সেভ ডেমোক্র্যাসি’-এর সমাবেশে (বাঁ দিক থেকে) অরুণাভ ঘোষ, বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য ও অশোক গঙ্গোপাধ্যায়। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।
রাজ্যে যাঁরা শিরদাঁড়া সোজা রেখে কাজ করছেন, তাঁদের উপরই শাস্তির খাঁড়া নেমে আসছে— এই অভিযোগ তুলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চড়া সুরে বিঁধলেন সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায়। রবিবার মেদিনীপুরে তিনি বলেন, “রাজ্যে একের এক এক অপরাধমূলক ঘটনা ঘটছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অভিযুক্ত তৃণমূলের লোকেরাই। মুখ্যমন্ত্রী কখনও বলছেন, ‘বাচ্চাদের কাজ, ভুল করে করে ফেলেছে’, কখনও বলছেন, ‘ছোট ঘটনা, সাজানো ঘটনা’। নারীরা ধর্ষিতা হলে বলছেন, ‘ক্ষতিপূরণ পাবে’। শুধু সাধারণ মানুষ নন, পুলিশও আক্রান্ত হচ্ছে। যাঁরা শিরদাঁড়া সোজা রেখে কাজ করছেন, তাঁদের উপরই শাস্তির খাঁড়া নেমে আসছে।’’
এসএসকেএম হাসপাতালের যে কুকুর-কাণ্ড নিয়ে গোটা রাজ্য তোলপাড়, এ দিন সেই প্রসঙ্গও টেনে আনেন অশোকবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘এসএসকেএমের মতো হাসপাতালে কুকুরের ডায়ালিসিস হবে, এটা ভাবা যায়? রাজ্যের একের এক ঘটনার অপরাধীদের সমর্থনে আবার মন্ত্রীরা আসরে নেমে পড়ছেন। পুলিশের তদন্তকে প্রভাবিত করার চেষ্টা চলছে।” অশোকবাবু আরও বলেন, “মানুষের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে। গণতন্ত্রকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে হবে। শুধু প্রতিবাদ করলে হবে না, প্রতিরোধে সামিল হতে হবে। মানুষই প্রতিরোধ করতে পারে। মানুষকে মাথা তুলে দাঁড়াতে হবে।”
গণতন্ত্র রক্ষা-সহ বেশ কিছু দাবিতে রবিবার মেদিনীপুর শহরে সমাবেশ করে ‘সেভ ডেমোক্র্যাসি ফোরাম’-এর পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা শাখা। সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি তথা ফোরামের রাজ্য চেয়ারম্যান অশোকবাবুর পাশাপাশি সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন কলকাতা কর্পোরেশনের প্রাক্তন মেয়র, আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য, প্রদেশ কংগ্রেস নেতা তথা আইনজীবী অরুণাভ ঘোষ, ‘আক্রন্ত আমরা’র সদস্য অমিত রায়, শিলাদিত্য চৌধুরী প্রমুখ।
এ দিন দুপুরে প্রথমে মেদিনীপুরে এক সাংবাদিক বৈঠক করেন ফোরামের নেতৃত্ব। তারপর বিকেলে শহরের গাঁধীমূর্তির পাদদেশে সমাবেশ হয়। ফোরামের জেলা শাখার আহ্বায়ক তথা মেদিনীপুর কলেজের টিচার ইনচার্জ সুধীন্দ্রনাথ বাগ বলেন, “জেলার যেখানে গণতন্ত্র বিপন্ন হবে, সেখানেই ফোরাম মানুষের পাশে দাঁড়াবে। ফোরাম চায়, জেলায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হোক।”
সাংবাদিক বৈঠক এবং সমাবেশ বক্তব্য রাখতে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের কড়া সমালোচনা করেন ফোরামের নেতৃত্ব। বিকাশবাবুর কথায়, “রাজ্যে অঘোষিত জরুরি অবস্থা চলছে। সরকারের সিদ্ধান্তের সমালোচনা যাঁরা করছেন, তাঁদের উপর আক্রমণ হচ্ছে। সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। যাঁরা মনে করেছিলেন পরিবর্তনের ছোঁয়া পাবেন, তাঁদের অনেকেও বিস্মিত হয়ে গিয়েছেন। প্রত্যেক মানুষকেই চিন্তাভাবনা করতে হবে কোন পথে গেলে রাজ্য এই পরিস্থিতি থেকে বেরোতে পারে।” বিকাশবাবু বলেন, “বলা হয়েছিল মন্ত্রীসভা ছোট করে দেওয়া হবে। হল উল্টোটা। পরিষদীয় সচিবের নাম করে কিছু পদ তৈরি করে দেওয়া হল। সারদা মামলায় রাজ্য সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে ১১ কোটি টাকা খরচ করেছে। কার টাকা?” তাঁর কথায়, “আমরা সর্বত্র মানুষের কাছে যাচ্ছি। এ কাজ একা কারও পক্ষে সম্ভব নয়। সবাই মিলে করতে হবে।”
আক্রমণাত্মক মেজাজে ছিলেন অরুণাভবাবুও। তিনি বলেন, “জেলায় তৃণমূলের সভাপতি হচ্ছেন পুলিশ সুপাররা। সারদা মামলায় যাঁরা তথ্যপ্রমাণ নষ্ট করেছেন, সেই রাজীব কুমার, অর্ণব ঘোষের পদোন্নতি হয়েছে। এ জেলার ভারতী ঘোষ, সিপিএমের আমলে চরম সিপিএম ছিলেন, কত অত্যাচার করেছেন, এখন রং পাল্টে এখানে রয়েছেন। খড়্গপুরে কে পুরপ্রধান হবেন, সেটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর কথায় করেছেন। পুলিশ দিয়ে এই রাজনীতি করানো, এটা জরুরি অবস্থার সময় হয়নি।’’ তিনি আরও মনে করিয়ে দেন, ছত্রধর মাহাতোর মোটরবাইকে চেপে মুখ্যমন্ত্রী মিটিং করেছেন। আর সেই ছত্রধরকেই যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হল। অরুণাভবাবুর কথায়, “তৃণমূলে এখন পুলিশই শেষ কথা।”
ফোরামের নেতৃত্বের বক্তব্য, রাজ্যে গণতন্ত্র শুধু বিপন্ন নয়, বিপর্যস্ত। রাজ্যের স্বার্থে, সাধারণ মানুষের স্বার্থে, শিল্পের স্বার্থে, বেকারদের স্বার্থে এই পরিস্থিতির পরিবর্তন দরকার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy