Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ওড়িশায় অবরোধ, মাসুল দিল খড়্গপুর

ধর্মঘটে রেলই সব থেকে বেশি ভোগাল রেলশহরকে। শুক্রবার দিনভর দক্ষিণ-পূর্ব রেলের খড়্গপুর জংশন স্টেশনে রেলযাত্রীদের ভোগান্তির ছবি ধরা পড়ে। সকাল থেকে খড়্গপুর ডিভিশনের বিভিন্ন স্টেশনে আপ ও ডাউনে ওড়িশাগামী ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়। খড়্গপুর ডিভিশনের কোথাও রেললাইনে অবরোধ হয়নি, তবে ওড়িশার বিভিন্ন স্টেশনে অবরোধের জেরে এই শাখায় ট্রেন চলাচল বিঘ্নিত হয়।

পাল্লার ট্রেন। খড়্গপুর স্টেশনে।

পাল্লার ট্রেন। খড়্গপুর স্টেশনে।

দেবমাল্য বাগচী
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০২:৪০
Share: Save:

ধর্মঘটে রেলই সব থেকে বেশি ভোগাল রেলশহরকে।

শুক্রবার দিনভর দক্ষিণ-পূর্ব রেলের খড়্গপুর জংশন স্টেশনে রেলযাত্রীদের ভোগান্তির ছবি ধরা পড়ে। সকাল থেকে খড়্গপুর ডিভিশনের বিভিন্ন স্টেশনে আপ ও ডাউনে ওড়িশাগামী ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়। খড়্গপুর ডিভিশনের কোথাও রেললাইনে অবরোধ হয়নি, তবে ওড়িশার বিভিন্ন স্টেশনে অবরোধের জেরে এই শাখায় ট্রেন চলাচল বিঘ্নিত হয়।

দক্ষিণ ও পশ্চিম ভারতে যাওয়ার রেলের করিডর হল খড়্গপুর। এ দিন ওড়িশায় ধর্মঘটের জেরে সকাল ৭টা থেকে সাড়ে ন’টা খড়্গপুর স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকে নয়াদিল্লি-পুরী নীলাচল এক্সপ্রেস। এই ট্রেনেই ছিলেন দিল্লির হকি খেলোয়াড় প্রিয়া শ্রীবাস্তব। তাঁর ক্ষোভ, “এই ধর্মঘট অর্থহীন। আমার ১২টায় ভুবনেশ্বরে জাতীয়স্তরের খেলা রয়েছে। খড়্গপুরেই ৯টা বেজে গেল। খেলার কী হবে জানি না!” আবার ওড়িশা থেকে রেক না আসায় বাতিল করা হয় হাওড়া-ঘাটশিলা মেমু ট্রেন। এ দিন লন্ডন থেকে বিমানে কলকাতায় পৌঁছে খড়্গপুরে আসেন রোজমেরি কেলমেন। যাওয়ার কথা ছিল ঘাটশিলায়। ট্রেন বাতিল হওয়ায় নাকাল হন রোজমেরি। তাঁর কথায়, “এক শিশু-সহ আমরা পাঁচজন মহিলা ঘাটশিলায় যাব। এই ধর্মঘট তো সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়াল।”

নাকাল হতে হয় পুরী-নয়াদিল্লি রাজধানীর যাত্রীদেরও। খড়্গপুর স্টেশনে রাজধানীর অপেক্ষায় বসে থাকা ইন্দার বাসিন্দা অনিমা নাগ বলেন, “আমার হাঁটু প্রতিস্থাপন হয়েছে। এই অবস্থায় হুইল চেয়ারে একঘন্টা টানা বসে রয়েছি। এখনও বলছে এক ঘন্টা দেরিতে ট্রেন চলছে।” বেশ কিছু ট্রেন এ দিন দেরিতে খড়্গপুর পৌঁছয়। সকাল সাড়ে ন’টার চেন্নাই-হাওড়া করমণ্ডল এক্সপ্রেস আসে বেলা একটায়, সকাল ৮টার বেঙ্গালুরু-গুয়াহাটি এক্সপ্রেস বেলা ১২টায়, সকাল সাড়ে ৭টার ধৌলি এক্সপ্রেস খড়্গপুরে ঢোকে ৯টায়। এ ছাড়াও পুরী-হাওড়া জনশতাব্দী, ডাউন দুরন্ত, আপ ফলকনামা দেরিতে চলেছে। আবার তিনঘন্টা দেরির জন্য ভদ্রক-হাওড়া প্যাসেঞ্জারের যাত্রা সাঁতরাগাছিতে শেষ করা হয়।

রেলের খড়্গপুরের সিনিয়র ডিভিশনাল কমার্শিয়াল ম্যানেজার কুলদীপ তিওয়ারি বলেন, “আমাদের ডিভিশনে হাওড়া-মেদিনীপুর, হাওড়া-টাটানগর শাখায় ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক ছিল। তবে ওড়িশায় ধর্মঘটে ট্রেন আটকে যাওয়ায় কিছু ট্রেনের সময় বদল বা বাতিল করতে হয়েছে। অনেক ট্রেন দেরিতে আসায় যাত্রীদের ভোগান্তি হয়েছে। তবে আমরা ক্রমাগত মাইকে ঘোষণা করেছি।”

ট্রেন দুর্ভোগের বাইরে এ দিন খড়্গপুর শহর মোটের উপর সচলই ছিল। সব সরকারি অফিস ও কারখানা খোলা ছিল। ব্যাঙ্কেও লেনদেন হয়েছে। তবে শহরের বেশিরভাগ দোকানপাট ছিল বন্ধ। খড়্গপুর স্টেশন লাগোয়া বোগদায় প্রায় সব দোকানের ঝাঁপ ছিল বন্ধ। শহরের সবচেয়ে বড় বাজার এলাকা গোলবাজারেও এক ছবি। খরিদায় সব্জি বাজার খুললেও বাকি দোকান খোলেনি। মালঞ্চ রোড, গেটবাজার, নিমপুরা বাজার, ইন্দা বাজার, কৌশল্যা বাজারেও অনেক দোকান বন্ধ ছিল। ব্যবসায়ীরা কেন ধর্মঘট সমর্থন করলেন? গোলবাজারের মনোহারি দোকানি পরেশ সোমানি, স্বর্ণ ব্যবসায়ী শৈলেশ শুক্লদের জবাব, “রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ধর্মঘট বিরোধী প্রচার চালানো হয়েছিল ঠিক। তবে কে ঝুঁকি নেবে। তাই আমরা দোকান বন্ধ রেখেছি। তৃণমূলের লোকজন কিছু দোকান খুলতে এসেছিল। সাময়িক সেগুলি খুললেও ফের বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।”

সিপিএমের জোনাল সম্পাদক অনিতবরণ মণ্ডল বলেন, “ধর্মঘটে ভাল সাড়া পড়েছে। মানুষ সতঃস্ফুর্তভাবে বাজার-দোকান বন্ধ রেখেছেন।” এআইটিইউসি-র জেলা সম্পাদক বিপ্লব ভট্টেরও দাবি, “ধর্মঘটে সাড়া পড়েছে।” যদিও তৃণমূলের শহর সভাপতি দেবাশিস চৌধুরী বলেন, “এই ধর্মঘট শ্রমিকদের স্বার্থে ডাকা হয়েছিল। অথচ খড়্গপুরের শ্রমিকেরা এই ধর্মঘটে সাড়া দেয়নি। কল-কারখানা চলেছে। ফলে, ধর্মঘট ব্যর্থ।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kharagpur Orissa
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE