লোকসভা ভোটের আগে জঙ্গলমহলের বেশিরভাগ মানুষের কাছে বিভিন্ন সরকারি পরিষেবা পৌঁছে দিতে চায় রাজ্য সরকার। অথচ জমির মালিকানার নথি নিয়ে সমস্যার জেরে ঝাড়গ্রাম জেলার অনেক চাষিই ‘কৃষক-বন্ধু’ প্রকল্পে আবেদনই করতে পারছেন না।
রাজ্য সরকারের কৃষক বন্ধু প্রকল্পে চাষির নিজের নামে চাষযোগ্য জমির রেকর্ড থাকলে তবেই তিনি আবেদন করতে পারবেন। ওই প্রকল্পের উপভোক্তাদের বছরে দু’বার চাষের (বোরো চাষ ও আমন চাষ) জন্য দু’দফায় আড়াই হাজার টাকা করে সবোর্চ্চ ৫ হাজার টাকা আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়। ঝাড়গ্রাম জেলায় গত ২৮ জানুয়ারি থেকে প্রকল্পের সুযোগ পাওয়ার জন্য চাষিদের নাম জমা নেওয়া শুরু হয়। দ্রুত প্রকল্পে নাম নথিভুক্ত করে গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে চাষিদের অনুদানের চেক বিলিও শুরু হয়েছে। জেলায় মোট চাষির সংখ্যা ১ লক্ষ ৫৮ হাজার। কৃষি দফতরের দাবি, এই চাষিদের অনেকেরই নিজের নামে জমির রেকর্ড নেই। সেই কারণে এখনও পর্যন্ত এক মাসের মধ্যে ২৪,১৭৩ জন চাষির আবেদন জমা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৩,৯৯৭ জন চাষির প্রত্যেককে ৫ হাজার চাকার চেক দেওয়া হয়েছে।
এই জটিলতার মধ্যে ‘কৃষক বন্ধু’ প্রকল্পকে ‘ছেলে ভুলোনো ললিপপ’ বলে কটাক্ষ করে মঙ্গলবার বেলপাহাড়িতে জনসংযোগ পদযাত্রা করল কংগ্রেস। কংগ্রেসের ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্যের অভিযোগ, মৃত চাষির অধিকাংশ উত্তরাধিকারীর নামে জমির রেকর্ড সংশোধন করা হয়নি। ফলে বেশির ভাগ চাষি কৃষক বন্ধু প্রকল্পে আবেদনই করতে পারছেন না।
সুব্রতদের অভিযোগ, রাজ্যের ডাহি জমিকে (যেসব উঁচু, পাথুরে জমিতে কৃষিকাজ হয় না) কৃষক-বন্ধু প্রকল্পের বাইরে রাখা হয়েছে। অথচ বেলপাহাড়ির মতো কিছু এলাকায় কাগজে কলমে ডাহি জমিতেই চাষাবাদ হয়। পরবর্তী সময়ে সেচের মাধ্যমে ডাহি জমি চাষযোগ্য হলেও কাগজে কলমে সেগুলির রূপান্তর হয়নি। প্রকল্পের সুযোগ পাওয়ার ক্ষেত্রে পঞ্চায়েতের দেওয়া উত্তরাধিকার (ওয়ারিশ) সার্টিফিকেটকে কৃষক বন্ধু প্রকল্পে গ্রাহ্য করার দাবি জানিয়েছে কংগ্রেস।
বেলপাহাড়ির ভুলাভেদা এলাকার নারায়ণ মাণ্ডি, ছুরিমারা গ্রামের শ্রাবণ সরেন, কুমোরদা গ্রামের মঞ্জু সরেন –এর মতো প্রান্তিক চাষিরা বলছেন, ‘‘গরিব চাষিদের জন্য সরকার প্রকল্প করেছে, অথচ সেই প্রকল্পে আমাদের আবেদন করার সুযোগই হচ্ছে না। প্রয়াত বাপ-ঠাকুর্দার জমি চাষ করলেও সরকারি নথিতে আমরা চাষিই নই।’’
ঝাড়গ্রাম জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ তপন বন্দ্যোপাধ্যায় সমস্যার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘‘জেলার সব ব্লকেই একাংশ চাষির জমির নথি সংক্রান্ত সমস্যা হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, যে চাষি চাষ করছেন, জমির রেকর্ড তাঁর পূর্ব পুরুষের নামে রয়েছে। এই সমস্যা দ্রুত মেটাতে ভূমি দফতরের সঙ্গে আলোচনা করা হচ্ছে।’’
ভূমি দফতরের বক্তব্য, শরিকি সমস্যা ও জমির রেকর্ডের গরমিল থাকায় কিছু মিউটেশন করা যাচ্ছে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy