খড়্গপুরের বিদ্যাসাগর শিল্পতালুক। নিজস্ব চিত্র
উপযুক্ত শিক্ষা। আর উপযোগী কর্মসংস্থান। তরুণ-যুব সমাজের দাবি-অধিকারের সঙ্গে ওতপ্রোত জড়িয়ে দু’টি বিষয়। আর সেই দু’টি বিষয়ই উপেক্ষিত রেলশহরে। এমনকি উপ-নির্বাচনের প্রচারেও হারিয়ে যাচ্ছে শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের প্রসঙ্গ।
খড়্গপুর সদরে বিধানসভা উপ-নির্বাচন আসন্ন। জোরকদমে চলছে প্রচার। রাজনীতির খোঁচা দিতে রেলের কারখানার বেসরকারিকরণের প্রসঙ্গ উঠে এসেছে তৃণমূলের প্রচারে। আবার একটি মাত্র কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কৃতিত্ব পেতে মরিয়া বিজেপি। শিক্ষা ও কর্মসংস্থান নিয়ে সুষ্ঠু কোনও দিশা অবশ্য দেখাতে পারেননি কোনও প্রার্থীই। এমনকি তৃণমূলের প্রকাশিত উপ-নির্বাচনের ইস্তাহারেও শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের নির্দিষ্ট দিশা নেই। কর্মসংস্থানের জন্য স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও ক্ষুদ্র-মাঝারি সংস্থায় সময়মতো অর্থবন্টনের কথা বলেই দায় সারা হয়েছে।
অথচ রেলশহরের উপকন্ঠেই রয়েছে নিমপুরা ও বিদ্যাসাগর শিল্পতালুক। সেখানে শিল্প এলে শহরবাসীরই কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। কিন্তু নতুন শিল্পের বদলে শিল্পের দরজা বন্ধ হয়েছে বলেই অভিযোগ। কাজ হারিয়েছেন শহরের বহু মানুষ। এর পিছনে যেমন কেন্দ্রের জিএসটি প্রভাব ফেলেছে তেমন রাজ্যের শিল্পনীতি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে শিল্প সংস্থাগুলি। সমালোচনার মুখে রেলও। এক সময় এশিয়ার মধ্যে বৃহত্তম খড়্গপুরের রেল কারখানায় নতুন করে সম্প্রসারণ হয়নি বলে অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল। সঙ্গে তৃণমূলের দাবি, রেলের জমিতে নিউ সেটলমেন্টে একটিমাত্র শপিং মল বহু বছর আগে চালুর পরে আর কোনও শপিং মল খোলেনি। পুর এলাকায় কয়েকটি শপিংমলে অবশ্য কিছু কর্মসংস্থান হয়েছে। তবে বিদ্যসাগর শিল্পতালুকে শিল্পায়নের প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়েছে তৃণমূল। আর শহরবাসী বলছেন, সেখানে এখন শিল্পের বদলে স্টেডিয়াম গড়া হচ্ছে।
সিলভার জুবিলি, ইন্দা-সহ শহরের বিভিন্ন স্কুলের মাঠও বেহাল। আর তা সংস্কারে নজর নেই বলে অভিযোগ। বিদ্যাসাগরপুরের বাসিন্দা কলেজে বাণিজ্য বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র নবীন বর্মন বলেন, “এই সাড়ে তিন বছরে আমরা দেখিনি দিলীপ ঘোষ বিধায়ক হিসাবে বিধানসভায় বা কোথাও কর্মসংস্থান ও শিক্ষা নিয়ে কথা বলেছেন। রাজ্য সরকারেরও বিষয়টিতে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।”
স্কুলের পরিকাঠামোর সঙ্গে রেলশহরে শিক্ষাব্যবস্থাও তলানিতে ঠেকেছে। তৃণমূলের ইস্তাহারে তো শিক্ষার প্রসঙ্গই নেই। গত দশবছরে শহরে সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত ২৪টি হাইস্কুল বেড়ে ২৫ হয়নি। বরং শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী, গ্রন্থাগার, ভবন, পরীক্ষাগারের অভাবে ধুঁকছে কয়েকটি স্কুল। পুর-উদ্যোগেও কোনও সাধারণ স্কুল হয়নি। একটিমাত্র প্রতিবন্ধী স্কুলেও পরিকাঠামোর অভাবের অভিযোগ রয়েছে। তবে বেসরকারি স্কুল বেড়েছে। ২০১৬ সালে জিতে এই শহরের বিধায়ক হন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। এখন তিনি সাংসদ। বিধায়ক হিসাবে শহরের কয়েকটি স্কুলকে অনুদান দিয়েছিলেন তিনি। দিলীপের আরও দাবি, “নতুন করে কোনও স্কুল এখানে হয়নি। আমি তদ্বির করে কেন্দ্র সরকারকে বলে এখানে আরও একটি কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় খোলার ব্যবস্থা করেছি।” তবে শহরবাসীর প্রশ্ন, একটি কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় খোলা হলেও বন্ধ হয়েছে রেলের বেশ কয়েকটি স্কুল। সেগুলি কেন খোলা হচ্ছে না? সব মিলিয়ে কেন্দ্রের বিজেপি ও রাজ্যের তৃণমূল সরকারের ভূমিকা প্রশ্নের মুখে। কলেজের তৃতীয় বর্ষের ইংরেজি অনার্সের ছাত্রী খরিদার মৌসুমী দণ্ডপাট বলেন, “আমরা উচ্চশিক্ষার পরে কী করব সেটা নিজেদের কাছেই এখনও প্রশ্ন। আগামী দিনে বিধায়ক ও রাজ্য সরকারকে অনেক বেশি শিক্ষা ও কর্মসংস্থানে নজর দিতে হবে।”
এই প্রসঙ্গে বিজেপি প্রার্থী প্রেমচাঁদ ঝা বলছেন, “রাজ্য সরকার তো দিলীপদা বিধায়ক থাকাকালীন কিছু করতে দেয়নি। শিল্পতালুকে ফাঁকা জমি পড়ে রয়েছে। আমি বিধায়ক হলে আগামী দিনে গুরুত্ব দেব।” তৃণমূল প্রার্থী প্রদীপ সরকার পাল্টা বলছেন, “দিলীপ ঘোষ কি বিধানসভায় একদিনও শিক্ষা ও কর্মসংস্থান নিয়ে কথা বলেছেন! আমি বিধায়ক হলে আগামীদিনে শিল্পতালুকে পড়ে থাকা জমিতে শিল্পায়নের জন্য যেমন জোর দেব, তেমনই স্কুলগুলির পরিকাঠামো উন্নয়ন করব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy