Advertisement
১১ মে ২০২৪

প্রধান শিক্ষিকার অপসারণে রাস্তা অবরোধ ছাত্রীদের এ বার অজুহাত গাছ কাটার

মঙ্গলবার সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা ক্লাস বয়কট করে স্কুলের সামনের রাস্তা অবরোধ করে। তাদের দাবি স্কুলে কাটা গাছের হিসেব দিতে হবে এবং প্রধান শিক্ষিকা কাবেরী সরকারকে স্কুল থেকে অপসারণ করতে হবে।

বিশ্ৃঙ্খলা: পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে বিডিও। নিজস্ব চিত্র

বিশ্ৃঙ্খলা: পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে বিডিও। নিজস্ব চিত্র

সুশান্ত সরকার
পান্ডুয়া শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০১৯ ০১:৪৫
Share: Save:

স্কুলের কাটা গাছের হিসেব চেয়ে সোমবার প্রায় পাঁচ ঘণ্টা প্রধান শিক্ষিকাকে ঘেরাও করে রেখেছিল ছাত্রীরা। আর মঙ্গলবার সকালে গাছ কাটার হিসেব চেয়ে ও প্রধান শিক্ষিকার অপসারণের দাবিতে ক্লাস বয়কট করে প্রায় ছ’ঘণ্টা রাস্তা অবরোধ করল পড়ুয়ারা। পান্ডুয়ার রাধারানি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের ঘটনা।

মঙ্গলবার সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা ক্লাস বয়কট করে স্কুলের সামনের রাস্তা অবরোধ করে। তাদের দাবি স্কুলে কাটা গাছের হিসেব দিতে হবে এবং প্রধান শিক্ষিকা কাবেরী সরকারকে স্কুল থেকে অপসারণ করতে হবে। অবরোধ চলার তিন ঘণ্টা পর পান্ডুয়ার বিডিও স্বাতী চক্রবর্তী ঘটনাস্থলে আসেন। তিনি বিষয়টি নিয়ে স্কুল ছাত্রী এবং শিক্ষিকাদের সঙ্গে আলোচনা করে ছাত্রীদের অবরোধ তুলে নিতে বলেন। তারপরেও অবরোধ ওঠেনি। পরিস্থিতি সামাল দিতে পান্ডুয়া থানার অফিসার ইনচার্জ সুব্রত দাস ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। স্কুলের এক শিক্ষিকা জয়ন্তী মল্লিক বলেন, ‘‘ছাত্রীরা গতকালই প্রধান শিক্ষিকার কাছে স্কুলের গাছ কাটা নিয়ে প্রশ্ন করেছিল। কিন্তু তার কোনও সদুত্তর ছাত্রীরা পায়নি। এদিকে আজ প্রধান শিক্ষিকা স্কুলে আসেননি। কিন্তু গাছ কাটার বিষয়ে ওঁকে জবাব

দিতেই হবে।’’

কয়েক মাস আগে প্রধান শিক্ষিকা স্কুলে হাজিরার জন্য বায়োমেট্রিক মেশিন বসান। তারপর থেকেই প্রধান শিক্ষিকার সঙ্গে অন্য শিক্ষিকাদের মতবিরোধ চলছে। সমাধান সূত্রের জন্য পরিচালন কমিটি বৈঠক ডাকলেও সেখানে হাজির হননি অন্যান্য শিক্ষিকারা। তাঁরা জানিয়েছিলেন, জরুরি কাজ থাকায় তাঁরা উপস্থিত থাকতে পারেননি।

স্কুলের এক অভিভাবক বলেন, স্কুলে ঘেরাও, অবরোধ লেগেই আছে। এর আগেও মিড-ডে মিলে এক ঘণ্টা দেরি হওয়ায় প্রধান শিক্ষিকাকে ঘেরাও করে ছাত্রীরা। এতে বিদ্যালয়ের সুনাম নষ্ট হচ্ছে। প্রধান শিক্ষিকার সঙ্গে বাকি শিক্ষিকাদের ঝামেলার মধ্যে কিছু না বুঝেই ছাত্রীরা জড়িয়ে যাচ্ছে। শিক্ষিকাদের মদত ছাড়া এটা সম্ভব নয়।’’

স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা কাবেরী সরকার বলেন, ‘‘নিরাপত্তার অভাবের জন্য আমি স্কুলে আসছি না। পুলিশ প্রশাসন এবং শিক্ষাদফতর আমাকে নিরাপত্তা দিলে আমি স্কুলে আসব।’’ গাছ কাটা নিয়ে ছাত্রীদের করা অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘‘গাছ কাটার বিষয়ে আমি কিছু জানি না। কোনও গাছ বিক্রি হয়নি। আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে।’’

ওই বিদ্যালয়ের পরিচালন কমিটির সভাপতি অসিত চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘স্কুল চলাকালীন শিক্ষিকাদের সামনে ছাত্রীরা কীভাবে বাইরে বেরিয়ে অবরোধ করল? এতে তো ছাত্রীদের নিরাপত্তার প্রশ্নও জড়িত। বহু অভিভাবকরা বিষয়টি নিয়ে আমাকে প্রশ্ন করেছেন।’’ তিনি আরও জানান, অবরোধের কারণে আজ স্কুলে কোনও পঠনপাঠন হয়নি। অথচ হাজিরা খাতায় শিক্ষিকাদের উপস্থিতি রয়েছে।

অবরোধের বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ অভিভাবকদের একাংশ। তাঁদের অনেকেই প্রশ্ন তোলেন, বিদ্যালয়ে শিক্ষিকারা থাকা সত্ত্বেও ছাত্রীরা কীভাবে বাইরে এসে আন্দোলন করে, তা নিয়ে কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

পান্ডুয়া পঞ্চায়েত সমিতির শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ তথা শিক্ষা সংগঠনের তৃণমূল নেতা সঞ্জীব ঘোষ বলেন, ‘‘শিক্ষিকাদের উচিত ছিল ছাত্রীদের বোঝানো। শিক্ষিকারা স্রেফ স্টাফরুমে বসে সময় কাটালেন। অনেক ছাত্রীই আন্দোলনে সামিল হয়নি। তাদেরও ক্লাস নেওয়া হয়নি। গোটা দিনটা বিনা পঠনপাঠনেই কাটল।’’

হুগলি জেলা স্কুল পরিদর্শক লক্ষ্মী ধর দাস বলেন, ‘‘আমি সদ্য হুগলি জেলায় কাজে যোগদান করেছি। বিদ্যালয়ের অবরোধের ঘটনাটি শুনেছি। এটা মেনে নেওয়া যায় না। দ্রুত সমাধান করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Pandua Radharani Girls High School
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE