Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
বাকসাড়া-কাণ্ড

সিন্ডিকেটের প্রতিবাদ করায় মারধরে অধরা তৃণমূল নেতা

শুধু সরকারি জমি বিক্রি নয়, অভিযোগ এলাকায় রীতিমতো সিন্ডিকেট তৈরি করে ‘দাদাগিরি’ চালাচ্ছিলেন হাওড়া দক্ষিণ বাকসাড়ায় সরকারি জমি বিক্রি-কাণ্ডে অভিযুক্ত তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা। এলাকায় পুকুর ভরাট থেকে বাড়ি তৈরির ইট-বালি-সিমেন্ট সরবরাহ সব কিছুরই দায়িত্ব ছিল সিন্ডিকেটের। যাঁরা সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে যেতেন, তাঁদের কপালে জুটত অত্যাচার। ঠিক যেমন ঘটে গত মঙ্গলবার। অভিযোগ, সরকারি জমি বিক্রির প্রতিবাদ করায় আক্রান্ত হন স্থানীয় বাসিন্দা লক্ষী রায়। তাঁকে ও তাঁর এক বন্ধুকে একটি ঘরে বন্ধ করে লাঠি, রড দিয়ে পেটানো হয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৫ ০১:৪৩
Share: Save:

শুধু সরকারি জমি বিক্রি নয়, অভিযোগ এলাকায় রীতিমতো সিন্ডিকেট তৈরি করে ‘দাদাগিরি’ চালাচ্ছিলেন হাওড়া দক্ষিণ বাকসাড়ায় সরকারি জমি বিক্রি-কাণ্ডে অভিযুক্ত তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা। এলাকায় পুকুর ভরাট থেকে বাড়ি তৈরির ইট-বালি-সিমেন্ট সরবরাহ সব কিছুরই দায়িত্ব ছিল সিন্ডিকেটের। যাঁরা সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে যেতেন, তাঁদের কপালে জুটত অত্যাচার। ঠিক যেমন ঘটে গত মঙ্গলবার। অভিযোগ, সরকারি জমি বিক্রির প্রতিবাদ করায় আক্রান্ত হন স্থানীয় বাসিন্দা লক্ষী রায়। তাঁকে ও তাঁর এক বন্ধুকে একটি ঘরে বন্ধ করে লাঠি, রড দিয়ে পেটানো হয়।

ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, সিন্ডিকেটের মাথা হলেন ওই প্রতিবাদী যুবককে মারধরে অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা অলোকরঞ্জন দাস ওরফে মানিক ও তাঁর দলবল। যাদের বিরুদ্ধে পুলিশ মারধর ও ভীতি প্রদর্শন-সহ ৬টি ধারায় মামলা দায়ের করেছে। দলের পক্ষ থেকেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে ওই নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করে দেওয়া হতে পারে। যদিও ৪৮ ঘণ্টা কেটে গেলেও পুলিশ অভিযুক্তদের ধরতে পারেনি। তৃণমূল থেকে মানিককে বহিষ্কারও করা হয়নি।

রাজ্যের মন্ত্রী হাওড়ায় তৃণমূলের জেলা সভাপতি (শহর) অরূপ রায় বলেন, “আমি এখন উত্তরবঙ্গে আছি। ফিরে গিয়ে এলাকার দলীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এই সব অভিযোগের বিষয়ে সবিস্তার খোঁজ নেব। তার পরে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মানিক আগে সিপিএমের ছাত্র সংগঠন এসএফআইয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পরে রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর এসএফআই ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন। অভিযোগ, দক্ষিণ বাকসাড়ার বিবেকানন্দপল্লি সংলগ্ন পাড়ার বাসিন্দা ওই যুবক বছরখানেক আগেও স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের পিছনে ঘুরতেন। অভিযোগ, ওই সময়ে এলাকার দলীয় গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে স্থানীয় তৃণমূল নেতা ও বর্তমানে ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা হাওড়া পুরসভার চেয়ারম্যান অরবিন্দ গুহর পাশে থাকায় তাঁর ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন মানিক। ২০১৪ সালে পুরসভায় তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর অরবিন্দবাবু চেয়ারম্যান হলে মানিকের জীবনের চাকা ঘুরে যায়। বাসিন্দাদের অভিযোগ, শুধু পদ্মপুকুর জলা বিক্রি করা নয়, গত এক বছরের মধ্যে এলাকার অন্তত ৯টি জলাজমি ও পুকুর বুজিয়ে বিক্রি করে দিয়েছেন মানিক। পুরসভাকে বার বার অভিযোগ করার পরেও অজ্ঞাত কারণে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তার জেরে মানিকও বেপরোয়া ভাবে সিন্ডিকেট-রাজ চালিয়েছে। এত দিন বেকার থাকা মানিকের গত এক বছরে ব্যাপক সম্পত্তিবৃদ্ধি হয়েছে বলে অভিযোগ পাড়াপড়শিদের।

মানিকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার ব্যাপার স্বীকার করলেও সিন্ডিকেট তৈরি করে তাঁর এই দৌরাত্ম্যের কথা মেনে নিতে রাজি নন হাওড়া পুরসভার চেয়ারম্যান অরবিন্দ গুহ। তিনি বলেন, “দলের অন্য ছেলেদের মতো মানিকও আমার ঘনিষ্ঠ। কিন্তু ও কী ভাবে আয় করেছে, জানা নেই। আমার নাম করে যদি কেউ কিছু অন্যায় করে, দল ব্যবস্থা নেবে।”

বাসিন্দাদের নালিশ, রাজনৈতিক চাপেই পুলিশ অভিযুক্তদের ধরছে না। মানিক ও তাঁর দলবল প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। যদিও সে কথা অস্বীকার করে হাওড়া পুলিশ কমিশনারেটের এক কর্তা বলেন, “অভিযোগ পাওয়ার পরে তল্লাশি শুরু হয়েছে। অভিযুক্তেরা এলাকায় থাকলে অবশ্যই ধরা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE