অবরোধ জিটি রোডে। মঙ্গলবার ছবিটি তুলেছেন প্রকাশ পাল।
ভোট বড় বালাই!
‘সাসপেনশন অব ওয়ার্ক’ নোটিস দিয়ে মালিক পক্ষ ইন্ডিয়া চটকল বন্ধ করে দেওয়ার জন্য তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি দায় চাপিয়েছিল সিটুর উপর। পাল্টা তৃণমূলের বিরুদ্ধে চক্রান্তের অভিযোগ করে সিটু। সমস্যা সমাধানে সোমবার শ্রম দফতরের ডাকা বৈঠকেও আসেননি মালিকপক্ষ। ভোটের মুখে এমন অবস্থায় জোরদার আন্দোলনে না নামলে শ্রমিকদের মনে বিরূপ প্রতিক্রয়া হতে পারে, এমন আঁচ করেই মঙ্গলবার দুই শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা মিল খোলার পাশাপাশি শ্রমিকদের বেতনের দাবিতে পথে নামেন। অবরোধ করা হয় জিটি রোড। তাঁদের সঙ্গে সামিল হয় বিএমএসও।
শাসক দলের শ্রমিক সংগঠনের দাবি, শ্রমিকদের পাশে দাঁড়াতেই যৌথ আন্দোলন। যদিও সিটু নেতৃত্বের দাবি, যৌথ আন্দোলন নয়। তাঁদের আন্দোলনেই আইএনটিটিইউসি-র নেতারা এসে যোগ দেন। বেলা ১২টা থেকে প্রায় তিন ঘণ্টা অবরোধ চলে।
গত কয়েক দিন ধরেই ইন্ডিয়া চটকলে শ্রমিকদের কাজের দিন কমানো নিয়ে গোলমাল চলছে। শ্রমিক অসন্তোষের কারণ দেখিয়ে রবিবার মিলে সাসপেনশন অব ওয়ার্ক ঘোষণা করেন কর্তৃপক্ষ। প্রশাসন ও মিল সূত্রে খবর, শ্রমিকদের পাক্ষিক মজুরি পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। অবিলম্বে মজুরি দেওয়ার দাবিতে মঙ্গলবার শ্রমিকরা শ্রীরামপুরের উপ শ্রম-কমিশনার অমল মজুমদারকে ঘেরাও করেন। অমলবাবু দফতরের রাজ্য আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলেন। সেখান থেকে বেরিয়ে বেলা সওয়া ১২টা নাগাদ সিটুর নেতৃত্বে শ্রীরামপুরের বটতলায় পাঁচমাথার মোড়ে অবরোধ শুরু করেন কয়েকশো শ্রমিক। তাঁরা দাবি তোলেন, এ দিনই মজুরি দিয়ে দিতে হবে।
এ দিন অবরোধের জেরে জিটি রোডের দু’ধারে সার দিয়ে গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়ে। মানুষ দুর্ভোগে পড়েন। বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা তথা চাঁপদানির জোট প্রার্থী আব্দুল মান্নান ওই পথ ধরে যাচ্ছিলেন। তিনিও কিছুক্ষণ অবরোধে সামিল হন। ইতিমধ্যে আইএনটিটিইউসি-র লোকজনও অবরোধে যোগ দেন। খবর পেয়ে শ্রীরামপুর থানার আইসি বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। তিনি শ্রম দফতরের আধিকারিক এবং মিল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে।
প্রশাসন সূত্রে খবর, মিল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, বুধবার অর্থাৎ দোলের দিন শ্রমিকদের মজুরি দেওয়া হবে। আন্দোলনকারী শ্রমিকরা প্রথমে তা মানতে চাননি। মঙ্গলবারই মজুরি মিটিয়ে দেওয়ার দাবিতে তাঁরা অনঢ় থাকেন। শেষ পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ মিলের গেটে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানান, বুধবার মজুরি দেওয়া হবে। পুলিশ ওই বিজ্ঞপ্তির প্রতিলিপি নিয়ে আসে। এর পরেই দুপুর পৌনে ৩টে নাগাদ অবরোধ ওঠে।
শ্রমিকদের খেপিয়ে সিটুর নেতারা অচলাবস্থা তৈরি করেছেন বলে অভিযোগ করার পরেও সেই সিটু-র সঙ্গে যৌথ আন্দোলনে কেন? সংগঠনের নেতা পাপ্পুবাবু দাবি, ‘‘শ্রমিকদের স্বার্থেই ওঁদের সঙ্গে শ্রম দফতরের আধিকারিককে ঘেরাও করেছিলাম। এক সঙ্গে অবরোধের সিদ্ধান্তও হয়। কিন্তু ওরা অনেক আগেই অবরোধে নেমে পড়ে। শ্রমিকদের কথা ভেবেই আমরা পরে যোগ দিই।’’
সিটু নেতা তথা শ্রীরামপুর পুরসভার সিপিএম কাউন্সিলর সুমঙ্গল সিংহের অবশ্য দাবি, ‘‘যৌথ আন্দোলন আদপেই ছিল না। আমরাই অবরোধ শুরু করি। ঘণ্টাদেড়েক পরে ওদের দু’চার জন আমাদের সঙ্গে যোগ দেয়। আমরা আপত্তি করিনি।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘সিটুর বিরুদ্ধে যে বদনাম ওরা ছড়াচ্ছিল, তা মিথ্যা প্রমাণিত হল আমাদের আন্দোলনে ওরা সামিল হওয়ায়। আন্দোলনের জন্যই মিল কর্তৃপক্ষ বুধবার মজুরি দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। এটা আমাদের আন্দোলনের জয়।’’ প্রসঙ্গত, মিল খোলা নিয়ে আগামী ২৯ মার্চ কলকাতায় রাজ্যের শ্রম দফতরে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ডাকা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy