Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Education

মাধ্যমিকে সিংহভাগ কৃতী গ্রামেরই বাসিন্দা

মেধা তালিকায় থাকা রাজ্যের ৮৪ জন কৃতী মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর মধ্যে রয়েছে হাওড়া ও হুগলির ১০ জন। তাদের মধ্যে আবার দুই জেলার গ্রামাঞ্চলের পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছয়।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০২০ ০২:৫৫
Share: Save:

মাধ্যমিকের মেধা তালিকায় দাপট দেখাল গ্রাম। ছাপিয়ে গেল শহরকে।

মেধা তালিকায় থাকা রাজ্যের ৮৪ জন কৃতী মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর মধ্যে রয়েছে হাওড়া ও হুগলির ১০ জন। তাদের মধ্যে আবার দুই জেলার গ্রামাঞ্চলের পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছয়। বাকিরা শহরাঞ্চলের স্কুলের পড়ুয়া।

এ বার মেধা তালিকায় ঠাঁই হয়েছে হুগলির নয় এবং হাওড়ার এক পরীক্ষার্থীর। তাদের মধ্যে আবার চার জন আরামবাগ মহকুমার বাসিন্দা। ৬৮৭ পেয়ে মেধা তালিকায় ষষ্ঠ স্থান দখল করেছে চন্দননগরের বাসিন্দা কানাইলাল বিদ্যামন্দিরের (ইংরেজি বিভাগ) ছাত্র সোহম দাস। তার প্রিয় বিষয় গণিত। সোহমের বক্তব্য, ‘‘ভাল ফলের জন্য বাবা-মার অবদান তো আছেই, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অবদানও কম নয়।’’ তার বাবা সন্তোষ দাস বলেন, ‘‘খাওয়া-দাওয়া আর পড়াশুনা নিয়েই ব্যস্ত থাকে ছেলে। চাইব, ভাল করে পড়াশোনা শিখে ও মানুষের মতো মানুষ হোক।’’

হাওড়া গ্রামীণ এলাকায় খড়িয়া ময়নাপুর হাইস্কুলের সৌহার্দ্য পাত্র ৬৮৭ পেয়ে মেধা তালিকায় ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে। বরাবরই ক্লাসে প্রথম হত সৌহার্দ্য। বড় হয়ে সে বিজ্ঞানী হতে চায়। সৌহার্দ্যর বাবা স্নেহময় পাত্র এবং মা পম্পা পাত্র স্কুলে পড়ান। স্নেহময়বাবু বলেন, ‘‘সকাল থেকেই টেলিভিশনের সামনে বসেছিলাম। ছেলের নাম শুনে আনন্দে লাফিয়ে উঠেছি। ছেলেকে গিয়ে জড়িয়ে ধরেছিলাম।’’ মা বলেন, ‘‘রেজাল্ট নিয়ে টেনশন হচ্ছিল। তাই টেলিভিশনের সামনে যাইনি।’’ সৌহার্দ্যর স্কুলের প্রধান শিক্ষক তারাপদ হাজরা বলেন, ‘‘আমরা গর্বিত ওর জন্য।’’

৬৮৬ পেয়ে মেধা তালিকায় সপ্তম স্থানে রয়েছে চন্দননগর কৃষ্ণভাবিনী নারী শিক্ষামন্দিরের ছাত্রী সুহা ঘোষ। তার পছন্দের বিষয় জ্যোতির্বিজ্ঞান। পড়াশোনার ফাঁকে গল্পের বই পড়া অথবা কাগজ কেটে নানা জিনিস তৈরি করতে ভালবাসে সুহা। তার কথায়, ‘‘ভাল ফল হবে জানতাম। কিন্তু

সপ্তম স্থান দখল করতে পারব, তা ভাবি নি।’’ সুহাকে তার বাবা সরকারি কর্মচারী সুকান্ত ঘোষের পরামর্শ: ‘‘ভাল ফল করে হাল ছাড়লে হবে না। আগামী দিনে আরও কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।’’

মেধা তালিকায় সপ্তম স্থানে রয়েছে গোঘাটের বদনগঞ্জ শ্রীশ্রী সারদামণি হাইস্কুলের ছাত্রী সম্প্রীতি কুণ্ডু এবং আরামবাগের গৌরহাটি হরদাস ইনস্টিটিউশনের ছাত্র দিব্যকান্তি ঘোড়ুই। কবিতা লিখতে ভালবাসে গোঘাটের কৃষ্ণগঞ্জের বাসিন্দা সম্প্রীতি। ‘‘সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা দিয়ে আমলা হওয়া আমার লক্ষ্য,” বলছে ওই ছাত্রী। সম্প্রীতির স্কুলের গণিতের শিক্ষিকা বর্ণালী রায় বলেন, “সম্প্রীতির বহুমুখী প্রতিভা রয়েছে। ক্লাসে বরাবর প্রথম হয়। আবৃত্তি, ছবি আঁকা, সবেতেই নজর কাড়ে।’’ দিব্যকান্তি বলে, “আমি কম্পিউটর সায়েন্স, কিংবা পদার্থবিদ্যা নিয়ে পড়ার কথা ভেবেছি।” তার বাবা প্রণবকুমার ঘোড়ুই ছেলের স্কুলেরই ইংরেজির শিক্ষক। গৌরহাটি হরদাস ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক সুব্রত কোঙার বলেন, “পড়াশোনাই প্রাণ দিব্যকান্তি। নিশ্চিত ছিলাম, ও ভাল রেজাল্ট করবে।’’

পুরশুড়ার দেউলপাড়া ভূদারিনাথ উচ্চ বিদ্যালয়ের সুপ্রতীক পন্ডিত ৬৮৫ নম্বর পেয়ে মেধা তালিকায় অষ্টম স্থানে রয়েছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক আজিজুল মল্লিক বলেন, “এই প্রথম আমাদের স্কুল থেকে মাধ্যমিকে কেউ প্রথম দশের এর মধ্যে স্থান পেল। দিনটা আমাদের কাছে বিশেষ গৌরবের। অঙ্কে বরাবর ১০০ পাওয়া সুপ্রতীক ভাল রেজাল্ট করবে জানতাম। কিন্তু এতটা আশা করিনি।” গোঘাটের ভগবতী গার্লস স্কুলের তৃষা সরকার ৬৮৩ নম্বর পেয়ে মেধা তালিকায় দশম স্থানে রয়েছে। তার স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা তৈয়েবুন্নেশা বেগম বলেন, “আমাদের স্কুল থেকে বরাবর রেজাল্ট ভাল হলেও মেধা তালিকায় স্থান এই প্রথম। তৃষাকে নিয়ে আমরা গর্বিত। গর্বিত সহকর্মীদের নিয়েও। কারণ, আমরা ভাল ছাত্রী পাই না। ছাত্রীদের তৈরি করি। তৃষা বলেছে, “সায়েন্স নিয়ে পড়ে উচ্চমাধ্যমিকেও ভাল ফল করা আমার লক্ষ্য।”

মেধা তালিকায় দশম স্থানে থাকা পোলবা ব্লকের ভৌরবপুর গ্রামের অদ্বিতীয়া পান্ডে পান্ডুয়া ব্লকের মহানাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী। তার প্রাপ্ত নম্বর ৬৮৩। অদ্বিতীয়ার বাবা অলকেশ পান্ডে চুঁচুড়া আদালতের সরকারি আইনজীবী। অদ্বিতীয়া চিকিৎসক হয়ে গ্রামে যেতে চায়। মেধা তালিকায় দশম স্থানে রয়েছে উত্তরপাড়ার চিলড্রেন ওন হোম স্কুলের সাগ্নিক মুখোপাধ্যায় এবং উত্তরপাড়া মডেল হাইস্কুলের মেঘা মণ্ডল। দু’জনেরই প্রাপ্ত নম্বর ৬৮৩। ক্রিকেটে বিশেষ আগ্রহ রয়েছে বেলুড়ের সাঁপুইপাড়ার বাসিন্দা সাগ্নিকের। পদার্থবিদ্যা নিয়ে উচ্চশিক্ষায় যেতে আগ্রহী সে। মেঘার আক্ষেপ, ‘‘বাংলায় কয়েকটা নম্বর বাড়লে আরও উপরের দিকে নাম থাকত।’’ উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে চায় মেঘা। স্বপ্ন ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার।

উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফল সম্পর্কিত যাবতীয় আপডেট পেতে রেজিস্টার করুন এখানে |

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Education
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE