Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

সন্ত্রাসের আবহে নিয়মরক্ষার ভোট আরামবাগ, তারকেশ্বরে

বোর্ড গঠন আগেই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে। হুগলির আরামবাগ এবং তারকেশ্বর পুরসভায় হাতে গোনা কয়েকটি আসনে আগামীকাল, শনিবার কার্যত নিয়মরক্ষার ভোট। শাসকদল তৃণমূল তা-ও অবশ্য হালকা চালে নিচ্ছে না। তাদের লক্ষ্য, বিরোধীদের ‘হোয়াইটওয়াশ’ করা। বিরোধী দলের গলায় এখন এ তল্লাটের ‘চেনা সন্ত্রাস’-এর অভিযোগ। আর ‘কিছুই হয়নি’ ভঙ্গিতে সেই সব অভিযোগ ফুৎকারে উড়িয়ে দিচ্ছে শাসকদল।

পীযূষ নন্দী ও প্রকাশ পাল
আরামবাগ ও কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৫ ০২:১০
Share: Save:

বোর্ড গঠন আগেই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে। হুগলির আরামবাগ এবং তারকেশ্বর পুরসভায় হাতে গোনা কয়েকটি আসনে আগামীকাল, শনিবার কার্যত নিয়মরক্ষার ভোট। শাসকদল তৃণমূল তা-ও অবশ্য হালকা চালে নিচ্ছে না। তাদের লক্ষ্য, বিরোধীদের ‘হোয়াইটওয়াশ’ করা। বিরোধী দলের গলায় এখন এ তল্লাটের ‘চেনা সন্ত্রাস’-এর অভিযোগ। আর ‘কিছুই হয়নি’ ভঙ্গিতে সেই সব অভিযোগ ফুৎকারে উড়িয়ে দিচ্ছে শাসকদল।

আরামবাগে বিরোধীদের অভিযোগ, মাত্রাছাড়া সন্ত্রাসের পরিণতি হিসেবে ১৯টির মধ্যে ১৬টি আসনেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছে তৃণমূল। বাকি ৩টি ওয়ার্ডে জিততেও সন্ত্রাসের আশ্রয় নিচ্ছে শাসকদল।

তারকেশ্বরে ১৫টি আসনের মধ্যে ১০টি পকেটে পুরে ফেলেছে তৃণমূল। ভোট হবে বাকি পাঁচটিতে। এই ওয়ার্ডগুলিতে তৃণমূলের প্রতিপক্ষ এক জন করে। দু’টিতে বিজেপি, একটিতে সিপিএম, একটিতে কংগ্রেস প্রার্থী টিকে রয়েছেন। বিরোধীদের অভিযোগ, প্রচারপর্বে লাগাতার সন্ত্রাস চলেছে এই ওয়ার্ডগুলিতে। বিজেপি নেতা গণেশ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমাদের প্রার্থীদের মারধর করা হচ্ছে। প্রশাসনকে বিষয়টি জানিয়েছি।’’

একমাত্র ৩ নম্বর ওয়ার্ডে সন্ত্রাসের অভিযোগ নেই। বরং তৃণমূলের গোষ্ঠীলড়াইতে এই আসনটি আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে। এখানে তৃণমূল প্রার্থী কাকলি বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিদ্বন্দ্বী নির্দল কুহেলি কুণ্ডু। যিনি বিদায়ী বোর্ডের উপ-পুরপ্রধান উত্তম কুণ্ডুর স্ত্রী এবং নিজে তৃণমূলের দাপুটে নেত্রী। যাঁকে নিয়ে শাসকদলে নাটকের যবনিকাপাত দূরঅস্ত, ক্লাইম্যাক্স থেকে অ্যান্টি ক্লাইম্যাক্সের দিকে পৌঁছেছে। গত পাঁচ বছরে মানুষ পরিষেবা কতটা পেলেন, নিকাশি সমস্যার সমাধান হল কি না, সেই আলোচনা ফেলে শৈবতীর্থের নজর এখন সেই দিকেই।

এ বার তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, ভিতরে-বাইরে নানা অভিযোগ থাকায় উত্তমকে প্রার্থী করা হবে না। তার বদলে কুহেলিকে টিকিট দেওয়া হবে। তবে দলেরই এক মন্ত্রী এবং এক সাংসদের বদান্যতায় শেষলগ্নে উত্তমকে প্রার্থী করা হয়। তবে, কুহেলিকে টিকিট দেওয়া হয়নি। এর পরেই ‘বিদ্রোহীনি’ কুহেলি উত্তমের পুরনো ওয়ার্ডে দাঁড়িয়ে পড়েন। অনেক জলঘোলার পরে লিফলেট দিয়ে প্রার্থীপদ প্রত্যাহার করে নেওয়ার কথা ঘোষণা করেন তিনি। যদিও পুরবাসীর অভিজ্ঞতা, ভিতরে ভিতরে প্রচার চালিয়ে গিয়েছেন তিনি। তৃণমূলের একাংশের বক্তব্য, স্ত্রীর দাঁড়ানোর পিছনে আসলে উত্তমের মদত রয়েছে। কেননা, প্রচারের পোস্টারে তিনি লিখেছেন, ‘এলাকায় উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে’ যেন কুহেলিকে ভোট দেওয়া হয়। কাকলির অভিযোগ, ‘‘উনি দলের সঙ্গে প্রতারণা করছেন। নাম প্রত্যাহারটা স্রেফ নাটক। বুথস্লিপ পর্যন্ত দিচ্ছে ওরা। জবাবটা মানুষই দেবেন।’’ অন্য নির্দলদের শাস্তি দিলেও কুহেলিকে ‘তোষামোদ’ করা নিয়ে দলের জেলা নেতৃত্বকেও দুষছেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের একাংশ।

কুহেলির অবশ্য দাবি, প্রার্থীপদ তুলে নেওয়ার পরে তিনি আর প্রচার করেননি। দলের বিরুদ্ধ গোষ্ঠীই চক্রান্ত করে এমনটা করে থাকতে পারে।

আরামবাগে বিরোধীদের অভিযোগ, যে তিনটি ওয়ার্ডে (১, ৬ ও ১৯ নম্বর) ভোট হবে, তা আসলে প্রহসনের নামান্তর। কেননা, সেখানে সন্ত্রাসের আবহ কায়েম রয়েছে। তবে এর পরেও সেখানে কোনও ‘চমৎকার’ ঘটবে কি না তা নিয়েই আলোচনা এখন বিরোধী শিবির থেকে চায়ের দোকান-বাজার সর্বত্র।

১ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল প্রার্থী সুফলচন্দ্র পোড়েলের একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির অনুপ মালিক। ৬ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলের সুমিত্রা মণ্ডলের প্রতিপক্ষ সিপিএমের স্বপ্না বসু খন্দকার। ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলের পরিণীতা ঘোষের লড়াই নির্দলের (বিক্ষুব্ধ তৃণমূল) রিক্তা সরকার এবং বিজেপির তাপসী নায়েকের বিরুদ্ধে। এখানে তৃণমূলের লড়াই মূলত নির্দলের বিরুদ্ধে।

বিরোধীদের অভিযোগ, নিরঙ্কুশ হওয়ার জন্য এই ওয়ার্ডগুলিতে শাসকদেলর ভীতি প্রদর্শন অব্যাহত। বিরোধী কর্মী-সমর্থকদের পাশাপাশি সাধারণ ভোটারদেরও হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ভোটকেন্দ্রে বিরোধী এজেন্ট হিসাবে কেউ বসতে পারবে না বলে ভয় দেখানো হচ্ছে বলে বাম, বিজেপি দু’তরফেই অভিযোগ করা হয়েছে।

সিপিএমের আরামবাগ জোনাল সম্পাদক পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মানুষ যদি নিজের ভোট নিজে দিতে পারেন, ৬ নম্বর ওয়ার্ডে আমরাই জিতব।’’ বিজেপি-র আরামবাগ জেলা সভাপতি অসিত কুণ্ডুরও দাবি, যে দু’টি ওয়ার্ডে তাঁদের প্রার্থী আছেন, সঠিক ভোট হলে তাঁরাই জিতবেন। অভিযোগ যে মিথ্যা নয়, তার প্রমাণ ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের এক বাসিন্দার কথায়। তিনি বলেন, ‘‘ওরা তো পুরবোর্ড পেয়েই গিয়েছে। তার পরেও এ সব করছে (সন্ত্রাস) কেন!’’

অভিযোগ অস্বীকার করে বিদায়ী পুরপ্রধান, তৃণমূল নেতা স্বপন নন্দীর প্রতিক্রিয়া, ‘‘জুলুমের প্রশ্নই নেই। এ সব বিরোধীদের অপপ্রচার। মানুষ আমাদের পাশেই থাকবেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE