লন্ডভন্ড ঘর। — নিজস্ব চিত্র।
প্রকৃতি বাদ সাধায় ‘ম্যাকবেথ’ প্রদর্শন পিছিয়ে গিয়েছে। কিন্তু দুষ্কৃতীদের হানার পরেও মঞ্চস্থ হল কুরকুট-এর পুতুল নাটক ‘ফুলমণি ও তার ছোট্ট বন্ধু’।
বুধবার সকালে মহড়া-ঘরে ঢুকে আঁতকে উঠেছিলেন উপল, শ্যামল, গৌতম, শ্রীপর্ণারা। চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে শুধু পুতুল! গাঁয়ের ছেলে ছোট্ট মহুলের একটা হাত ছেঁড়া। মুণ্ডুটাও নিষ্ঠুরভাবে ধড় থেকে আলাদা। ২৪ ঘণ্টা পরে পুতুল নাটকের শো করতে হবে। তার আগে এমন ভয়াবহ দৃশ্য দেখে দু’হাতে মুখ ঢেকে ফেলেন ‘কুরকুট’ নাটক দলের সদস্যরা। কেউ কেউ কেঁদে ফেলেন। প্রায় তিন মাস ধরে তিলে তিলে ১৮টি পাপেট এবং ৬টি দৃশ্যের সেট তৈরি করা হয়েছিল।
এ বার বনমহোৎসবের সরকারি অনুষ্ঠানে ‘ফুলমণি ও তার ছোট্ট বন্ধু’ পুতুল নাটকটি মঞ্চস্থ করার জন্য ডাক পেয়েছিল ঝাড়গ্রামের এই সংস্থাটি। কিন্তু নিজেদের সৃষ্টিকে এভাকে তছনছ অবস্থায় দেখে প্রাথমিক ভাবে মুষড়ে পড়লেও ভেঙে পড়েননি তাঁরা। তখনই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, ধ্বংস থেকেই নতুনের নির্মাণ হবে। আর সেটা করেও দেখালেন।
কুরকুটের সম্পাদক উপল পাহাড়ি জানালেন, শহরের একটি বেসরকারি সাংস্কৃতিক মঞ্চের মহড়া-ঘর ভাড়া নিয়ে তাঁরা মহড়া দেন। মঙ্গলবার রাতে পুতুল নাটকটির মহড়ার পরে ঘরের দরজায় তালা দেওয়া হয়েছিল। পরদিন আলো ও শব্দ প্রক্ষেপনের সঙ্গে চূড়ান্ত মহড়া হওয়ার কথা ছিল। তাই পুতুল রাখার বাক্সগুলিতে তালা দেওয়া হয়নি। সেটগুলোও সাজানো ছিল। ওই মঞ্চের ব্যালকনি থেকে দড়ি বেয়ে মহড়াঘরে ঢোকা যায়। অনুমান, চোরেরা মঙ্গলবার রাতে কোনও ভাবে মহড়া-ঘরে হানা দিয়েছিল।
নাওয়া খাওয়া ভুলে বুধবার দুপুর থেকে দলের ১২ জন সদস্য পুতুল ও সেট তৈরি-মেরামতির কাজ শুরু করে দেন। তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন ঝাড়গ্রামের ‘এসো নাটক করি’ সংস্থার অভিষেক বর্মন। পুতুল নাটকটির দৃশ্য পরিকল্পনার দায়িত্ব রয়েছেন অভিষেক। মনের জোরে অবশেষে বুধবার সন্ধের মধ্যে থার্মোকল, কাগজ, কাপড়, কাঠ, প্লাইউড, আঠা ও রং দিয়ে টানা চেষ্টায় পুতুল ও সেট খাড়া করে ফেলেন দু’টি সংস্থার সদস্যরা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঝাড়গ্রামের বেলতলায় পুতুল নাটকটি সফল ভাবে মঞ্চস্থ করা হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy