Advertisement
১১ মে ২০২৪

ভয় এখনও জাঁকিয়ে লায়লা বিবির মনে

সন্ধে নামলেই ছেলের অপেক্ষায় দুয়ারে এসে বসেন লায়লা বিবি। ঘনঘন ছেলের মোবাইলে ফোন করেন। জানতে চান, কোথায় আছে, কখন ফিরবে। লায়লা বিবি বলছিলেন, “ওই দিনের কথাটা মনে পড়লে এখনও মন কেমন করে।

দোরগোড়ায় ভোট। রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে থাকা খুন-জখমের কিছু ঘটনা এই সময় স্মৃতি উস্কে দেয়। তারই খোঁজে আনন্দবাজার

দোরগোড়ায় ভোট। রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে থাকা খুন-জখমের কিছু ঘটনা এই সময় স্মৃতি উস্কে দেয়। তারই খোঁজে আনন্দবাজার

বরুণ দে
কেশপুর শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০১৬ ০২:৫৫
Share: Save:

সন্ধে নামলেই ছেলের অপেক্ষায় দুয়ারে এসে বসেন লায়লা বিবি। ঘনঘন ছেলের মোবাইলে ফোন করেন। জানতে চান, কোথায় আছে, কখন ফিরবে। লায়লা বিবি বলছিলেন, “ওই দিনের কথাটা মনে পড়লে এখনও মন কেমন করে। ওঁকে (স্বামী) এ ভাবে হারাতে হবে, কখনও ভাবিনি। কোথা থেকে কী হয়ে গেল। ওকে হারিয়েছি। এখন ছেলের কিছু হয়ে গেলে তো পথে বসতে হবে।” বলতে বলতে গলা ধরে আসে মধ্য পঞ্চাশ ওই মহিলার।

গত লোকসভা ভোটের পরের ঘটনা। দিনটা ছিল ২০১৪ সালের ২১ মে। রাজনৈতিক সংঘর্ষে কেশপুরের চরকায় মৃত্যু হয় স্থানীয় তৃণমূল নেতা শেখ ফিরোজ আলির (৫২)। তৃণমূলের চরকা অঞ্চলের কার্যকরী সভাপতি ছিলেন ফিরোজ। এক ছেলে, তিন মেয়ে। স্ত্রী লায়লা বিবি গৃহবধূ। এখন কাঁথা সেলাই করে দিন গুজরান করেন। ছেলে শেখ আঞ্জার আলি কম্বল বিক্রি করেন। তিন মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। তবে একজন বাপের বাড়িতেই থাকেন।

ফিরোজ কাঠের ব্যবসা করতেন। ব্যবসার টাকায় কোনওক্রমে সংসার চলে যেত। এখন অবশ্য টেনেটুনে সংসার চালাতে হয়। সামান্য জমি রয়েছে। তবে ভারী বৃষ্টি না হলে সেই জমিতে চাষ হয় না। আঞ্জার বলছিলেন, “জমি থাকা, না-থাকা একই। পাঁচ বছরে হয়তো একবার ভাল চাষ হয়।”

স্থানীয় সূত্রে খবর, রাজনৈতিক সংঘর্ষেই প্রাণ যায় ওই তৃণমূল নেতার। ওই দিন ভোরে কয়েকটি এলাকায় তৃণমূলের লোকজন জড়ো হয়েছিল। কয়েকজন সিপিএম কর্মী-সমর্থককে তারা মারধর করে বলে অভিযোগ। সিপিএমের দাবি, গ্রাম দখলের পরিকল্পনা ছিল তৃণমূলের। পরে দলের কর্মী- সমর্থকেরা প্রতিরোধ করে। এক চায়ের দোকানের সামনে সংঘর্ষে জড়ায় দু’পক্ষ।

সিপিএমের অভিযোগ, লাঠিসোটা-লোহার রড নিয়ে মারধর চলে। গোলমালের মধ্যেই মাথায় আঘাত পান ফিরোজ। কিছু পরেই তাঁর মৃত্যু হয়। ঘটনায় ৭২ জন সিপিএম নেতা-কর্মীর নামে পুলিশে অভিযোগ জানানো হয়। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এখন ধৃতেরা জামিনে মুক্ত। কয়েকজন আবার আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। তারাও জামিনে মুক্ত। মামলা চলছে মেদিনীপুর আদালতে।

কেন অশান্তি? যথারীতি চাপানউতোর অব্যাহত। সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক তরুণ রায় বলেন, “কেশপুরে এখন গণতন্ত্র বিপন্ন। মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। বিভিন্ন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বেহাল হয়ে পড়েছে।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায় পাল্টা বলছেন, “বাম আমলেই কেশপুরে গণতন্ত্রকে গলা টিপে হত্যা করা হয়েছিল। এখন কেশপুরের সর্বত্র গণতন্ত্র রয়েছে।”

লায়লা বিবি বলছিলেন, “কেউ তেমন খোঁজই নেয় না। অথচ, ওঁর (স্বামী) হাত ধরেই তো তৃণমূল এই তল্লাটে জমি পেয়েছে।” স্থানীয় তৃণমূল কর্মী শেখ রেজ্জাক আলিও বলছিলেন, “ঠিক। এই এলাকায় দলের সংগঠন বাড়ানোর ক্ষেত্রে ফেলাদার (ফিরোজের ডাকনাম) অবদান অনেক। ও না থাকলে এখানে দল দাঁড়াতেই পারত না। এলাকায় যে মার্কেট কমপ্লেক্স হয়েছে, সেটা ফেলাদার নামেই করা হয়েছে!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

fear Laila bibi police file
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE