ফাইল চিত্র।
মাসখানেক আগের কথা। সেদিন সন্ধ্যায় মেদিনীপুর জেলের মধ্যে থেকে প্রচুর মাদকদ্রব্য উদ্ধার হয়েছে। কর্তব্যরত জেলকর্মীদের সতর্ক করে এক জেল কর্তা প্রশ্ন করলেন, ‘‘এ সব কি চলতেই থাকবে? এত মাদক ঢুকল কীভাবে?’’ নীচুগলায় এক জেল কর্মী বললেন, ‘‘স্যর, এত কম কর্মী দিয়ে এত বড় জেলে সবদিকে নজর রাখা সত্যিই অসম্ভব। ৩০ জন কি আর দেড় হাজার জনের উপর নজর রাখতে পারে? আরও কিছু কর্মী আনার ব্যবস্থা করুন!’’ সেদিন আর কথা বাড়াননি ওই জেল কর্তা। জেল কর্মীদের সতর্ক করেই নিজের দফতরে ফেরেন।
মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার সূত্রের খবর, কর্মীর সংখ্যা কম থাকার ফলে নিরাপত্তায় ফাঁকফোকর থেকে যাচ্ছে! সত্যি কি তাই? কোনও মন্তব্য করেননি জেল সুপার সৌমিক সরকার। তিনি বলেন, ‘‘সংবাদমাধ্যমে কিছু বলব না।’’ জেলের অন্য এক কর্তার অবশ্য স্বীকারোক্তি, ‘‘কর্মীর সংখ্যা কম থাকার ফলে সমস্যা হয়ই। সব ক্ষেত্রেই সমস্যা হয়।’’ তাঁর কথায়, ‘‘এই সমস্যার দিকটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানেন।’’ সাজাপ্রাপ্ত ও বিচারাধীন মিলিয়ে মেদিনীপুর জেলে প্রায় ১,৫৩০ জন বন্দি রয়েছে। জেলের ওয়ার্ডসংখ্যা ১৪, সেল ৫২। সেলে সাধারণত একজন করেই থাকে। জেল সূত্রের খবর, এখানে ওয়ার্ডার অর্থাৎ জেলরক্ষী থাকার কথা ২১৯ জন। আছেন ১৪৭ জন। হেড ওয়ার্ডার থাকার কথা ১৫ জন। আছেন ১৩ জন। ডেপুটি জেলার আর সাব-জেলার থাকার কথা ৮ জন। আছেন ৩ জন। জেলার আর সিকিউরিটি অফিসার থাকার কথা ৩ জন। আছেন ২ জন। জেল সূত্রের খবর, সাধারণত ৬ জন বন্দিপিছু একজন কারারক্ষী থাকার কথা। এখানে ৩০ জন বন্দিপিছু একজন কারারক্ষী আছেন।
কর্মিসঙ্কটে ফাঁক থাকছে নজরদারিতে। ফলে জেল থেকে মাঝেমধ্যেই গাঁজা, মোবাইল ফোন উদ্ধার হয়। মাস খানেক আগে তল্লাশি চালিয়ে জেলের মধ্যে থেকে ৫ প্যাকেট গাঁজা উদ্ধার হয়েছিল। একবার এক বন্দির থেকে ১৮ প্যাকেট মাদকদ্রব্য উদ্ধার হয়েছিল। বিড়ির প্যাকেটের মধ্যে ওই মাদকদ্রব্য রাখা ছিল।শুধু মোবাইল বা গাঁজা উদ্ধার নয়। বন্দিদের মধ্যে গোলমাল, মারামারিরও নজির রয়েছে মেদিনীপুর জেলে। একবার মারামারি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে জখমদের জেল হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা করা সম্ভব হয়নি। মেদিনীপুর মেডিক্যালে ভর্তি করাতে হয়। শুধু বন্দিদের মধ্যে মারামারি নয়। জেল কর্মীরাও গোলমালে জড়িয়েছেন। যে গোলমালে রাশ টানতে হিমশিম খেয়েছেন জেল কর্তারা। অন্যদিকে, জেলে বন্দির আত্মহত্যার নজিরও রয়েছে। চলতি বছরে মুক্ত জেল চালু হয়েছে। সেখান থেকে বন্দি পালানোর ঘটনাও ঘটেছে।
শ্রীনু নায়ডু হত্যা-সহ বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্তেরা রয়েছে এই জেলে। রয়েছেন মাওবাদী সন্দেহে ধৃতেরা। সেখানেই নিরাপত্তার এই হাল! এক জেল কর্মীর মন্তব্য, ‘‘আমাদের এখানে যে রোজই কিছু না- কিছু ঘটে না সেটা বন্দিদেরই বদান্যতা!’’
(চলবে)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy