প্রতীকী চিত্র
করোনা পরিস্থিতিতে গত কয়েক মাসে ব্যাঙ্কে ঋণ মঞ্জুরের গতি শ্লথ ছিল। অনেক আবেদন জমেছিল। এ বার পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রায় ১,১০০ স্বনির্ভর গোষ্ঠীর জন্য সব মিলিয়ে প্রায় ২৪ কোটি টাকা ব্যাঙ্ক ঋণ মঞ্জুর হতে চলেছে। ঋণ পেলে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি আরও শক্তিশালী হবে বলেই আশা। জেলার লিড ডিস্ট্রিক্ট ব্যাঙ্ক ম্যানেজার (এলডিএম) শুভঙ্কর মাহাতো মানছেন, ‘‘স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির জন্য ব্যাঙ্ক ঋণ মঞ্জুরের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।’’
প্রশাসন সূত্রে খবর, সম্প্রতি মেদিনীপুরে ডিস্ট্রিক্ট কনসালটেটিভ কমিটির (ডিসিসি) বৈঠকে এ ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। ঠিক হয়েছে, ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ওই ঋণ মঞ্জুর করা হবে। মঙ্গলবার নারায়ণগড়, গড়বেতা প্রভৃতি ব্লকে বেশ কিছু স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে ঋণ দেওয়াও হয়েছে। জেলার লিড ব্যাঙ্ক সূত্রে খবর, জেলার ১,১৩৪টি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর জন্য মঞ্জুর হওয়ার কথা ২৪ কোটি ৭১ লক্ষ টাকা। এর মধ্যে নারায়ণগড়ের ৪৫৪টি গোষ্ঠীর জন্য ৮ কোটি ৮৩ লক্ষ টাকা, গড়বেতার ৮৭টি গোষ্ঠীর জন্য ২ কোটি ৩ লক্ষ টাকা মঞ্জুর হওয়ার কথা। লিড ব্যাঙ্ক সূত্রে খবর, ওই ১,১০০টি গোষ্ঠীর প্রত্যেকে ন্যূনতম দেড় লক্ষ টাকা ঋণ পাবে।
মেয়েদের স্বনির্ভর করার লক্ষ্যে প্রশাসনের উদ্যোগে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সংখ্যা উত্তরোত্তর বেড়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় ৩৪ হাজার। বেশিরভাগই মহিলা পরিচালিত। একটি গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীনে একাধিক সংসদ থাকে। প্রতিটি সংসদের অধীনে কাজ করে একাধিক স্বনির্ভর গোষ্ঠী। প্রতিটি সংসদের অন্তর্গত স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি মিলে তৈরি হয় উপসঙ্ঘ। আর একটি গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত সব সংসদের অধীন স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি মিলে তৈরি হয় সঙ্ঘ। একইভাবে ব্লকস্তরে তৈরি হয় মহাসঙ্ঘ। প্রশাসনের এক সূত্র মনে করিয়ে দিচ্ছে, চাঙ্গা করতে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে এককালীন অনুদান দেওয়া শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে এককালীন বার্ষিক ৫ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হয়েছে।
গরিব মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতির লক্ষ্যে ‘স্বর্ণজয়ন্তী গ্রাম স্ব-রোজগার’ প্রকল্পের আওতায় স্বনির্ভর গোষ্ঠী গঠন শুরু হয় ১৯৯৯ সালে। তবে গোষ্ঠীগুলির সদস্যদের আয় বাড়ানোর ক্ষেত্রে সমান সাফল্য মেলেনি। পুরনো প্রকল্পের ত্রুটি-বিচ্যুতি শুধরে নতুন ‘জাতীয় গ্রামীণ জীবিকা মিশন’ (এনআরএলএম) প্রকল্পের সূচনা হয় ২০১২ সালে। এই প্রকল্পে গরিব মানুষের সঙ্গে সরাসরি ব্যাঙ্কের যোগসূত্র তৈরি এবং পরিকাঠামো উন্নয়নে জোর দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রের প্রকল্পটির নাম ‘জাতীয় জীবন ও জীবিকা মিশন’ প্রকল্প, রাজ্যে নাম ‘আনন্দধারা’। এই প্রকল্পে গরিব মহিলাদের স্বনির্ভর গোষ্ঠী গড়ে নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণ শেষে গোষ্ঠীগুলি নিজেরাই ব্যাঙ্কে প্রথমে টাকা জমা দেয়। পরে সেই আমানতের ভিত্তিতে ঋণ মেলে। তবে জানা যাচ্ছে, অনেক গোষ্ঠী শুধুমাত্র সঞ্চয়কারী গোষ্ঠীতেই অবস্থান করছে। প্রকৃতপক্ষে স্বনির্ভর হয়ে উঠতে পারেনি।
অতীতে দেখা গিয়েছে, ঋণ নেওয়ার পর সেই টাকা ব্যক্তিগতভাবে ভাগ করে কেউ শালপাতার থালা তৈরি করেছেন, কেউ সিমেন্টের খুঁটি তৈরি করেছেন। এক গোষ্ঠীর সদস্যার অবশ্য দাবি, ‘‘এখন আর মুরগি পালন, মুড়ি ভাজায় তেমন লাভ নেই। যার স্থানীয় বাজার রয়েছে, বিক্রির সমস্যা নেই, সেটাই তো করব।’’ স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির যাবতীয় তথ্য সংগ্রহে (ডেটাবেস) এক সময়ে জোর দিয়েছিল জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘এখন জেলার প্রতিটি গোষ্ঠীর যাবতীয় তথ্যাবলি ছাড়াও গোষ্ঠীগুলির প্রত্যেকের আর্থ-সামাজিক তথ্য জেলায় রয়েছে। কোন গোষ্ঠীর কী ঘাটতি, কী সাহায্য দরকার, সে সব নজরে রয়েছে। গোষ্ঠীর উন্নয়নে সেই মতো পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy