কোলাঘাটে। নিজস্ব চিত্র
কৃষক স্বার্থ রক্ষায় কেন্দ্র ও রাজ্যের যৌথ চেষ্টায় সারা দেশের সঙ্গে রাজ্যের চাষিরাও ফসল বিমা যোজনায় উপকৃত হচ্ছেন। রাজ্যে অবশ্য ‘প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনা’ নাম ‘বাংলা ফসল বিমা যোজনা’। বিমার প্রিমিয়ামের একটা অংশ কেন্দ্র ও একটা অংশ দিত রাজ্য। আর একটা অংশ দিতে হত চাষিকে। কৃষি দফতর সূত্রে খবর, গত দু’বছর ধরে চাষির প্রিমিয়ামের অংশটি দিচ্ছে রাজ্য। কিন্তু এ বার সেই বিমার আওতায় আসার জন্য আবেদন করতে গিয়ে ফাঁপরে পড়েছেন জেলার চাষিরা।
চলতি ২০১৮-১৯ রবি মরসুমে বাংলা ফসল বিমা যোজনায় আবেদনের গত নভেম্বর মাসে বিজ্ঞপ্তি জারি করে রাজ্য। জেলায় জেলায় সেই বিজ্ঞপ্তি ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই এসে যায় বলে কৃষি দফতর সূত্রে খবর। বিমার জন্য আবেদনের শেষ তারিখ ছিল ৩১ ডিসেম্বর। অথচ পূর্ব মেদিনীপুর সহ অধিকাংশ জেলায় মাত্র দিন দশেক আগে বিমা সংস্থগুলি আবেদন পত্র জমা নেওয়ার কাজ শুরু করার বিষয়টি লিখিতভাবে জানায় জেলা কৃষি দফতরের অফিসগুলিতে। ব্লকস্তর পেরিয়ে সেই খবর চাষির কাছে এসে পৌঁছেছে আবেদনের সময়সীমা শেষ হওয়ার মাত্র দিন পাঁচেক আগে। আর এতেই ফাঁপরে পড়েছেন চাষিরা।
কৃষি দফতর সূত্রে খবর, বিমার জন্য আবেদন করতে গেলে প্রথমে চাষিকে কৃষি দফতর থেকে ‘ক্রপ শোন’ সার্টিফিকেট বা ফসল রোপণের শংসাপত্র জোগাড় করতে হবে। একজন চাষি কতটা জমিতে রবিশস্য চাষ করেছেন তা কৃষি আধিকারিকরা তদন্ত করে দেখার পরই চাষিকে ওই শংসাপত্র দেন। চাষি ওই শংসাপত্রের সঙ্গে নিজের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ও আধার কার্ডের জেরক্স সহযোগে আবেদনপত্র পূরণ করে জমা দেবেন বিমা সংস্থার কাছে। চাষিদের দাবি, সমস্ত কাজ ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করা অসম্ভব। এই অবস্থায় বহু চাষিই এবার ফসল বিমা যোজনায় আবেদন করতে পারেননি।
কোলাঘাটের উত্তর জিয়াদা গ্রামের চাষি গোপাল সামন্ত বলেন, ‘‘আমি ২৭ ডিসেম্বর ফসল বিমা যোজনার আবেদনপত্র হাতে পাই। আবেদন জমার শেষ তারিখ ৩১ ডিসেম্বর। এত অল্প সময়ে ফসল রোপণের শংসাপত্র জোগাড় করতে পারিনি। ফলে বিমার জন্য আবেদন করা হয়নি।’’ কোলাঘাট ব্লকের চাষিদের দাবি, তাঁরা ২৫ ডিসেম্বর সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দেখে বিষয়টি জানতে পারেন। তখন তাঁরা ব্লক অফিসে গেলেও বিমা সংস্থার কাউকে সেকানে দেখতে পাননি। পাঁশকুড়া ব্লক অফিস সূত্রে খবর, ২৪ ডিসেম্বর ব্লকে ফসল বিমা নিয়ে বৈঠকে বিমা সংস্থার এক আধিকারিক উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু তার পর থেকে তাঁকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না। ব্লকে বা পঞ্চায়েত অফিসে বিমা সংস্থার কোনও এজেন্টকেও দেখা যায়নি।
কিন্তু এমন পরিস্থিতি হল কেন?
পূর্ব মেদিনীপুর জেলা কৃষি দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘দিন দশেক আগে বিমা সংস্থার তরফে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। এত অল্প সময়ে সমস্ত চাষিদের ‘ক্রপ সোন’ সার্টিফিকেট দেওয়া কঠিন। তবু আমরা দ্রুত কাজ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’’ মুখ্যমন্ত্রীর কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ কুমার মজুমদার অবশ্য কেন্দ্রের ঘাড়েই এর দায় চাপিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমরা দেড় মাস আগে জেলাগুলিতে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি। আমরা আগাম প্রস্তুত থাকলেও কেন্দ্র সরকার কর্তৃক দায়িত্বপ্রাপ্ত বিমা সংস্থাগুলি পরিকল্পনাহীন ভাবে কোথাও দশ দিন কোথাও পনেরো দিন আগে জেলাগুলিতে হাজির হয়। ফলে রাজ্যজুড়েই এই সমস্যা তৈরি হয়েছে। আমরা আবেদনের সময়সীমা বাড়ানোর চেষ্টা করছি।’’
যদিও বিমা সংস্থার এক আধিকারিক বলেন, ‘‘আমরা জেলাগুলিতে এক মাস আগেই এসে গিয়েছি। কিন্তু প্রায় সর্বত্রই কৃষি মেলা চলায় কৃষি দফরের আধিকারিকরা এই বিষয়ে আমাদের সঙ্গে সহযোগিতা করতে পারেননি।’’
কৃষি খেত মজদুর সংগঠনের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সম্পাদক নারায়ণ চন্দ্র নায়েক বলেন, ‘‘এখানে সরকারের গাফিলতি রয়েছে। আমরা চাই সরকার অন্তত দেড় মাস ফসল বিমা যোজনার আবেদনের সময়সীমা বাড়াক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy