Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

খেজুরি সৈকত দূষণমুক্ত রাখতে ব্যবস্থা

সমুদ্রের কিনারা বরাবর বালিয়াড়ি আর ঝাউয়ের ঘন জঙ্গল। সেই জঙ্গলেও ভিড় পিকপিক পার্টির। দিঘা, মন্দারমণি বা তাজপুর নয়, এটা কাঁথি মহকুমার খেজুরি-২ ব্লকের ছবি।

খেজুরির এই সৈকত ঘিরেই পর্যটনের ভাবনা। ইনসেটে, পিকনিকের আবর্জনা পড়ে ঝাউবনে। নিজস্ব চিত্র

খেজুরির এই সৈকত ঘিরেই পর্যটনের ভাবনা। ইনসেটে, পিকনিকের আবর্জনা পড়ে ঝাউবনে। নিজস্ব চিত্র

শান্তনু বেরা
খেজুরি শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৮ ০০:৪১
Share: Save:

বিস্তীর্ণ সমুদ্র সৈকত। সকালে শীতের মিঠে রোদ গায়ে মাখতে সৈকতে ভিড় পর্যটকদের। সমুদ্রের কিনারা বরাবর বালিয়াড়ি আর ঝাউয়ের ঘন জঙ্গল। সেই জঙ্গলেও ভিড় পিকপিক পার্টির। দিঘা, মন্দারমণি বা তাজপুর নয়, এটা কাঁথি মহকুমার খেজুরি-২ ব্লকের ছবি। বঙ্গোপসাগরের এই উপকূলে দিঘার মতোই সুন্দর পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তুলতে উদ্যোগী হয়েছে খেজুরি-২ ব্লক প্রশাসন। পর্যটকদের ভিড়ে এই সৈকতের হাল যাতে দিঘার মতো (দূষণ নিয়ে বার বার অভিযোগ উঠছে) না হয়, সে জন্য প্রথম থেকেই তৎপর প্রশাসন। কিন্তু সম্প্রতি গিয়ে দেখা গেল সৈকত লাগোয়া ঝাউবনে পড়ে রয়েছে পিকনিক পার্টির ফেলে যাওয়া প্লাস্টিকের কাপ, থার্মোকলের থালা, শালপাতা ইত্যাদি। এই অবস্থায় সৈকতকে দূষণমুক্ত রাখতে প্রশাসনের তৎপরতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

সাহেবনগর, নিজকসবা, মেহেদিনগর, পাচুড়িয়া, খানাবেড়িয়া, ওয়াসিলচক, রাধানগর—গ্রামগুলিকে যেন একসূত্রে বেঁধেছে বঙ্গোপসাগর। দিঘার মতো সব সময় পর্যটকের ভিড় এখানে হয় না। কিন্তু কাছেই রয়েছে ‘হিজলি শরিফ’। ফলে শুধু জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকেই নয়, অন্য জেলা এবং পাশের দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকেও প্রচুর মুসলমান দর্শনার্থী আসেন। তবে শীতের মরসুমে এখানে প্রচুর মানুষ পিকনিক করতে আসেন। সে কারণেই নিরিবলি এই সৈকতে দূষণ বাড়ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন বাসিন্দারা এবং পরিবেশ প্রেমীরা।

এলাকায় রয়েছে বন দফতরের বাংলো। সংখ্যায় হাতে গোনা হলেও রয়েছে হোটেল। ফলে বেশি পর্যটক এলে সৈকত লাগোয়া গ্রামে বিভিন্ন বাড়িতে পর্যটকদের থাকার সুযোগ দেন গ্রামবাসীরা। সেই দিক বিবেচনা করে ব্লক প্রশাসন ওই সব গ্রামে ‘হোম স্টে’ তৈরির পরিকল্পনা করছে। এর জন্য তৈরি দরিদ্র গ্রামবাসীদের ঘরকে সুসজ্জিত ছোট ছোট কটেজে বদলে দেওয়া হবে। সেখানে গ্রামবাসীরা যেমন থাকবেন, তেমনি পর্যটকরাও থাকতে পারবেন। তবে আপাতত সৈকতে রাত কাটানোর ব্যবস্থা না করা গেলেও দিনের বেলায় পর্যটকদের বিশ্রামের সুযোগ দেওয়া যায় কিনা, তা বিবেচনা করছে ব্লক প্রশাসন। তবে পাশাপাশি সৈকতকে দূষণমুক্ত রাখতে পর্যটক ও গ্রামবাসীদের জন্য ব্লকের পক্ষ থেকে মাইকে প্রচারও করা হয়েছে। সর্তক করা হয়েছে, সৈকতে কোনওরকম দূষণ বরদাস্ত করা হবে না। থার্মোকল ও প্লাস্টিকের থালা, বাটি, গ্লাস ছাড়া বিভিন্ন পলিথিন এখানে নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে।

বর্তমানে খেজুরি-২ এর বিডিও রমল সিংহ বিরদী আগে দার্জিলিং জেলায় ছিলেন। তিনি জানান, সেখানকার অভিজ্ঞতা তিনি এখানে সৈকত দূষণমূক্ত করার কাজে লাগাতে চান। সেই উদ্দেশ্যে স্থানীয় পঞ্চায়েত কর্তাদের নিয়ে ইতিমধ্যেই এলাকায় থার্মোকল ও প্লাস্টিক বিরোধী অভিযান শুরু করেছেন বিডিও। পঞ্চায়েতকর্তাদের নিয়ে বৈঠকও করেছেন। বিডিও বলেন, ‘‘এই এলাকার সমুদ্র ও তার প্রাকৃতিক শোভা অসাধারণ। ‘ভার্জিন’ এই সৈকতকে ঘিরে সুন্দর পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠতে পারে। আমরা সেই চেষ্টাই করছি।’’

খেজুরির বিধায়ক রণজিত মণ্ডল বলেন, “এই সমুদ্র সৈকতকে ঘিরে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার ইচ্ছা বহুদিনের। এটা দিঘা বা মন্দারমণির বিকল্প হতে পারে। বিডিওর এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। তাঁকে সমস্ত রকম সহযোগিতা করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Pollution Environment Sea
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE