Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
ডানকুনি

শিল্পের লক্ষ্যে ডানকুনি চায় সার্বিক পরিকল্পনা

বাম আমলে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু উদ্বোধন করেছিলেন ম্যডুলার ফুড পার্কের। বলাবাহুল্য, সেই ফুড-পার্ক আজও দেখতে পাননি ডানকুনি শহরবাসী। রাজ্যে ক্ষমতার হাত বদলের পর স্থানীয় সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ডানকুনিতে স্টিল অথরিটি অব ইন্ডিয়ার একটি কারখানার জন্য তদ্বির শুরু করেন। জমি দেখা শুরু হয় শহরের বিভিন্ন প্রান্তে। সেই উদ্যোগের বাস্তব প্রতিফলন এ পর্যন্ত দেখা যায়নি।

মিলেছে ফ্লাইওভার, মেলেনি আন্ডারপাস। অগত্যা বিপজ্জনক পারাপার চলছেই।

মিলেছে ফ্লাইওভার, মেলেনি আন্ডারপাস। অগত্যা বিপজ্জনক পারাপার চলছেই।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:৪৯
Share: Save:

বাম আমলে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু উদ্বোধন করেছিলেন ম্যডুলার ফুড পার্কের। বলাবাহুল্য, সেই ফুড-পার্ক আজও দেখতে পাননি ডানকুনি শহরবাসী।

রাজ্যে ক্ষমতার হাত বদলের পর স্থানীয় সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ডানকুনিতে স্টিল অথরিটি অব ইন্ডিয়ার একটি কারখানার জন্য তদ্বির শুরু করেন। জমি দেখা শুরু হয় শহরের বিভিন্ন প্রান্তে। সেই উদ্যোগের বাস্তব প্রতিফলন এ পর্যন্ত দেখা যায়নি।

শিল্প শহর হিসাবে গালভরা পরিচিত আছে ডানকুনির। কিন্তু পাতে দেওয়ার মতো শিল্প সেখানে এল কই? কোল ইন্ডিয়ার মতো নামী কেন্দ্রীয় প্রকল্প থাকলেও সেই শিল্পের অবস্থা আপাতত বেহাল। তার উপর রাজ্যে শিল্পের ক্ষেত্রে জমি নিয়ে যে সার্বিক সমস্যা রয়েছে তা থেকে ডানকুনিও ভিন্ন নয়। বাম আমলে জমি নিয়ে যে সমস্ত দুষ্কৃতী শাসক দলের ছত্রচ্ছায়ায় ছড়ি ঘোরাত, সরকার পালটানোর পরেও তারা স্বমহিমায়। তফাত বলতে কেবল, মাথার উপর ছাতাটার রং বদলে গিয়েছে। এলাকার মানুষের অভিযোগ, আগে বামেদের স্থানীয় রাজনৈতিক মাথারা দুষ্কৃতীদের নিয়ন্ত্রণ করত। এখন যার দায়িত্ব তুলে নিয়েছে শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের লোকজন। পাশাপাশি অন্য অভিযোগও রয়েছে। ডানকুনি অঞ্চলে ব্যবসা রয়েছে এমন এক ব্যাক্তি বলেন, “বাম আমলে দুষ্কৃতীদের দাপট থাকলেও তাদের ওপর পার্টির অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ থাকত। তারা সে ভাবে মাথা তুলতে পারত না। শিল্পপতি বা ব্যবসায়ীদের কোনও অসুবিধা হলে বহুক্ষেত্রে তা সামলে নিতেন পার্টির দাদারা। কিন্তু এখন অবস্থাটা উল্টো। দলের নিয়ন্ত্রণ না থাকায় দুষ্কৃতীরা মাথায় চড়ে বসছে। তারাই কার্যত এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে। যার ফল হচ্ছে মারাত্মক।”

সম্প্রতি যার নমুনাও দেখেছে ডানকুনি। একটি নামী বিস্কুট কারখানার কর্তা তাঁর ব্যবসার প্রয়োজনে নির্মাণ কাজ শুরু করেন নিজের জমিতে। অভিযোগ, কাজ শুরুর পর থেকেই দুষ্কৃতীরা তোলা চেয়ে উত্‌পাত শুরু করে। কিন্তু দাবিমত তোলা না দেওয়ায়, শেষে চাপে পড়ে কাজ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন ওই ব্যবসায়ী। এমনকী বিষয়টি তিনি প্রশাসনের নজরে আনতেও দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন। ভবিষ্যত নিয়ে আশঙ্কার কারণে। যদিও পরে সংবাদমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে হইচই শুরু হলে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানান তিনি। পুলিশ দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। ফের কাজ শুরু করেন ওই ব্যবসায়ী।

জমি মাফিয়াদের রমরমায় ডানকুনিতে শিল্পপতিদের এখন করুণ। প্রথমত এক শ্রেণির জমি মাফিয়া এলাকার প্রচুর জমি কিনে ফেলে রেখে দিয়েছে কোনও কাজ না করে। ভবিষ্যতে জমির দাম আরও বাড়লে তা বিক্রির জন্য। ফলে শিল্পের প্রয়োজনীয় জমি মিলছে না। পাশাপাশি এমন পরিস্থিতিও তৈরি হয়েছে যেখানে এক শ্রেণির জমির দালালেরা জাল দলিল তৈরি করে অন্যের জমি দিব্যি হস্তান্তর করছে। সম্প্রতি এমনই কয়েকটি ঘটনায় ডানকুনির মোল্লাবেড় অঞ্চলে জমি বিক্রির উপর সরকারি স্তরে নিষেধাজ্ঞা পর্যন্ত জারি করে প্রশাসন। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে যায়, হুগলির জেলাশাসককে পর্যন্ত কলকাতা হাইকোর্টে গিয়ে জবাবদিহি করতে হয়। জমির ব্যাপারে হাইকোর্ট কিছু বিধি আরোপ করে জেলা প্রশাসনের উপর।

তবে বিচ্ছিন্নভাবে হলেও কয়েকটি ক্ষেত্রে আশার আলোও দেখা গিয়েছে। সম্প্রতি একটি বড় সিমেন্ট কারখানা তৈরির শুরু হয়েছে। তৈরি হয়েছে বেশ কিছু বড় হোটেল, মল। কিন্তু কর্মসংস্থানমুখী বড় শিল্পের প্রশ্নে এখনও সে ভাবে কিছু চোখে পড়েনি। এর জন্য এলাকায় শিল্পের উপযোগী পরিকাঠামো তৈরির উপর জোর দিয়েছেন ব্যবসায়ী থেকে শিল্পপতিরা। ডানকুনিতে ফ্লাইওভার তৈরি হলেও সেখানে ফুটওভার ওভারব্রিজ বা লেভেল ক্রসিং লাগোয়া আন্ডারপাশের দাবি এখনও মেটেনি। হয়নি ডানকুনির ভিড়, যানজট এড়াতে কোনও বাইপাস রাস্তা। তবে দেরিতে হলেও সম্প্রতি দিল্লি রোডের সার্বিক সংস্কার শুরু করেছে প্রশাসন। কিন্তু এ সব সত্ত্বেও শিল্পের লক্ষ্যে ডানকুনি চায় সার্বিক পরিকল্পনা।

(শেষ)

কেমন লাগছে আমার শহর? নিজের শহর নিয়ে আরও কিছু
বলার থাকলে আমাদের জানান। ই-মেল পাঠান district@abp.in-এ।
subject-এ লিখুন ‘আমার শহর ডানকুনি’।
ফেসবুকে প্রতিক্রিয়া জানান:
www.facebook.com/anandabazar.abp
অথবা চিঠি পাঠান ‘আমার শহর’,
হাওড়া ও হুগলি বিভাগ, জেলা দফতর,
আনন্দবাজার পত্রিকা,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা ৭০০০০১ ঠিকানায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE