দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারের পর সাংবাদিক বৈঠকে পুলিশ সুপার। ইনসেটে ধৃত পাঁচ দুষ্কৃতী। নিজস্ব চিত্র
টাকা বাঁচাতে গিয়ে গুরুতর জখম হয়েছিলেন। চলন্ত মোটরবাইকে থাকা দুষ্কৃতীরা তাঁকে রাস্তায় টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গিয়েছিল। ঘটনার তিন দিন পরে গ্রেফতার হয়েছে দুষ্কৃতীরা। টাকাও উদ্ধার হয়েছে। কিন্তু টানা হ্যাঁচড়ায় গুরুতর জখম বৃদ্ধা হারিয়েছেন তাঁর ডান হাত। বৃহস্পতিবার দুষ্কৃতীদের ধরা পড়ার দিনেই তাঁর ডান হাত কেটে বাদ দিয়েছেন চিকিৎসক।
গত ৬ অগস্ট সকাল ১১টা নাগাদ তমলুকের কাঁকটিয়া বাজারে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে ৪০ হাজার টাকা তুলে হলদিয়া-মেচেদা রাজ্য সড়ক ধরে বাড়ি ফিরছিলেন বৃদ্ধা মিনতি ভৌমিক। ওই সময় মোটরসাইকেলে চেপে দুই দুষ্কৃতী জানুবসান গ্রামের বাসিন্দা ওই বৃদ্ধার কাছ থেকে টাকার ব্যাগ ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে। বৃদ্ধা বাধা দিলে দুষ্কৃতীরা তাঁকে রাস্তায় কয়েকশো মিটার টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ।
গুরুতর আহত অবস্থায় মিনতীদেবীকে প্রথমে তমলুক জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরে কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে তাঁকে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানেই তাঁর হাত কেটে বাদ দিতে হয়। মিনতিদেবীর ছেলে তন্ময় ভৌমিক বলেন, ‘‘মায়ের ডান হাতের কনুই থেকে নীচের অংশ বাদ দিতে হয়েছে। এখনও আশঙ্কা কাটেনি। কারণ, সংক্রমণ হওয়ার ভয় রয়েছে।’’
ঘটনায় জড়িত অভিযোগে নদিয়ার নবদ্বীপ এলাকার রাজারঘাটের একটি বাড়ি থেকে বৃহস্পতিবার রাতে পাঁচ দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ব্যাঙ্ক ও রাস্তায় থাকা সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজের সূত্র ধরে তাদের ডেরা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের নাম সমীর সিংহ, করণ বিশ্বাস, স্যামুয়েল বিশ্বাস, সুনীল বিশ্বাস ও জিতেন্দ্র বিশ্বাস। ধৃত সকলেরই বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার বীজপুরে। স্যামুয়েল ও করণ সম্পর্কে বাবা–ছেলে। সুনীল করণের কাকা।
পুলিশ জানিয়েছে, বীজপুর এলাকায় বাড়ি হলেও দুষ্কৃতী দলটি নবদ্বীপের রাজারঘাটে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকত। সেখান থেকে নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, পূর্ব মেদিনীপুর-সহ বিভিন্ন জেলায় টাকা ছিনতাই করত। দুষ্কৃতীদের একজন সদস্য ব্যাঙ্কের ভিতরে গ্রাহক সেজে টাকা তোলা লোকজনের উপর নজর রাখত এবং কাছাকাছি অপেক্ষারত দলের সদস্যদের মোবাইলে তার বর্ণনা ও গতিবিধি জানাত।
শুক্রবার পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভি সলোমন নেসাকুমার সাংবাদিক বৈঠক করেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘‘মিনতিদেবীর কাছ থেকে টাকা ছিনতাই করে পালিয়েছিল সমীর এবং জিতেন্দ্র। সমীর মোটরসাইকেল চালাচ্ছিল। পিছনে বসে থাকা জিতেন্দ্র টাকার ব্যাগ ধরে টানে। আর ছিনতাইয়ের আগে করণ ব্যাঙ্কের ভিতর থেকে মোবাইল ফোনে বৃদ্ধার সম্পর্কে এবং তাঁর যাতায়াতের পথের বর্ণনা দিয়েছিল। ধৃতদের কাছ থেকে ছিনতাই হওয়া টাকা উদ্ধার হয়েছে।’’
পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, ওই দুষ্কৃতী দলের সদস্যেরা তমলুক ছাড়াও নদিয়ার বিভিন্ন এলাকায় একই ভাবে টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত রয়েছে। এগরা এলাকায় একটি দোকানের সামনে থেকে এক ব্যক্তির লক্ষাধিক টাকা লুটের ঘটনাতেও জড়িত তারা। শুক্রবার ধৃতদের তমলুক আদালতে তোলা হয়। বিচারক সমীর এবং জিতেন্দ্রর ১০ দিনের পুলিশ হেফাজত এবং বাকিদের ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy