তখনও নেভেনি আগুন। নারায়ণগড়ের তুতরাঙা গ্রামে। ফাইল চিত্র।
দশ বছরেও বদলায়নি কিছু।
বছর দশেক আগের কথা। বাজি বানাতে গিয়ে ঘটেছিল বিস্ফোরণ। ডানহাতের কব্জি থেকে উ়ড়ে গিয়েছিল নারায়ণগড়ের নারমা গ্রাম পঞ্চায়েতের তুতরাঙা গ্রামের বাসিন্দা রূপকুমার আদকের।
ওই ঘটনার কাছাকাছি সময় এই গ্রামেরই বাসিন্দা তিন শব্দবাজির কারিগর পটাশপুরে এক অনুষ্ঠানে বাজি প্রদর্শনীতে গিয়েছিলেন। সেখানে বিস্ফোরণে মৃত্যু হয়েছিল ওই তিনজনের।
রবিবার বিকেলে বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল তুতরাঙা গ্রাম। মৃত্যু হল রূপকুমারের (৫২)। স্থানীয় সূত্রের খবর, ঘটনার বছর দশেক পরও বেআইনি বাজি তৈরির ব্যবসা ছাড়েননি রূপকুমার। এ দিনও নিজের বাড়িতেই বাজি তৈরি করছিলেন তিনি। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে অনুমান, কোনও ভাবে মজুত থাকা বাজিতে আগুন লেগে এই ঘটনা ঘটেছে। খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ওয়াই রঘুবংশী বলেন, “আমরা গোটা ঘটনার তদন্ত করে দেখছি। প্রাথমিকভাবে যতটুকু জানা যাচ্ছে এই বাজি কারখানার লাইসেন্স ছিল না। এক্ষেত্রে কীভাবে বিস্ফোরণ হয়েছে তা তদন্তের পরেই বলা যাবে।”
দশ বছরেও বদলায়নি কিছু।
এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে চকলেট বোমা, গাছ বোমা-সহ আরও বহু নিষিদ্ধ বাজির টুকরো। ঘরের ছাউনি অ্যাসবেসটস ও টিন উড়ে গিয়েছে। রূপকুমারের মাটির বাড়িটিও বিস্ফোরণে উড়ে গিয়েছে। গ্রামবাসী লক্ষ্মীকান্ত দাস, তারাপদ মানা বলেন, ‘‘কয়েকবছর আগে বাজি ফাটাতে গিয়ে রূপকুমারের ডান হাতের কব্জি থেকে উড়ে গিয়েছিল। তার পরেও বাজি নিয়ে তার কারবার চলত।" পাশের গ্রামের খোকন দেব বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন ধরে বাজি সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিল। গ্রামের এক প্রান্তে থেকে এইসব কাজ করত।’’
দশ বছরেও বদলায়নি কিছু।
স্থানীয় সূত্রের খবর, পটাশপুরের ঘটনার পর গ্রামে বাজি তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। প্রথমে প্রশাসনের তরফে নজরদারিও সেই। তারপর একই অবস্থা। ওই ঘটনার পর গ্রামে বাজি তৈরি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু সেই সিদ্ধান্তকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে চলছিল গোপন কারবার।
স্থানীয় সূত্রে খবর, মৃত রূপকুমার আদকের দুটি বিয়ে। প্রথম স্ত্রী আরতি আদক আলাদা থাকেন। বহুদিন তাঁদের বনিবনা নেই। প্রথম পক্ষের এক ছেলে ও এক মেয়ে। কয়েক বছর আগে ফের বিয়ে করেন রূপকুমার। সবংয়ের খেলনা গ্রামের বর্ণালিকে। দু’জন গ্রামের এক প্রান্তে বাড়ি করে থাকতেন। বহু বছর ধরে বাড়িতেই এই গোপন নিষিদ্ধ শব্দবাজির কারবারে যুক্ত ছিলেন এই প্রৌঢ়। এই কাজে দ্বিতীয় স্ত্রীর তেমন বাধা ছিল না বলেই গ্রামবাসীদের দাবি। এ দিন অবশ্য বর্ণালি ঘটনার সময় বাড়ির বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান। স্থানীয় সূত্রের খবর, সামান্য আহত হয়েছেন তিনি। তবে ঘটনার পর বাড়িতে ফিরে আসেননি বর্ণালি। প্রথম পক্ষের স্ত্রী আরতি বলেন, ‘‘কিছু জানি না। দীর্ঘদিন কোনও যোগাযোগ নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy