Advertisement
১১ মে ২০২৪

বিধি ভঙ্গ করেই রেল এলাকায় চলছে প্রচার

পুরভোটের প্রচার ঘিরেও চলছে বিতর্ক। পুরসভা ও রেল কর্তৃপক্ষের চাপানউতোরে প্রায়ই উন্নয়ন কাজ থমকে যাওয়ার অভিযোগ ওঠে খড়্গপুরের রেল এলাকায়। এ বার নির্বাচনী বিধির তোয়াক্কা না করেই খড়্গপুর শহরের রেল এলাকায় রাজনৈতিক দলগুলি প্রচার চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠল। ২০১০ সালে রাজ্য সরকারের আইন অনুযায়ী রেল এলাকা খড়্গপুর পুরসভার অধীনে আসে।

খড়্গপুরের রেলের ডিভিশন অফিসের সামনে লাগানো হয়েছে ভোট প্রচারের হোর্ডিং।

খড়্গপুরের রেলের ডিভিশন অফিসের সামনে লাগানো হয়েছে ভোট প্রচারের হোর্ডিং।

নিজস্ব সংবাদদাতা
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০১৫ ০১:১৭
Share: Save:

পুরভোটের প্রচার ঘিরেও চলছে বিতর্ক।

পুরসভা ও রেল কর্তৃপক্ষের চাপানউতোরে প্রায়ই উন্নয়ন কাজ থমকে যাওয়ার অভিযোগ ওঠে খড়্গপুরের রেল এলাকায়। এ বার নির্বাচনী বিধির তোয়াক্কা না করেই খড়্গপুর শহরের রেল এলাকায় রাজনৈতিক দলগুলি প্রচার চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠল।

২০১০ সালে রাজ্য সরকারের আইন অনুযায়ী রেল এলাকা খড়্গপুর পুরসভার অধীনে আসে। বর্তমানে ৩৫টি ওয়ার্ড বিশিষ্ট খড়গপুর পুরসভার ৮টি ওয়ার্ড রেল এলাকার মধ্যে পড়ে। রেল এলাকার এই আটটি ওয়ার্ডে (১৩, ১৫, ১৬, ২০, ২১, ২২, ২৬, ২৭ নম্বর) মোট ৭২টি বুথ রয়েছে। খড়্গপুর পুরসভার মোট ভোটার প্রায় ২ লক্ষ ১০ হাজার। তার মধ্যে প্রায় ৫৩ হাজার ভোটার ওই এলাকাতেই রয়েছেন। নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী কোনও সরকারি ভবনের দেওয়ালে ভোট প্রচারের জন্য পোস্টার লাগানো বা কোনও কিছু লেখা নিষিদ্ধ।

একইসঙ্গে রেলের নিয়ম অনুযায়ী, ওই ৮টি ওয়ার্ডের জমি রেলের। তাই ওই এলাকায় ভোট প্রচারের জন্য কোনও ধরনের হোর্ডিং, ব্যানার লাগানো যায় না। ওই এলাকায় খুঁটি পুঁতেও প্রচার সামগ্রী লাগানো রেলের নিয়মবিরুদ্ধ। অভিযোগ, নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করেই রেল এলাকা ছেয়েছে বিভিন্ন দলের পোস্টারে। বিধি ভেঙে বিভিন্ন ওয়ার্ডের প্রার্থীর সমর্থনে লেখা হচ্ছে দেওয়াল। পথবাতির খুঁটিতে লাগানো হয়েছে দলীয় পতাকা।

রাজনৈতিক দলগুলি নিষেধাজ্ঞা মানছে না কেন? রাজনৈতিক দলগুলির অধিকাংশ নেতাদের বক্তব্য, ভোটের বাকি আর ১৮ দিন। হাতে বেশি সময় না থাকায় জোর কদমে প্রচারে নামতে চাইছে সব দলই। তাই শহরের নিমপুরা, গোলবাজার, ট্রাফিক, নিউ সেটলমেন্ট, ওল্ড সেটলমেন্ট, পোর্টারখোলি, মথুরাকাটি-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় রাস্তার দু’ধার ঢেকেছে পোস্টার-ব্যানারে। শহরের ওল্ড সেটেলমেন্ট এলাকায় রেলের জমিতে ভাড়া নেওয়া পোস্ট অফিসের দেওয়াল ও রেল নির্মিত শৌচালয়ের দেওয়ালও ভরেছে ভোট প্রচারে। স্থানীয় এক বাসিন্দার কথায়, “গত লোকসভায় বিধি জারি হওয়ায় প্রচার চোখে পড়েনি। কিন্তু এই পুরভোটে বিধি সত্ত্বেও দেখছি তো প্রচার চলছে। দেওয়াল লেখাও হচ্ছে।”

কী বলছে রাজনৈতিক দলগুলি?

শহর বিজেপির সভাপতি প্রেমচাঁদ ঝা বলেন, “আমরা বিধি মেনেই কাজ করছি। কোথাও রেলের দেওয়ালে যাতে না লেখা হয় তার জন্য প্রার্থীদের বলা হয়েছে। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে পতাকা, ফ্লেক্স লাগাতে নিষেধ করা হয়নি। তাই সেগুলি লাগানো হয়েছে।” সিপিএম অবশ্য বাড়ি বাড়ি প্রচারের সঙ্গে প্রার্থীর পরিচয়-সহ চিঠি বিলির উপর জোর দিচ্ছে। সিপিএমের শহর জোনাল সম্পাদক তথা রেলের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী অনিতবরণ মণ্ডল বলেন, “রেল যদি অভিযোগ না করে তবে ফ্লেক্স ও পতাকা লাগানো যাবে। নির্বাচন বিধি অনুযায়ী দেওয়াল লেখা যায় না। তবে কেউ কেউ না জেনেই দেওয়াল লিখেছেন। কিছুক্ষেত্রে নিয়ম ভাঙা হচ্ছে ঠিকই। তবুও আমরা যতটা সম্ভব নিয়ম মেনেই কাজ করার চেষ্টা করছি।”

প্রচারে বাদ যায়নি পোস্ট অফিসের দেওয়ালও। নিজস্ব চিত্র।

তৃণমূলের শহর সভাপতি দেবাশিস চৌধুরীর বক্তব্য, ‘‘রেল এলাকার লোকেরা কী রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় যোগ দেবেন না? ওখানে তো নির্বাচনী বুথও হবে।’’ তিনি বলেন, ‘‘আমরা বিধি মেনে চলার চেষ্টা করছি। তবে যেখানে সুযোগ রয়েছে, সেখানে প্রচারের স্বার্থে দেওয়াল লিখন হয়েছে। নির্বাচন কমিশন বললে দেওয়াল মুছে দেওয়া হবে।”

এ বিষয়ে কংগ্রসের রাজ্য কমিটির সদস্য তথা বিদায়ী পুরপ্রধান রবিশঙ্কর পাণ্ডে বলেন, ‘‘বিধির গেরোয় পড়ে প্রার্থী প্রচার না করলে সকলে তাঁকে চিনবেন কী করে? তাছাড়া সকলে তো এ বিষয়ে সচেতন নয়। তবে বাড়ি-বাড়ি প্রচার ও পাড়া বৈঠকেই জোর দেওয়া হচ্ছে।’’রেল এলাকায় কংগ্রেসের সভাও করা হবে বলে জানান রবিশঙ্করবাবু। এ বিষয়ে খড়্গপুরের মহকুমাশাসক সঞ্জয় ভট্টাচার্য বলেন, “রেল যদি আমাদের কোনও অভিযোগ দেয় তবে নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেব।” এ বিষয়ে খড়্গপুর ডিভিশনের ডিআরএম গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “রেলের কোনও দেওয়াল বা জমি রাজনৈতিক প্রচারে ব্যবহার হয়েছে বলে আমার কাছে অভিযোগ আসেনি। এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE