Advertisement
১১ মে ২০২৪

চলছে সন্ত্রাস, ‘আক্রান্ত’ তৃণমূলই

শনিবার চন্দ্রকোনার কুঁয়াপুরের পঞ্চায়েত প্রধান শঙ্কর ঘোষের বাড়িতে হামলার অভিযোগ ওঠে বিজেপির বিরুদ্ধে। পঞ্চায়েত প্রধানের অভিযোগ, ‘‘বিজেপির কর্মীরা আমার বাড়িতে চড়াও হয়ে আসবাবপত্র ভেঙে পালিয়ে যায়।’’

রাতারাতি: মেদিনীপুর সদর ব্লকের রামনগরে তৃণমূল কার্যালয়ের দখল নিয়েছে বিজেপি। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল

রাতারাতি: মেদিনীপুর সদর ব্লকের রামনগরে তৃণমূল কার্যালয়ের দখল নিয়েছে বিজেপি। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৯ ০০:৩৪
Share: Save:

লোকসভা ভোট পরবর্তী হিংসা অব্যাহত। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অভিযোগের তির বিজেপির বিরুদ্ধে। জেলা পুলিশের এক কর্তার কথায়, “আইন শৃঙ্খলার উপর নজর রাখা হচ্ছে। পুলিশি নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।”

শনিবার চন্দ্রকোনার কুঁয়াপুরের পঞ্চায়েত প্রধান শঙ্কর ঘোষের বাড়িতে হামলার অভিযোগ ওঠে বিজেপির বিরুদ্ধে। পঞ্চায়েত প্রধানের অভিযোগ, ‘‘বিজেপির কর্মীরা আমার বাড়িতে চড়াও হয়ে আসবাবপত্র ভেঙে পালিয়ে যায়।’’ ঘাটাল ব্লকের সিংহপুর, লক্ষ্মণপুর, মনসুকা, বালিডাঙা, বাহিরসিংহপুর-সহ নানা জায়গায় গোলমাল হয়েছে। কোথাও মহিলা পঞ্চায়েত সদস্যার বাড়িতে হামলা, কোথাও তৃণমূল সমর্থকের বাড়িতে চড়াও হয়ে ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে বিজেপির বিরুদ্ধে। শুক্রবার রাতে গোলমালের অভিযোগে লক্ষ্মণপুর থেকে ৯ জন বিজেপি সমর্থককে গ্রেফতার করে পুলিশ। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে বিজেপির ঘাটাল সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক রামকুমার দের পাল্টা দাবি, ‘‘তৃণমূলের বিক্ষুদ্ধ গোষ্ঠীর লোকেরাই হামলা করছে। এতে বিজেপি যুক্ত নয়। তবে মিথ্যা মামলা দিয়ে বিজেপি কর্মীদেরই গ্রেফতার করছে পুলিশ।

গড়বেতা, গোয়ালতোড়, চন্দ্রকোনা রোড ব্লক এলাকায় তৃণমূল কর্মীদের উপর হামলার অভিযোগ উঠেছে বিজেপির বিরুদ্ধে। শনিবার গড়বেতার উপরজবা এলাকায় বিজেপি-তৃণমূল অশান্তি হয়। চলে বোমাবাজি। উভয় দলের ৬ জন আহত হয়। তৃণমূলের ব্লক সভাপতি সেবাব্রত ঘোষের অভিযোগ, ‘‘সিপিএমের কর্মীদের নিয়ে বিজেপি বিভিন্ন এলাকায় সন্ত্রাস সৃষ্টি করছে। প্রশাসনকে জানিয়েছি।’’ গোয়ালতোড়ের নগদিপাড়া ও দোলবাগানে তৃণমূলের কার্যালয় দখলের অভিযোগ উঠেছে বিজেপির বিরুদ্ধে। গোহালডাঙায় তৃণমূল কর্মীদের তিনটি ঘর ভেঙে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। বিজেপির পাল্টা দাবি, জোগারডাঙার ভাটমৌদিতে তৃণমূলের কার্যালয় থেকে তীরধনুক, রড, লাঠিসোটা উদ্ধার করেছে স্থানীয় বাসিন্দারা। বিজেপি কোনও পার্টি অফিস দখল করেনি। চন্দ্রকোনা রোড ব্লক তৃণমূল সভাপতি নিমাইরতন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত ১০-১২টি ঘর ভাঙচুর করা হয়েছে। ১৭-১৮ জন তৃণমূল কর্মীকে মারধর করা হয়েছে।’’ যদিও বিজেপির দাবি, জেলা জুড়ে যেটা হচ্ছে সেটা জনরোষ। বিজেপির সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই।

ভাদুতলায় তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতির দোকানে ভাঙচুর। নিজস্ব চিত্র

গোলমাল চলছে শালবনি ও মেদিনীপুর গ্রামীণেও। শুক্রবার রাতে মণ্ডলকুপিতে তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ে ভাঙচুর চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ। তৃণমূলের শালবনি ব্লক সভাপতি নেপাল সিংহের বাড়ি মহাশোলে। সেখানেও তৃণমূলের দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়েছে বলে অভিযোগ। শালবনির বিষ্ণুপুরে তৃণমূলের কয়েকজন কর্মীর বাড়িতে হামলা চালিয়েছে বিজেপির লোকেরা বলে অভিযোগ। হামলা চালানো হয়েছে কাশীজোড়াতেও। শনিবার সকালে কর্ণগড়ের বালিজুড়িতে কয়েকজন তৃণমূল কর্মীর বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ। কয়েকজন ঘরছাড়া।

তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি অজিত মাইতির অভিযোগ, ‘‘বিজেপির লোকেরা বাইক নিয়ে একের পর এক গ্রামে ঘুরছে। দলের কর্মীদের চমকাচ্ছে। বোমাবাজি করছে। আমরা এ সব বরদাস্ত করব না। সিপিএমের লোকেরাই বিজেপিতে ভিড়ে অশান্তি করছে।’’ বিধায়ক তথা তৃণমূলের জেলা চেয়ারম্যান দীনেন রায়ের দাবি, ‘‘মেদিনীপুর গ্রামীণের আমতলা থেকে রামনগর পর্যন্ত আমাদের একের পর এক কার্যালয়ে বিজেপির পতাকা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। দলীয় কার্যালয় খুলতে বাধা দিচ্ছে। ভাঙচুরও করেছে।’’ বিজেপির পাল্টা অভিযোগ, শালবনির কলসীভাঙাতে তাদের এক কর্মীকে মারধর করেছে তৃণমূল।

কেশিয়াড়িতে তৃণমূলের বাড়ি ভাঙচুর, লুটপাট, নলকূপ ভেঙে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটছে কেশিয়াড়িতে। অভিযুক্ত বিজেপি। কেশিয়াড়ি ব্লক তৃণমূলের সভাপতি পবিত্র শীটের অভিযোগ, দলীয় বাড়ি থেকে কাউকে বেরতে দেওয়া হচ্ছে না। অন্যের বাড়ি থেকে জল পর্যন্ত আনতে দেওয়া হচ্ছে না। এ দিন দুপুরে বেনাডিহাতে বেশ কয়েকটি তৃণমূল সমর্থকের বাড়ি ভাঙচুর করা হয়ে। মারধর করা হয় মহিলাদেরও। যদিও বিজেপির কেশিয়াড়ি দক্ষিণ মণ্ডলের সভাপতি সনাতন দোলাইয়ের দাবি, ‘‘ছোটখাটো যা ঘটনা হচ্ছে সেটা তৃণমূলের উস্কানির জন্য।’’ মোহনপুরেও তৃণমূলের দলীয় কার্যালয় দখলের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ মানেনি বিজেপি।

পরিস্থিতি দেখে জেলার বেশ কিছু এলাকায় পুলিশি নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। চলছে টহল। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, ‘‘এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে যে পদক্ষেপ করার করা হচ্ছে।’’ জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘আমরা সবদিকেই নজর রেখেছি। যারা গোলমাল করছে, তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থাই নেওয়া হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE