Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

সম্পত্তি দেননি বাবা, দেহ নিতে অস্বীকার ছেলের

তারকেশ্বরের কেশবচক পঞ্চায়েতের কেটেরা গ্রামের বাসিন্দা হারাধনবাবুর ‘অপরাধ’, তিনি ছেলেমেয়েদের সম্পত্তি লিখে দেননি।

অন্তিম:  পুলিশি হস্তক্ষেপে তারকেশ্বর গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে হারাধনবাবুর মৃতদেহ নিয়ে যাচ্ছেন বড় ছেলে। নিজস্ব চিত্র

অন্তিম: পুলিশি হস্তক্ষেপে তারকেশ্বর গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে হারাধনবাবুর মৃতদেহ নিয়ে যাচ্ছেন বড় ছেলে। নিজস্ব চিত্র

দীপঙ্কর দে
তারকেশ্বর শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০২০ ০৩:৫৪
Share: Save:

তিনি তিন ছেলেমেয়ের বাবা। বড় ছেলে পাঁচ মাস আগে তাঁকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন বলে অভিযোগ। তারপর থেকে তিনি রাস্তায় রাস্তায় ঘুরেছেন। বাকি দুই সন্তানের কাছেও আশ্রয় পাননি। তিনি দু’মাস ধরে হাসপাতালে ছিলেন। তিন জনের কেউ তাঁকে দেখতে আসেননি।

মঙ্গলবার সকালে তারকেশ্বর গ্রামীণ হাসপাতালে মারা গেলেন হারাধন কোটাল (৭০) নামে ওই বৃদ্ধ। কেউ তাঁর মৃতদেহ নিতে এলেন না প্রথমে। শেষমেশ পুলিশ গিয়ে বড় ছেলে অরুণকে বাবার দেহ নিতে এক রকম বাধ্য করল। তারকেশ্বরের কেশবচক পঞ্চায়েতের কেটেরা গ্রামের বাসিন্দা হারাধনবাবুর ‘অপরাধ’, তিনি ছেলেমেয়েদের সম্পত্তি লিখে দেননি। সম্পত্তি বিক্রির টাকার ভাগও দেননি।

এ দিন মুখাগ্নির আগে তাই বৃদ্ধের বড় ছেলে অনায়াসে বলেন, ‘‘বাবা জমি-বাড়ি সব বিক্রি করে টাকা নয়ছয় করেছে। আমাকে কিছুই দেয়নি। ভাইকে দিয়েছে কিনা বলতে পারব না। আমার মেয়ের বিয়ের সময় বাবার থেকে টাকা চেয়েছিলাম। দেয়নি। রাগ হবে না কেন?’’ এ কথা শুনে গ্রামবাসীরা অবাক হচ্ছেন না। তাঁদের অভিযোগ, ছেলেরা দীর্ঘদিন ধরেই হারাধনবাবুর দেখভাল করতেন না। বাবার সম্পত্তিতে ওঁদের লোভ ছিল। তা না-পাওয়ায় অমানবিক আচরণ করতে ওঁরা দ্বিধা করেননি। বাবার মৃত্যুতেও ওঁদের রাগ যায়নি।

হারাধনবাবু খেতমজুরি করতেন। তাঁর দু’টি বিয়ে। প্রথম পক্ষের স্ত্রী মারা গিয়েছেন। অরুণ তাঁর প্রথম পক্ষের সন্তান। ওই গ্রামেই তাঁর আলাদা বাড়ি রয়েছে। দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী মায়ারানি এবং ছেলে শ্রীমন্তও ওই গ্রামে থাকেন। দ্বিতীয় পক্ষের এক মেয়েও রয়েছে হারাধনবাবুর। মেয়ে অবশ্য বিবাহিত। তিনি হাওড়ায় থাকেন। হারাধনবাবুর এক কাঠা জমি এবং দু’কামরার একটি বাড়ি ছিল। বছর দুয়েক আগে তিনি সে সব বিক্রি করে দিয়ে বড় ছেলের কাছে গিয়ে ওঠেন। তারপর থেকেই ওই পরিবারে অশান্তি শুরু বলে গ্রামবাসীদের দাবি।

দু'মাস আগে রাস্তায় পড়ে গিয়ে কোমরে চোট পান বৃদ্ধ। গ্রামবাসীরাই তাঁকে তারকেশ্বর গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করেন। তাঁরাই তাঁকে দেখতে যেতেন। তাঁদের দাবি, এই দু’মাসে একবারের জন্যেও কোনও ছেলেমেয়ে হারাধনবাবুকে দেখতে যাননি। একই বক্তব্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষেরও। দীর্ঘক্ষণ পরিবারের কেউ না-আসায় হাসপাতালে তরফে বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়।

সুজিত বাগ নামে এক গ্রামবাসী বলেন, ‘‘হারাধনবাবুর জন্য কষ্ট হয়। বড় ছেলে তাড়িয়ে দেওয়ার পরে দোকানে, গ্রামবাসীর বাড়ির দাওয়ায় বা ক্লাবে রাত কাটাতেন। আমরাই খেতে দিতাম। অনেক বার ওঁকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য ওঁর দুই ছেলেকে বলেছি। ওঁরা রাজি হননি। বাবা কি শুধু সম্পত্তির জন্য?’’

বড় ছেলের আচরণে এ দিন তারকেশ্বর থানার পুলিশকর্মীরাও অবাক। তাঁদের কেউ কেউ বলেন, ‘‘বাবার মৃত্যুর পরেও কেউ সম্পত্তির জন্য রাগ পুষে রাখতে পারে, ভাবা যায় না।’’ এ দিন শ্রীমন্ত বা তাঁর মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তাঁদের বাড়ি ছিল তালাবন্ধ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ancestral Property Fathe Son
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE