প্রতীকী ছবি
নয় নয় করে সংখ্যাটা প্রায় এক হাজার!
আমপান ঘূর্ণিঝড়ে বিপুল ক্ষতির শিকার যে সব জেলা, সেই তালিকায় প্রথম দিকে নেই পশ্চিম মেদিনীপুর। তবু রাজ্যের অন্য প্রান্তের সঙ্গে এখানেও ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ বিলিতে দলবাজি, দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। নাম জড়িয়েছিল তৃণমূলের নেতা-কর্মী, পঞ্চায়েত প্রতিনিধিদের। পরিস্থিতি দেখে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দেন, দুর্নীতি বরদাস্ত করা হবে না। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে ত্রাণ পৌঁছতে হবে।
জানা যাচ্ছে, অনেকে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর দফতরেও বঞ্চনার অভিযোগ জানিয়েছেন। শুধু পশ্চিম মেদিনীপুর থেকেই এমন প্রায় এক হাজার অভিযোগ গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর দফতর হয়ে অভিযোগগুলি জেলায় পৌঁছেছে। প্রতিটি অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জেলাকে। জেলা থেকে রিপোর্টও (অ্যাকশন টেকেন রিপোর্ট সংক্ষেপে এটিআর) তলব করা হয়েছে। প্রশাসন সূত্রে খবর, ইতিমধ্যে প্রায় ৩২ শতাংশ অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সেই রিপোর্টও পাঠানো হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে। বাকি ৬৮ শতাংশ অভিযোগ খতিয়ে দেখা চলছে। গত প্রায় দু’মাসে জেলা থেকে আমপান- ত্রাণে বঞ্চনার ৯৮৫টি অভিযোগ গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে। তার মধ্যে ৩১৫টি অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অভিযোগকারীদের বেশিরভাগই বঞ্চনার নালিশ জানানোর পাশাপাশি সরকারি প্রকল্পে বাড়ি চেয়েছেন। জেলাশাসক রশ্মি কমল বলেন, ‘‘প্রতিটি অভিযোগই খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’’
বেশ কিছু অভিযোগ খতিয়ে দেখতে হিমশিমও খাচ্ছেন আধিকারিকেরা। অভিযোগকারীরই সন্ধান মিলছে না! জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘কিছু ক্ষেত্রে অভিযোগকারীর মোবাইলে ফোন করলে বলা হয়েছে, ‘আমি অভিযোগ করিনি। আমার নম্বর থেকে অন্য একজন অভিযোগ করেছিলেন। তিনি অন্য গ্রামে থাকেন।’ পরে এলাকায় গিয়েও অভিযোগকারীর খোঁজ মেলেনি।’’
প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, জেলার সব ব্লক থেকেই কমবেশি অভিযোগ গিয়েছে। তুলনায় বেশি অভিযোগ গিয়েছে সবং, পিংলা, নারায়ণগড়, দাঁতন- ১ এবং ২, চন্দ্রকোনা- ১, কেশপুর প্রভৃতি ব্লক থেকে। তুলনায় কম অভিযোগ গড়বেতা- ১, শালবনি, মোহনপুর, কেশিয়াড়ি, মেদিনীপুর সদর প্রভৃতি ব্লকে। কোনও কোনও ব্লক থেকে ১২০- ৪০টি, আবার কোনও ব্লক থেকে ২০-৩০টি অভিযোগ গিয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে ‘গ্রিভান্স সেল’ চালু রয়েছে। সেখানে ই-মেলে, ফোনে অভিযোগ জানানো যায়। আবার ‘দিদিকে বলো’র নির্দিষ্ট নম্বরে ফোন করলেও অভিযোগ নথিভুক্ত হয়। প্রশাসনের এক সূত্রের মতে, জেলা থেকে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে এই সব মাধ্যমেই অভিযোগ গিয়েছে। ওই সূত্র আরও মনে করাচ্ছে, সক্রিয়তার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর দফতর (সিএমও)- এর গ্রিভান্স সেল ‘ই- সমাধান’কে স্কচ ফাউন্ডেশন সম্প্রতি তাদের সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘স্কচ প্ল্যাটিনাম অ্যাওয়ার্ড’ দিয়েছে। গত বছর চালু হওয়া ‘ই- সমাধানে’র মাধ্যমে ৯৫ শতাংশের বেশি (প্রায় ৮ লক্ষ ১৬ হাজার) নাগরিক-অভিযোগের সুরাহা করা হয়েছে বলে রাজ্য প্রশাসন সূত্রে খবর।
বিজেপির পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি শমিত দাশের কটাক্ষ, ‘‘ত্রাণ বিলিতে দুর্নীতির জন্য অনেকে মানুষ বঞ্চিত হয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে বিপুল অভিযোগ পৌঁছনো তারই প্রমাণ।’’
তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি পাল্টা বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষের সমস্যার আশু সমাধানেই তো ওই গ্রিভান্স সেল চালু করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তা ছাড়া, জেলায় ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা যাচাই করছে টাস্ক ফোর্স।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy