয় কয়েক জন দুষ্কৃতী। ঘটনার তদন্তে নেমে চার জনকে গ্রেফতারের পরে এমনই দাবি পুলিশের।

মূল অভিযুক্ত প্রহ্লাদ সিংহ। — নিজস্ব চিত্র

মূল অভিযুক্ত প্রহ্লাদ সিংহ। — নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০১৬ ০৭:৫৯
Share: Save:

প্রোমোটিং সংক্রান্ত পুরনো বিবাদ তো ছিলই। তার থেকেও বড় ছিল ‘প্রতিশোধ’। আর সেই জন্যই হাওড়ার রাউন্ড ট্যাঙ্ক রোডের আবাসনের রক্ষী বিজয় মল্লিককে গুলি করে খুন করেছে স্থানীয় কয়েক জন দুষ্কৃতী। ঘটনার তদন্তে নেমে চার জনকে গ্রেফতারের পরে এমনই দাবি পুলিশের।

পুলিশ জানিয়েছে, শুক্রবার রাত ৮টা নাগাদ রাউন্ড ট্যাঙ্ক রোডের শান্তিনিকেতন আবাসনের গেটে অন্য দিনের মতো পাহারা দিচ্ছিলেন বিজয়বাবু। সিসিটিভি-র ফুটেজ দেখে পুলিশ জানতে পারে, সেই সময়ে তাঁর পিছনে এসে কিছু সময়ের জন্য দাঁড়িয়ে ছিল এক যুবক। ফোনে কথা বলতে বলতে আচমকাই সে বিজয়ের পিঠে গুলি চালিয়ে চম্পট দেয়। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের মনে হয়েছিল ওই আবাসনে থাকা কোনও বাসিন্দাকে মারতে এসেই রক্ষীকে গুলি করে চম্পট দিয়েছে দুষ্কৃতীরা। কিন্তু শনিবার রাতে চার দুষ্কৃতীকে গ্রেফতারের পরেই পুলিশের সামনে প্রকৃত কারণ স্পষ্ট হয়ে যায়।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃতদের নাম দিলীপ সাউ, সোমনাথ দাস, প্রহ্লাদ সিংহ ও বিক্রম মণ্ডল। দিলীপ, সোমনাথ ও প্রহ্লাদ গঙ্গাধর মুখার্জি রোডের এবং বিক্রম কালীবাবু বাজার এলাকার বাসিন্দা। হাওড়া সিটি পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান সুমিত কুমার বলেন, ‘‘২৪ ঘণ্টার মধ্যেই খুনের কিনারা করা সম্ভব হয়েছে। ধৃতদের জেরা করে খুনের কারণও স্পষ্ট। তাতেই জানা গিয়েছে প্রোমোটিংয়ের বিবাদের জেরেই প্রতিশোধ নিতেই খুন করা হয়েছে বিজয়বাবুকে।’’

পুলিশের দাবি, ধৃতদের জেরায় জানা গিয়েছে, হাওড়ার গঙ্গাধর মুখার্জি রোডে বিজয়বাবুর সাড়ে তিন কাঠা জমি রয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরেই সেখানে প্রোমোটিং করার জন্য বিজয়বাবুকে জমিটি দিতে চাপ দিচ্ছিলেন প্রোমোটার দিলীপ। কিন্তু বিজয়বাবু কোনও মতেই রাজি হচ্ছিলেন না। তা নিয়েই দু’জনের মধ্যে বিবাদ শুরু হয়েছিল। এর মধ্যেই এলাকার আর এক প্রোমোটারকে জমিটি দিয়ে দিয়েছিলেন বিজয়বাবু। তাতেই আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে দিলীপ। পুলিশের দাবি, এই ঘটনায় উঠে এসেছে হাওড়া পুরসভার তৃণমূলের এক মহিলা কাউন্সিলরের আইনজীবী স্বামীর জড়িত থাকার কথাও। সুমিতবাবু বলেন, ‘‘ধৃতদের জেরা করে যা জানা গিয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কাউন্সিলরের স্বামীর বিষয়ে সরাসরি কোনও প্রমাণ মেলেনি। তবে কয়েক জনের উপর নজর রাখা হচ্ছে।’’

পুলিশের দাবি, ধৃতেরা জেরায় জানিয়েছে, এলাকার অন্য এক প্রোমোটারকে জমিটি দিয়ে দেওয়াতে অপমান বোধ করেছিল দিলীপ। তাই জমি না পেয়ে সে বিজয়বাবুর কাছ থেকে মোটা টাকা দাবি করেছিল। কিন্তু তা-ও দিতে রাজি হননি ওই প্রৌঢ়। এর পরেই প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য বিজয়বাবুকে খুনের পরিকল্পনা করে দিলীপ। পরিকল্পনা মতো শুক্রবার রাতে ‘অপারেশন’ চালায় প্রহ্লাদ। সে-ই গুলি চালিয়েছিল বলে জেরায় পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে। এই কাজের জন্য রিভলভার জোগাড় করা, পরিকল্পনা করা এবং খুনের সময়ে উপস্থিত ছিল সোমনাথ এবং বিক্রম।

পুলিশ আরও জানিয়েছে, সিসিটিভি-তে যে যুবককে গুলি চালাতে দেখা যাচ্ছে তার চেহারার সঙ্গে প্রহ্লাদের চেহারা মেলানো হচ্ছে। ধৃতদের রবিবার হাওড়া আদালতে তোলা হলে বিচারক ১০ দিনের পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Revenge Housing guard killed
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE