আবিষ্কার: আইআইটি-র প্রদর্শনীতে পড়ুয়ারা। নিজস্ব চিত্র
পেট্রল বা ডিজেল নয়, জলেই চলছে ইঞ্জিনচালিত সাইকেল। হাতের ইশারাতেই চালনা করা যাচ্ছে হুইল চেয়ার। স্কুল পড়ুয়াদের এমনই নানা উদ্ভাবন নিয়ে শনিবার দু’দিন ব্যাপী প্রদর্শনী ও প্রতিযোগিতার সূচনা হল খড়্গপুর আইআইটিতে। আইআইটি ছাত্রদের তৈরি ‘ব্র্যান্ডিং অ্যান্ড রিলেশন সেল’-এর উদ্যোগে আয়োজিত ‘ইয়ং ইনোভেটর্স প্রোগ্রাম’ নামে এই প্রতিযোগিতা চলবে আজ, রবিবার পর্যন্ত।
আইআইটি-র বিক্রমশীলা প্রেক্ষাগৃহে আয়োজিত এই প্রতিযোগিতায় চণ্ডীগড়, ঝাড়খণ্ড, তেলঙ্গানা, গুয়াহাটি, চেন্নাই, ওডিশা-সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের প্রায় ২৪টি স্কুল যোগ দিয়েছে। গত জুলাই মাসেই প্রতিযোগিতার সূচনা হয়েছিল। প্রথমে দেশের মোট ৬০০টি স্কুল প্রতিযোগিতায় যোগ দেয়। পরে গত অগস্ট মাসে বাছাই পর্বের মাধ্যমে দ্বিতীয় রাউন্ডে যোগ দেয় ২৫০টি দল। এত দিন অনলাইনেই চলেছে বাছাই পর্ব। শনিবার থেকে খড়্গপুর আইআইটিতে শুরু হল প্রতিযোগিতার তৃতীয় রাউন্ড। এই রাউন্ডে ২৪টি দল সরাসরি নিজেদের আবিষ্কার প্রদর্শনের সুযোগ পেয়েছে। ২৪টি দলের প্রতিটিতে তিনজন করে পড়ুয়া রয়েছে। আইআইটি-র বিচারকেরা এদের মধ্যে থেকেই প্রথম ৬ জনকে বাছাই করবে। আজ, রবিবার তাঁদের মধ্যে ৩ জনকে পুরস্কৃত করা হবে।
প্রতিযোগিতায় নিজের হাতে তৈরি ইঞ্জিন চালিত সাইকেল নিয়ে এসেছে ঝাড়খণ্ডের জামশেদপুরের কার্মেল জুনিয়র কলেজ স্কুলের তিন পড়ুয়া। জলেই চালানো যায় এই সাইকেলের ইঞ্জিন। দশম শ্রেণির ছাত্র আদিত্য গুড্ডে বলছিল, “জলে বাইক চালানোর ভাবনা থেকেই এই আবিষ্কার।’’ কী ভাবে মাথায় এল এমন ভাবনা? সে বলছে, ‘‘একদিন একটি সাইকেলের নিচে লুনার ইঞ্জিন ও সাইকেলের পিছনে জলের ট্যাঙ্ক লাগিয়ে দিলাম। তার পরে গবেষণা করে জলের সঙ্গে পটাসিয়াম হাইড্রোস্কাইড মিশিয়ে ইঞ্জিন চালু করলাম। এখন জলেই দিব্যি ইঞ্জিনচালিত এই সাইকেল ছুটছে।”
বিশাখাপত্তনমের দিল্লি পাবলিক স্কুলের পড়ুয়াদের এক বিশেষ জুতো প্রদর্শনীতে নিয়ে এসেছিল। দশম শ্রেণির লক্ষ্মী শ্রীনিবাসন ও রাজা চন্দ্রের দাবি, “বিশেষভাবে তৈরি এই জুতো ‘আর্থারাইটিস’-এর রোগীদের জন্য উপকারী। চলার সময় যদি কোনও বৃদ্ধ পড়ে যান, তবে এই জুতোয় বসানো ডিভাইস থেকে পরিজনের কাছে এসএমএস চলে যাবে।”
শুধু ভিন্ রাজ্যই নয়, পূর্ব মেদিনীপুরের হলদিয়ার সেন্ট জেভিয়ার্সের পড়ুয়ারা একটি বিশেষ হুইলচেয়ার নিয়ে এসেছিল প্রতিযোগিতায়। পড়ুয়াদের মধ্যে অরুণাভ মাইতি দাবি করে, “একটি সেন্সর বসিয়ে হুইলচেয়ারটি চালানো হচ্ছে। এই মডেল তৈরি করতে ৬ হাজার টাকা লেগেছে। এই আবিষ্কার আইআইটিতে তুলে ধরতে পেরে আমরা গর্বিত।”
অনুষ্ঠান তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠানের অ্যালুমনি অ্যাফেয়ার্সের ডিন ও ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন-এর দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক বৈদূর্য ভট্টাচার্য বলেন, “আমাদের ছাত্রদের এটাই প্রথম উদ্যোগ। প্রতিযোগিতা ঘিরে ভাল সাড়া পড়েছে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেশের স্কুল পড়ুয়াদের মধ্যে যদি উদ্ভাবন ক্ষমতা বাড়াতে পারি তাতেই আমাদের প্রতিষ্ঠানের সাফল্য।” অনুষ্ঠানের আয়োজকদের মধ্যে আইআইটি-র পড়ুয়া সিমরন গর্গ, সৌভিক ভৌমিকরা বলছিলেন, “পড়াশোনা থেকে সময় বের করে গত এপ্রিল মাস থেকেই আমাদের এই প্রয়াস চলছিল। দেশের ১৫০০টি স্কুলকে চিঠি দিয়ে আবেদন চাওয়া হয়েছিল। সেখান থেকে ৬০০টি স্কুলের পড়ুয়াদের নিয়ে ৬টি বিভাগে প্রতিযোগিতা শুরু হয়। প্রতিযোগিতায় যে সব আবিষ্কার বা উদ্ভাবন দেখছি তাতে পরিশ্রম সার্থক হয়েছে মনে হচ্ছে।”
স্কুল পড়ুয়াদের চোখ ধাঁধানো নানা আবিষ্কার দেখে অবাক আইআইটি-র অন্য পড়ুয়ারাও। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র সৌম্য যাদব বলেন, “আমিও স্কুলস্তরে এত ভাল মডেল তৈরি করিনি। ওরা অনেক উন্নত মানের মডেল বানিয়ে এনেছে। আমার মনে হচ্ছে, এই স্কুল পড়ুয়ারা ভবিষ্যতে আইআইটি-র মতো পরিকাঠামো পেলে অনেক উন্নত প্রযুক্তি আবিষ্কার করে দেশকে উপহার দিতে পারবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy