Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

রাতভর টানা বৃষ্টি, ভাসল গোটা মহকুমা, নিকাশি জটেই বিপত্তি

সোমবার সপ্তাহের শুরুর দিনেই খড়্গপুর মহকুমা দেখল জল ছবি। খড়্গপুর শহর, সবং, নারায়ণগড়, খড়্গপুর-১ ও খড়্গপুর-২ ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকায় জলমগ্ন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।

জলবন্দি: সোমবার খড়্গপুর ২ ব্লকের সাঁকোয়ায়। নিজস্ব চিত্র

জলবন্দি: সোমবার খড়্গপুর ২ ব্লকের সাঁকোয়ায়। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০১৯ ০১:১৪
Share: Save:

রাত থেকে টানা পাঁচ ঘণ্টার ভারী বৃষ্টিতেই ভাসল খড়্গপুর মহকুমা। ফের সামনে এল নিকাশির বেহাল ছবি।

সোমবার সপ্তাহের শুরুর দিনেই খড়্গপুর মহকুমা দেখল জল ছবি। খড়্গপুর শহর, সবং, নারায়ণগড়, খড়্গপুর-১ ও খড়্গপুর-২ ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকায় জলমগ্ন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। মহকুমা প্রশাসন ও পুরসভার দাবি, রবিবার রাত ১২টা থেকে শুরু হওয়া টানা বৃষ্টির জন্যই জল জমেছে। এর জেরে শহরের প্রায় পাঁচশো বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে। একইভাবে সবং ব্লকের দেভোগ, উচিৎপুর, খড়্গপুর-১ ব্লকের গোপালী, খেলাড়, সালুয়া, খড়্গপুর-২ ব্লকের সাঁকোয়া, পলশা, চাঙ্গুয়াল, নারায়ণগড় ব্লকের বড়কলঙ্কাই, নারমা এলাকায় বানভাসী চেহারা দেখা গিয়েছে। কয়েক হাজার মাটির বাড়ির ক্ষতি হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ত্রাণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলেও প্রশাসনিক সূত্রে জানানো হয়েছে। শহরবাসীর একাংশের অবশ্য অভিযোগ, বেশিরভাগ নিকাশি নালা বুঝে গিয়েছে। তাই জল বেরোতে না পেরেই এই সমস্যা। এ দিন সকালে জল দাঁড়িয়েছিল আইআইটির কর্মী আবাসন চত্বরেও। তবে জল দ্রুত নেমে যায়। ডুবেছিল ১, ৩-সহ খড়্গপুর স্টেশনের কয়েকটি প্ল্যাটফর্মের রেল লাইনেও। তবে ট্রেন চলাচলে তেমন কোনও বিঘ্ন ঘটেনি।

এ দিন রেল শহরের কৌশল্যা, ইন্দা, সাঁজোয়াল, বুলবুলচটি, ঝাপেটাপুর, তলঝুলি, সোনামুখী, রবীন্দ্রপল্লি, তালবাগিচা, আয়মা, মালঞ্চর সুষমাপল্লি, ভবানীপুর এলাকায় জল জমে থাকতে দেখা গিয়েছে। কৌশল্যার বাসিন্দা অমর মৈত্র বলেন, “হোমিওপ্যাথি কলেজ যাওয়ার রাস্তায় প্রায় কোমর সমান জল জমে গিয়েছে। নিকাশির বেহাল দশার জেরেই জল জমেছে।।” সুষমাপল্লির বাসিন্দা নৈরিতা করণের ক্ষোভ, “ঘরে জল ঢুকে গিয়েছে। জল বেরোতে পারছে না। কেউ দেখার নেই।” ঝাপেটাপুর, তলঝুলি এলাকাতেও হাঁটু জলে নাকাল মানুষ। ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা তৃণমূলের শহর সভাপতি রবিশঙ্কর পাণ্ডে জানান, তাঁর ঘরেও জল জমে গিয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘যে যেখানে পারছে বাড়ি করছে। জল বেরোচ্ছে কোথা থেকে!” খড়্গপুরের পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার বলেন, “আমি প্রতিটি এলাকা ঘুরে দেখেছি। জল বের করার চেষ্টা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ত্রাণ চাওয়া হয়েছে।”

কেলেঘাই-কপালেশ্বরী নদী সংস্কারের আট বছর পরে এ বার সবংয়েও প্লাবনের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। দেভোগ, উচিতপুর, চাউলকুড়ি, বিষ্ণুপুর এলাকা জল জমেছে। ক্ষতিগ্রস্তদের স্বাস্থ্যকেন্দ্র, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। বিধায়ক গীতা ভুঁইয়া বলেন, “আমি জেলাশাসকে উপযুক্ত পদক্ষেপ করার দাবি জানিয়েছি।” কেলেঘাই সংস্কারের পরেও এমন পরিস্থিতি কেন? সাংসদ মানস ভুঁইয়ার দাবি, “কেলেঘাই-কপালেশ্বরী সংস্কারের ফলেই আট বছর বন্যা হয়নি। ৬৫০ কোটি টাকার কাজে কেন্দ্র ৩২৫ কোটি না দেওয়ায় উপযুক্ত সংস্কারের অভাবে পলি জমেছে। তবে এখন এসব নিয়ে রাজনীতির সময় নয়।”

নারায়ণগড়েও একই কারণে প্লাবন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বড় বড়কলঙ্কাইয়ের বাসিন্দা অরিন্দম রাউল বলেন, “আমার এক আত্মীয়ের পোলট্রি ফার্মে জল ঢুকে অনেক মুরগি মারা গিয়েছে।” খড়্গপুর-২ ব্লকের সাঁকোয়া, পলশা এলাকাতেও জল জমে রয়েছে। খড়্গপুর-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আনসু রহমান বলেন, “টানা ভারী বৃষ্টির জেরেই এমন পরিস্থিতি। অনেক বাড়ির ক্ষতি হয়েছে। আমরা ত্রাণের বন্দোবস্ত করার চেষ্টা করছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Water Rain Kharagpur Subdivision
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE