প্রতীকী ছবি
ক্ষতিগ্রস্ত না হয়েও আমপান ঝড়ের সরকারি ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়েছেন— পূর্ব মেদিনীপুরে নামের সেই তালিকাটি দীর্ঘ। ওই ভুয়ো ক্ষতিগ্রস্তদের কাছ থেকে পুরোদমে টাকা ফেরত নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে কাঁথি মহকুমায়। প্রশাসন সূত্রের খবর, শুধু রামনগর-২ ব্লকেই ১২৫ জন ভুয়ো ক্ষতিগ্রস্তের অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে ক্ষতিপূরণের ২০ হাজার করে টাকা।
রামনগর ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর, গোটা ব্লকে পাঁচ হাজার জনের বাড়ি ভাঙার তালিকা তৈরি করে রাজ্য সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছিল। আপাতত আড়াই হাজার বাড়ি-ক্ষতিগ্রস্তের অ্যাকাউন্টে ২০ হাজার টাকা করে জমা পড়ে গিয়েছে। কিন্তু দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় তদন্ত হয়। তাতে টাকা পাওয়ায় ১২৫ জনের আকাউন্ট থেকে ফের ওই টাকা ফেরত নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। অঙ্কের হিসাবে দেখলে শুধু রামনগর-২ ব্লকেই ১২৫ জনের কাছ থেকে ২৫ লক্ষ টাকা প্রাথমিকভাবে ফেরত আসবে সরকারি কোষাগারে।
রামনগর-২ এর বিডিও অর্ঘ্য ঘোষ বলেন, ‘‘প্রথম পর্যায়ে আড়াই হাজার আবেদনকারীর অ্যাকাউন্টে টাকা চলে গিয়েছিল। তবে জেলা প্রশাসনের নির্দেশ মেনে আবেদনকারীদের তথ্য পুনরায় খতিয়ে দেখার পর ১২৫ জনের অ্যাকাউন্টে থাকা ২০ হাজার টাকা ফ্রিজ করা হয়েছে। তাঁদের কাছ থেকে সরকারি বিধি মেনে টাকা ফেরত নেওয়া হচ্ছে। ’’
কীভাবে ফেরত নেওয়া হচ্ছে টাকা? রামনগর -২ ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর, ওই ব্যক্তিদের একটি সরকারি ফর্মপূরণ করতে হচ্ছে। একটি চেকের মাধ্যমে টাকা ফেরত দিতে বলা হচ্ছে। ওই ভাবে বুধবার বিকেলে পর্যন্ত দেশপ্রাণ ব্লকের চারজন ক্ষতিপূরণের টাকা ফেরত দিয়েছেন বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। তবে রামনগর-১ এবং কাঁথি-১ ব্লক এ ধরনের টাকা ফেরতের খবর মেলেনি।
টাকা ফেরত নেওয়া প্রসঙ্গে কাঁথির মহকুমাশাসক শুভময় ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘রামনগর-২ ও দেশপ্রাণ ব্লকের কয়েকজন ক্ষতিপূরণের টাকা ফেরত দিয়েছেন বলে শুনেছি। যাঁদের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ সত্যি বলে প্রমাণ হচ্ছে, তাঁদের টাকা আপাতত ব্লক প্রশাসনের অ্যাকাউন্টে আটকে রাখা হবে এবং পরে বিধি মেনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিযোগের তদন্তের আগে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে টাকা পেয়ে গিয়েছে, তাদের চিহ্নিত করে নোটিস দেওয়া হচ্ছে। আপাতত একজন অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষকের পরিবারের দুই সদস্যকে নোটিস দেওয়া হয়েছে।’’
শুধু রামনগর-২ ব্লকেই এত লক্ষ লক্ষ চাকা সরকারি কোষাগারে ফেরত আসতে পারে, তাহলে গোটা জেলা থেকে কত টাকা ফেরত আসতে পারে— সে নিয়ে প্রশ্ন তুলছে বিজেপি। তাদের বক্তব্য, আমপানে ভাঙা বাড়ির জন্য যে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে, সেই দুর্নীতির হিসাব কষলে গোটা জেলায় কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। বিজেপি’র জেলা (কাঁথি) সভাপতি অনুপ চক্রবর্তীর অভিযোগ, ‘‘জেলার প্রায় সবক’টি গ্রাম পঞ্চায়েত তৃণমূলের দখলে। তারাই ক্ষতি পূরণের তালিকা তৈরি করতে গিয়ে স্বজনপোষণ করেছে। আমপান নিয়ে দুর্নীতি সর্বসমক্ষে ধরা পড়ে যাওয়ায়, ছিটেফোঁটা টাকা ফেরত দিয়ে অপরাধ ঝেড়ে ফেলতে চাইছে। অবিলম্বে প্রতিটি ব্লকে সমস্ত আবেদনকারীর আবেদন সঠিকভাবে তদন্ত করে পুনরায় ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রকাশ করার জন্য আমরা আন্দোলন করব।’’
সিপিএমের জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য হিমাংশু দাস বলেন, ‘‘গোটা জেলা জুড়ে ব্যাপক ভাবে স্বজন পোষণ করেছে শাসক দল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy