বিদ্যুতের তারের ছোঁয়ায় মৃত কাঠঠোকরা। নিজস্ব চিত্র
বছর খানেক আগেও পাখির ডাকে ঘুম ভাঙতো কোলাঘাটের রূপনারায়ণের পাড়ের বাসিন্দাদের। সে সব এখন অতীত। গাঙপাড়ের বাসিন্দারা এখন সকাল হলেই চমকে ওঠেন বিকট শব্দে। কারণ হাইটেনশন লাইনের সঙ্গে পাখির ডানার ছোঁয়ায় ওই শব্দে শুধু আতঙ্কই ছড়াচ্ছে না, মারা যাচ্ছে ময়না, টিয়ে, চড়ুই, কাক, কোকিল থেকে কাঠঠোকরা থেকে মাছরাঙাও। এই পরিস্থিতিতি বিদ্যুৎ দফতরকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দা থেকে পক্ষীপ্রেমীরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কোলাঘাটে রূপনারায়ণ নদের ধারে গৌরাঙ্গঘাট। ঘাটে নদের গা ঘেঁষে শতাব্দীপ্রাচীন দু’টি বটগাছ রয়েছে। সকাল বিকেল ওই গাছতলাতেই স্থানীয় মানুষের কলকাকলি। আর কলকাকলি পাখিদের। সকালে পাখিদের ডাকে জেগে উঠত গ্রাম। আবার সূয্যি পাটে গেলে ঘরে ফেরা পাখিদের ডাকে সন্ধ্যা নেমে আসত গ্রামে। বছরের পর বছর এই ছবিই দেখে এসেছেন এই এলাকার মানুষ। কিন্তু সেই ছবিটাই বছর দেড়েক আগে পাল্টে যায়। গৌরাঙ্গ ঘাটে ওই বট গাছগুলির পাশ দিয়ে রূপনারায়ণের পাড় বরাবর ১২০০ ফুট এলাকা দিয়ে ১১ কেভি ভোল্ট হাইটেনশন বিদ্যুতের লাইন নিয়ে যায় বিদ্যুৎ দফতর। গাছগুলিতে নিয়মিত আসা পাখিদের কথা ভেবে তখন সেই কাজে আপত্তি জানিয়েছিলেন বাসিন্দারা।
স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, বিদ্যুৎ দফতরের লোকজনকে পাখিদের নিরপত্তা তথা পরিবেশের কথা ভেবে বার বার বারণ করা হলেও তাঁরা তা শোনেননি। পরিবর্তে তাঁরা বিদ্যুতের তারগুলিকে ঢেকে দিয়ে চলে যান। কিন্তু সে সবের কিছুই হয়নি। আর তার ফলে ওই হাইটেনশন তার লাগানোর পর থেকেই প্রায় প্রতিদিন তারের সঙ্গে উড়ে আসা পাখিদের সংঘর্ষে মারা যাচ্ছে পাখিরা। জখমও হচ্ছে বহু পাখি। যার মধ্যে কোকিল, ময়না, মাছরাঙা, কাঠঠোকরা, চড়ুই, শালিক থেকে কাকও রয়েছে। এখন আর সকাল সন্ধ্যায় শোনা যায় না পাখির রব।
এলাকার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্য অসীম দাস বলেন, ‘‘বিদ্যুতের ওই তারগুলি ১১ কেভির। তাই ওই তারের বিদ্যুৎ পাখিগুলিকে কিছুটা দূর থেকে টেনে নিচ্ছে। আমরা মাস তিনেক আগেও এই বিষয়ে বিদ্যুৎ দফতরে গিয়ে বিষয়টি জানাই। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনও সুরাহা হয়নি। প্রায় প্রতিদিনই পাখি মারা পড়ছে।’’ স্থানীয়রা বাসিন্দারা জানান, বটগাছ দুটিতে এখন আর আগের মতো পাখি আসছে না। পাখির বাসাগুলি খালি পড়ে রয়েছে। বিদ্যুতের তারের সঙ্গে রাখিদের সংস্পর্শে যে বিকট শব্দ হয় তাতেও আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে শিশুরা। পক্ষীপ্রেমী বিশ্বনাথ দাস বলেন, ‘‘বিদ্যুৎ দফতরের কাণ্ডজ্ঞানহীন কাজের দরুন অকালে মারা যাচ্ছে হাজার হাজার পাখি। বিরল প্রজাতির পাখিগুলি এখন আর সে ভাবে নজরে পড়ে না। খোলা তার বদলে বিদ্যুৎ দফতর সেগুলি ঢেকে না দিলে পাখিদের বাঁচানো যাবে না।’’
পূর্ব মেদিনীপুর জেলা বিদ্যুৎ বণ্টন বিভাগের রিজিওনাল ম্যানেজার শ্যামল কুমার হাজরা বলেন, ‘‘বিষয়টি এতদিন নজরে আসেনি। পাখিদের ব্যাপারটা খোঁজ নিয়ে দেখব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy