Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

ময়নাতদন্তেও ইঙ্গিত গাফিলতিরই

মণিমালা ভট্টাচার্যের মৃত্যুর পর গাফিলতির অভিযোগ তুলেছিলেন পরিজনরা। বিক্ষোভের মুখে নিজের ভুলের কথা স্বীকারও করেছিলেন চিকিৎসক। এ বার মৃতের ময়না-তদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর গাফিলতির কথা প্রকারান্তরে মেনে নিলেন চিকিৎসকরা। তাতেই মুখ পুড়েছে জঙ্গলমহলের ‘সুপার স্পেশ্যালিটি’ স্বাস্থ্য পরিষেবার।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০১৬ ০০:৫৬
Share: Save:

মণিমালা ভট্টাচার্যের মৃত্যুর পর গাফিলতির অভিযোগ তুলেছিলেন পরিজনরা। বিক্ষোভের মুখে নিজের ভুলের কথা স্বীকারও করেছিলেন চিকিৎসক। এ বার মৃতের ময়না-তদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর গাফিলতির কথা প্রকারান্তরে মেনে নিলেন চিকিৎসকরা। তাতেই মুখ পুড়েছে জঙ্গলমহলের ‘সুপার স্পেশ্যালিটি’ স্বাস্থ্য পরিষেবার।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, প্রাথমিক তদন্ত অনুযায়ী রবিবার রাতে গাফিলতি শুরু হয়েছিল জরুরি বিভাগ থেকেই। দু’মাসের অন্তঃসত্ত্বা মণিমালাদেবীকে প্রসূতি বিভাগে ভর্তি করানো উচিত ছিল। অথচ তিনি অন্তঃসত্ত্বা জেনেও জরুরি বিভাগের চিকিৎসক অপূর্ব দাস মণিমালাদেবীকে ফিমেল মেডিসিন ওয়ার্ডে পাঠিয়ে দেন। রবিবার রাতে ফিমেল মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি থাকাকালীন মণিমালাদেবীকে দায়সারা ভাবে দেখে চলে যান চিকিৎসক দেবার্ঘ্য মণ্ডল। অন্তঃসত্ত্বা ওই মহিলার জন্য কোনও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞকে ডাকা হয়নি বলেও অভিযোগ।

ময়না তদন্তের রিপোর্ট দেখে স্বাস্থ্যকর্তারা বলছেন, মণিমালাদেবীর সমস্যটি ছিল স্ত্রীরোগ সংক্রান্ত ‘র‌্যাপচার্ড এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি’। অর্থাৎ তাঁর গর্ভস্থ ভ্রূণটি জরায়ুর পরিবর্তে ডিম্বনালীতে বেড়ে উঠেছিল। ভ্রূণটি বড় হয়ে যাওয়ায় ডিম্বনালীটি ফেটে গিয়ে বিপত্তি হয়। স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের বক্তব্য, এই সমস্যা হলে রোগিনীর প্রাণ সংশয় নিশ্চিত। তাই এ ক্ষেত্রে আভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ বন্ধের জন্য সঙ্গে সঙ্গে অস্ত্রোপচার জরুরি। অনেক ক্ষেত্রেই ইউএসজি করারও সময় থাকে না। উপসর্গ দেখে অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নিতে হয়। রবিবার রাত থেকে সোমবার ভোর পর্যন্ত ৫ ঘন্টা সময় পাওয়া গিয়েছিল। ওই সময়ের মধ্যে অস্ত্রোপচার করলে নিশ্চিত মৃত্যুর মুখ থেকে রোগিনীকে ফিরিয়ে আনা যেত। অথচ সে সব না করে মণিমালাদেবীকে গ্যাসট্রাইটিসের চিকিৎসা করা হয়। স্বাস্থ্য কর্তাদের মতে, এটা একেবারেই সংশ্লিষ্ট দুই চিকিৎসকের দায়িত্বজ্ঞানহীনতার জন্যই ঘটেছে।

ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালে মোট চিকিৎসকের সংখ্যা ৫৪। এর মধ্যে বিশেষজ্ঞ আছেন ২৯ জন। অভিযোগ, সুপার স্পেশ্যালিটি ভবনের আউটডোরে সাধারণ চিকিৎসকদের বসার কথা সকাল ৯ টায়। বিশেষজ্ঞদের বসার কথা সকাল দশটায়। কিন্তু সকাল ১১ টার আগে চিকিৎসকরা আউটডোরে বসেন না। হাসপাতালে কোনও অভিযোগ গ্রহণ কেন্দ্রও নেই। ফলে, দিনের পর দিন অনিয়ম চলছে। হাসপাতালে ল্যাপ্রোস্কোপি করার পরিকাঠামো রয়েছে। অথচ ইচ্ছাকৃত ভাবে প্রয়োজনীয় দু’টি সহায়ক সরঞ্জাম কেনা হচ্ছে না। গোটা ঝাড়গ্রাম জেলা ও সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল চত্বর জুড়ে দালাল চক্রের রমরমা। যার ফলে, সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের বিভিন্ন পরীক্ষার জন্য বেসরকারি নির্ণয় কেন্দ্রগুলিতে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে আধুনিক অপারেশন থিয়েটর থাকলেও, গুরুত্বপূর্ণ অপারেশনের জন্য রোগীদের ভরসা সেই বেসরকারি নার্সিংহোমই। সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরাই বেসরকারি কেন্দ্রগুলিতে মোটা টাকার বিনিময়ে অস্ত্রোপচার করছেন ও রোগী দেখছেন বলে অভিযোগ। এই মানসিকতার কারণেই রবিবার রাতে হাসপাতালে মণিমালাদেবীকে ভাল করে পরীক্ষা করা হয়নি বলে অভিযোগ পরিজনদের।

চিকিৎসাধীন রোগীর পরিজন ববিতা মহান্তি, সুখদেব কিস্কুরা বলেন, “হাসপাতালের চিকিৎসকরাই বাইরের সংস্থা থেকে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করাতে বলছেন। বেসরকারি সংস্থার লোকজন ওয়ার্ডে ঢুকে রক্ত সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছে।” জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তরা সিংহ বলেন, “একাংশ চিকিৎসক নার্সিংহোম, প্রাইভেট চেম্বার ও বেসরকারি নির্ণয়কেন্দ্রে সময় দিচ্ছেন বলে অভিযোগ পেয়েছি। বিস্তারিত রিপোর্ট সংগ্রহ করে মুখ্যমন্ত্রীর হাতে তুলে দেব।”

ঝাড়গ্রামের সিএমওএইচ অশ্বিনীকুমার মাঝি বলেন, “বিশেষজ্ঞ-সহ সমস্ত চিকিৎসকদের ডিউটি আওয়ার্সে হাসপাতালে থাকতে হবে। এ ব্যাপারে সুপারকে নির্দেশ দিয়েছি। ডিউটি আওয়ার্সে কোনও চিকিৎসক হাসপাতালে না-থাকলে কড়া পদক্ষেপ করা হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

post-mortem allegation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE