Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
পক্ষে-বিপক্ষে

স্তব্ধ দিন নয়তো, আশ্বাসেও কাটছে না আশঙ্কা

কোনও রকম বন্‌ধ-ধর্মঘট যে তাঁর সরকার বরদাস্ত করবে না ইতিমধ্যে তা স্পষ্ট করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জীবনযাত্রা সচল রাখার যাবতীয় আশ্বাস দিয়েছেন। ধর্মঘটে গাড়ি বের করে বা দোকান খুলে কারও ক্ষতি হলে রাজ্য সরকার ক্ষতিপূরণ দেবে বলেও ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর।

মেদিনীপুরে ধর্মঘটের সমর্থনে বেরনো মিছিল আটকাল পুলিশ। ছবি:সৌমেশ্বর মণ্ডল।

মেদিনীপুরে ধর্মঘটের সমর্থনে বেরনো মিছিল আটকাল পুলিশ। ছবি:সৌমেশ্বর মণ্ডল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:৫৪
Share: Save:

কোনও রকম বন্‌ধ-ধর্মঘট যে তাঁর সরকার বরদাস্ত করবে না ইতিমধ্যে তা স্পষ্ট করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জীবনযাত্রা সচল রাখার যাবতীয় আশ্বাস দিয়েছেন। ধর্মঘটে গাড়ি বের করে বা দোকান খুলে কারও ক্ষতি হলে রাজ্য সরকার ক্ষতিপূরণ দেবে বলেও ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর। কিন্তু তারপরেও সব স্বাভাবিক থাকবে তো— সংশয় কাটছে না আমজনতার।

বামপন্থী এবং কংগ্রেস প্রভাবিত শ্রমিক সংগঠনগুলি ২৪ ঘণ্টার সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে আজ, শুক্রবার। ফলে, পরিবহণ ব্যবস্থা কেমন থাকবে তা নিয়ে উদ্বেগে নিত্যযাত্রীরা। পথে অশান্তির আশঙ্কাও করছেন অনেকে। তবে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক মৃগাঙ্ক মাইতি বলেন, “বাস মালিকদের জানানো হয়েছে, শুক্রবার সব বাস পথে নামাতে হবে। প্রশাসন পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে।’’

জেলা পরিবহণ আধিকারিক বিশ্বজিৎ মজুমদারেরও বক্তব্য, ‘‘ইতিমধ্যে বাস মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করে জানানো হয়েছে, কোনও ক্ষতি হলে সরকার ক্ষতিপূরণ দেবে। তাঁরা জানিয়েছেন, সব বাসই পথে নামাবেন।’’ ধর্মঘটে জনজীবন স্বাভাবিক রাখার অনুরোধ নিয়ে মেদিনীপুর-সহ বিভিন্ন এলাকায় মাইকে প্রচার চালায় পরিবহণ দফতর।

শ্রমিক সংগঠনগুলোর অবশ্য দাবি, ধর্মঘট সর্বাত্মক হবে। এআইটিইউসির জেলা সম্পাদক বিপ্লব ভট্ট বলেন, “তৃণমূল ধর্মঘট বানচাল করার সব রকম চেষ্টা করছে। তবে পারবে না। জোর করে কারখানা খোলানো যায়। তবে জোর করে কারখানায় শ্রমিকদের আনা যায় না।” ধর্মঘটের সমর্থনে বৃহস্পতিবার বিকেলে মেদিনীপুরে মিছিল হয়। নেতৃত্বে ছিলেন সিটুর রাজ্য নেতা দীপক সরকার। জেলা পরিষদ রোডের সামনে মিছিল আটকে দিলে পুলিশের সঙ্গে দীপকবাবুদের ধস্তাধস্তি হয়। দীপকবাবুরও বক্তব্য, ধর্মঘট বানচালের চেষ্টা হলে মানুষই তৃণমূলকে বুঝে নেবে। আজ সকাল থেকে শ্রমিক সংগঠনগুলোর কর্মীরা রাস্তায় থাকবেন, মিছিল হবে বলেও নেতৃত্ব জানিয়েছেন।

পশ্চিম মেদিনীপুরের উপর দিয়ে দিনে ৭৫০টি বাস চলাচল করে। বেশিরভাগই ছুঁয়ে যায় মেদিনীপুর, খড়্গপুরের মতো শহর। প্রশাসন থেকে শাসক দল, এমনকী বাস মালিকদের সংগঠনও আশ্বস্ত করেছে ঠিকই, তবে ধর্মঘটে কতগুলো বাস পথে থাকবে সেই নিয়ে সংশয় রয়েছে।

ধর্মঘট ঠেকানোর বার্তা নিয়ে পথে তৃণমূলের শিক্ষাকর্মীরা।

মেদিনীপুর শহরের গৃহবধূ কল্পনা দাস বলেন, “শুক্রবার ছেলেকে স্কুলে পাঠাবো কি না এখনও ঠিক করিনি! যদি পথে অশান্তি হয়!” এক বাস মালিকের কথায়, “যা পরিস্থিতি তাতে সকালের দিন পরিবহণ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার কারণ নেই। তবে বেলা গড়ালে কি হয় তা বলা মুশকিল!” তাঁর কথায়, “ধর্মঘটের দিন অনেকেই বাড়ি থেকে বেরোন না। পর্যাপ্ত যাত্রী না থাকলে বাস চালিয়ে লাভ কি! তেমন হলে বেলার দিকে বাস তুলে নিতে হবে!” চন্দ্রকোনার স্কুল শিক্ষক বিশ্বজিৎ বেরা, কেশিয়াড়ির স্কুল শিক্ষক সঞ্জীব ভট্টাচার্যরা বলেন, “গাড়ি না থাকলে স্কুলে যাওয়া সমস্যা হবে।’’ কেশপুরের তোড়িয়া হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক উৎপল গুড়ে অবশ্য জানালেন, শুক্রবার স্কুল খোলা থাকছে, এখন ইউনিট টেস্ট চলছে।

তৃণমূল অবশ্য ধর্মঘট মোকাবিলায় প্রস্তুত। এ দিন দলের ডাকে বিভিন্ন এলাকায় মিছিল হয়েছে। দুপুরে কালেক্টরেট ক্যাম্পাসে মিছিল করে তৃণমূল প্রভাবিত কর্মচারী সংগঠন ‘রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশন’। টিএমসিপিও বন্‌ধের বিরুদ্ধে পথে নামে। বাস মালিকদের আশ্বস্ত করতে সকালে মেদিনীপুর বাসস্ট্যান্ডে যান বিধায়ক তথা আইএনটিটিইউসি-র সভাপতি দীনেন রায়। তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতিও বলেন, “কর্মনাশা ধর্মঘট এখানে হবে না।’’ বৃহস্পতিবার রাতে বাসস্ট্যান্ডগুলোয় পরিবহণ শ্রমিকদের থাকা- খাওয়ারও ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ দিন দাঁতনে এক অনুষ্ঠানে তৃণমূল সাংসদ শিশির অধিকারীর বক্তব্য, “এই বন্‌ধে কেউ সামিল হবেন না। এটা যেন রাজ্যে শেষ বন্‌ধ হয়।’’

সত্যিই আজ পথঘাট কেমন থাকে, তার অপেক্ষায় আমজনতা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Government general strike Mamata Banerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE