মারধরে আহত শেখ সাইফুল।
কয়েক মাস আগে গত জুনে ঝাড়গ্রাম স্টেশনে এক যাত্রীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছিল আরপিএফের বিরুদ্ধে। গুরুতর জখম হয়ে মারা গিয়েছিলেন ওই যুবক। মঙ্গলবার গভীর রাতে ওই ঘটনারই যেন পুনরাবৃত্তি হল পাঁশকুড়া স্টেশনে। এক্ষেত্রে কোনও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। তবে এবার টাকার দাবিতে যাত্রী প্রতীক্ষালয়ে অপেক্ষারত এক ব্যক্তিকে বেধড়ক মারার অভিযোগ উঠেছে জিআরপি’র বিরুদ্ধে। ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে রেলযাত্রীদের মধ্যে।
স্থানীয় এবং জিআরপি সূত্রের খবর, হাওড়ার বাগনানের সাউরিয়া গ্রামের বাসিন্দা শেখ সাইফুল ব্যবসার কাজে মঙ্গলবার পাঁশকুড়ায় আসেন। কাজ সেরে রাতেই ফেরার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু বেশি রাতে স্টেশনে টিকিট কাউন্টার বন্ধ ছিল বলে দাবি। টিকিট না পেয়ে সাইফুল স্টেশনের যাত্রী প্রতীক্ষালয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন। অভিযোগ, রাত সাড়ে ৩টে নাগাদ পাঁশকুড়া জিআরপি থানার দু’জন কনস্টেবল টিকিট না থাকায় তাঁকে ধরে থানায় নিয়ে যান। সেখানেই সাইফুলের কাছে টাকা চাওয়া হয় এবং তা দিতে না পারায় মারধর করা হয় বলে অভিযোগ।
সে সময় সাইফুলের চিৎকার শুনে ছুটে আসেন আশপাশের যাত্রীরা। তাঁরা বাধা দেওয়া সত্ত্বেও মারধর বন্ধ হয়নি বলে অভিযোগ। তখন যাত্রী তথা কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা পাঁশকুড়া পুরসভার প্রাক্তন কাউন্সিলর কল্যাণ রায়কে ডেকে আনেন। তিনি স্টেশনের কাছেই থাকেন। স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, কল্যাণের হস্তক্ষেপে বন্ধ হয় মারধর। তবে ততক্ষণে প্রায় অচৈতন্য হয়ে পড়েন ওই যুবক। কল্যাণবাবু বলেন, ‘‘খবর পেয়ে গিয়ে দেখি, এক ব্যক্তিকে মারধর করা হচ্ছে।’’
ঘটনাস্থল থেকে প্রাক্তন কাউন্সিলর বিষয়টি জানান রেলের আধিকারিকদের এবং পাঁশকুড়া জিআরপি থানার ওসি অসীম পাত্রকে। তিনি হাউরে কর্তব্যরত ছিলেন। সকালে পাঁশকুড়ায় ফিরে তিনি ওই যুবককে স্থানীয় একটি নার্সিংহোমে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করেন।
মারধরের ব্যাপারে পাঁশকুড়া জিআরপির ওসি বলেন, ‘‘গাঁজা পাচারকারী সন্দেহে ওই যুবককে আটক করে ছিলেন দুই কনস্টেবল। তবে তাঁর বিরুদ্ধে ওই ধরনের কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি।’’ যদিও সইফুলের সাফ বক্তব্য, ‘‘ওই দুই কনস্টেবল আমার কাছে থেকে পাঁচ হাজার টাকা দাবি করে। আমি টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় আমাকে মারধরে করতে শুরু করে।’’ ঘটনায় অবশ্য বুধবার রাত পর্যন্ত কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি।
কিন্তু সন্দেহের বশে কাউকে আটক করলে মারধর করা হবে কেন?
এ ব্যাপার ওসি অসীম পাত্র বলেন, ‘‘ওটা আমাদের স্টাফদের ভুল। আমি নিজের টাকায় ওঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। আগামী দিনে যাতে এই ধরনের ঘটনা না ঘটে, সে বিষয়ে সজাগ থাকব।’’ বুধবার বিকেলে পাঁশকুড়া জিআরপি থানায় আসেন রেলের ডেপুটি এসআরপি তারকেশ্বর ঝা। তিনি কথা বলেন জিআরপিএফের ওসি’র সঙ্গে। ওই ঘটনায় অভিযুক্ত কনস্টেবলদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হবে বলে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, স্টেশন চত্বরে প্রস্রাব করার ‘অপরাধে’ গত জুনে ঝাড়গ্রামে দেবদাস কুণ্ডু নামে খড়্গপুরের এক বাসিন্দাকে মারধরের অভিযোগ উঠেছিল আরপিএফের বিরুদ্ধে। তাতে মাথার পিছনে চোট পান দেবদাস। প্রায় এক মাস হাসপাতালে লড়াইয়ের পরে মারা যান তিনি। ওই ঘটনার প্রতিবাদে সরব হয়েছিলেন এলাকাবাসী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy